সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে ই-স্পোর্টস এবং মোবাইল গেমিংয়ের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সে সঙ্গে এটি এখন বিনোদন শিল্পকে অগ্রভাগে নিয়ে গেছে। যদিও এমন বৈশ্বিক অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এই গেমিং বিপ্লবকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দ্বিধায় রয়েছে। এমনকি এটি তরুণদের জন্য ক্ষতিকর বলে পুরো বিষয়টিকে উড়িয়েও দেওয়া হচ্ছে।
এই অনিচ্ছা আমাদের গেমিং বাজারে নিজেদের সুযোগের বিষয়টি সম্পর্কে শুধু অন্ধ করেই রাখছে না, বরং এটি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং এর উন্নতিকেও পিছিয়ে রাখছে। অন্যদিকে, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, নেপালের মতো অনেক দেশ, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশও গেমিং এ বিনিয়োগ করছে। এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশ কেন তা অনুসরণ করতে পারছে না?
এটি স্পষ্ট যে এজন্য অবশ্যই বাংলাদেশকে রক্ষণশীলতা ত্যাগ করতে হবে এবং ই-স্পোর্টস ও মোবাইল গেমিংয়ের বিপুল সম্ভাবনাকে স্বীকার করে নিতে হবে। এই শিল্পের বহুমুখী সুবিধার দিকটি বুঝতে পারাই মূল বিষয়।
প্রথমত, গেমিং বাজার একটি লাভজনক অর্থনীতির সুযোগ। সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ গেমিং খাতে বিরাট আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে। স্থানীয় মেধাবীদের সহযোগিতা করে বাংলাদেশ একটি অসাধারণ গেমিং ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারে। যেখানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার সুযোগ রয়েছে।
সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক কম্পানিগুলো গেমিংয়ে এগিয়ে আসায় বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সেটি দেশে তরুণদের প্রতিভা বিকাশের পথও খুলে দিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ই-স্পোর্টস এবং গেমিং তরুণদের কর্মক্ষম করে তোলারও একটি উপায়। গেম একটি ক্ষতিকারক বিষয় – এমন ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে, গেমিং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে দক্ষতার চর্চা হয়। যেমন এর মাধ্যমে ক্রিটিক্যাল থিংকিং, সমস্যা সমাধান, দলবদ্ধ কাজ এবং কোনো কিছুতে অভিযোজন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দায়িত্বশীল গেমিং চর্চা এবং উপযুক্ত একটি গেমিং কমিউনিটি তৈরি করে বাংলাদেশ তার তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে পারে।
বাংলাদেশে মোবাইল গেমিংয়ের আবির্ভাব এর সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মোবাইলের ব্যাপক ব্যবহার এবং দেশের বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠী, মোবাইল ই-স্পোর্টসে বিনিয়োগকে অনেক লাভজনক করে তুলতে পারে। স্থানীয় গেম ডেভেলপারদের সহযোগিতা এবং তাদের সহায়তায় অবকাঠামো তৈরি করতে পারলে বাংলাদেশ গেম তৈরি করতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে নিজেদের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরা যাবে।
গেম এখন শুধুমাত্র একটি খেলা নয়; এটি এখন ক্ষমতায়নও। দায়িত্বশীল গেমিং জীবনে দক্ষতা উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। টিমওয়ার্ক, অধ্যবসায় কিংবা কৌশলগত চিন্তাভাবনা করতে শেখা যায় গেমিং থেকে। এজন্য আমাদের উচিত হবে, গেমিংকে বিভ্রান্তিকর বলে তাকে ছুড়ে ফেলার পরিবর্তে এটি গ্রহণের মাধ্যমে আজকের প্রজন্মকে এগিয়ে নেওয়া। এর ফলে আমরা আমাদের সমাজ এবং অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারব।
বিশেষ করে মোবাইল গেমিং বাংলাদেশের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। আমাদের জনসংখ্যার অধিকাংশই এখন মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত। সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের সম্পৃক্ত করতে এটি একটি প্ল্যাটফর্ম। স্থানীয় গেম ডেভেলপারদের জন্য বিনিয়োগ করে এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিশ্চিত করে আমরা একটি মোবাইল গেমিং ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারি। যা আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেবে।
গেমিং শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি চালিকাশক্তি হতে পারে। এটি সৃষ্টি করতে পারে কর্মসংস্থান যেখানে দেশের মেধাবীরা সুযোগ পাবে। একইসাথে এটি বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট করতে পারবে। একবার ভাবুন, গেমিং ডেভেলপমেন্টে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে পৌঁছে গেছে, তারা শুধু আমাদের তরুণদের জন্য গেম তৈরি করছে না, বরং সারা বিশ্বের গেমারদের জন্য তারা গেম তৈরি করছে। আমাদের সৃজনশীলতা রয়েছে, দক্ষতা রয়েছে এবং সর্বোপরি রয়েছে প্যাশন- আমাদের এখন এসব কিছু কাজে লাগাতে শুধু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।
অতীতে রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে আমাদের গণ্ডি সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ই-স্পোর্টস এবং গেমিং কোনোভাবেই আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ছোট করে না। বরং এটি বিশ্বে যোগাযোগের দরজা খুলে দেয়, আমাদের ঐহিত্য এবং সৃজনশীলতাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। সৌদি আরব যেমন তার অর্থনীতিকে বৈচিত্রময় করে তুলতে গেমিংকে ব্যবহার করছে, বাংলাদেশও পারে সে জায়গা থেকে একটি গেমিং হাব হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলে বিশ্বে তার অবস্থান তুলে ধরতে।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%93%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b8-%e0%a6%a8%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a1-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%87-3-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%9f/
এখন সময় বাংলাদেশের, ট্যাবু ভেঙে চারপাশের মতো ই-স্পোর্টস এবং মোবাইল গেমিংকে এখনি সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া। ইস্পোর্টসে সৌদি আরবের বিনিয়োগ একটি অনুপ্রেরণা। তারা দেখিয়েছে যে কীভাবে এক সময়ের রক্ষণশীল দেশ গেমিংকে এগিয়ে নিয়ে বিনোদন শিল্পের ল্যান্ডস্কেপই বদলে দিয়েছে। ই-স্পোর্টস এবং মোবাইল গেমিং শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতেই সাহায্য করে না বরং সাংস্কৃতিক পরিচয়কে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে তরুণদেরকেও জায়গা করে দেয়। আমাদের এখন উচিত একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগানো। যা একটি গতিশীল ও রূপান্তরিত বৈশ্বিক শিল্পকে নেতৃত্ব দেবে।