গ্রাফিক ডিজাইন হচ্ছে এমন একটা স্কিল যেটাতে এক্সপার্ট হলে খুব সহজেই সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট হওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিংয়ে হোক কিংবা দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতেই হোক, সবখানেই কিন্তু একজন এক্সপার্ট গ্রাফিক ডিজাইনারের যথেষ্ট ডিমান্ড রয়েছে। শুধু তাই ই নয়, বর্তমানে অনেকেই গ্রাফিক ডিজাইনে সেক্টরে স্কিল ডেভেলপ করে নিজের একটা বিজনেস দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। আজকের লেখায় আমি গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস শুরু করার উপায়গুলো নিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করবো যা সবার জন্য হেল্পফুল হবে।
গ্রাফিক ডিজাইন কী?
যারা গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস করতে চান তাদের নিশ্চয়ই গ্রাফিক ডিজাইন কী তা সম্পর্কে বেসিক আইডিয়া আছে। তাও যারা একদমই বিগিনার তাদের জন্য বলছি, গ্রাফিক ডিজাইন হলো এমন একটা প্রসেস যেটাতে স্পেসিফিক কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইমেজ, টেক্সট এবং আইডিয়ার কম্বিনেশনে নতুন একটা ভিজুয়াল কনসেপ্ট বা ইমেজ তৈরি করা হয় । গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য যে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে অডোবি ফটোশপ এবং অডোবি ইলাস্ট্রেটর অন্যতম।
গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস শুরু করার উপায়
এ বিজনেস কেন করবেন?
গ্রাফিক ডিজাইন সেক্টরে সঠিকভাবে এফোর্ট দিয়ে কাজ করলেই সাকসেসফুল হওয়া সম্ভব। কেননা যত দিন যাচ্ছে এ সেক্টরে কাজের চাহিদাও বাড়ছে।যদি গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেসে নিজের স্কিলকে কাজে লাগে সময়মত ক্লায়েন্টদেরকে তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী সার্ভিস ডেলিভারি দিতে পারেন, তাহলে মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারেন, এ ক্লায়েন্টরাই ভবিষ্যতে আবার আপনার থেকেই সার্ভিস নিতে আসবে। কারণ এখনকার ক্লায়েন্টরা গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিস নেয়ার সময় কাজের কোয়ালিটিতেই বেশি ফোকাস করে থাকেন। তাই যদি ক্লায়েন্টদের মন জয় করতে পারেন তাহলে দেখবেন বিজনেসে রিপিট ক্লায়েন্টের অভাব হবেনা। এতে করে বিজনেস থেকে ইনকামও বাড়বে।
পাশাপাশি যদি নিজের পারফেক্ট কাজের মাধ্যমে বিজনেসের পরিচিতি বাড়াতে পারেন তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে এ বিজনেস থেকেই বেশ ভালো একটা অ্যামাউন্ট ইনকাম করতে পারবেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, যারা গ্রাফিক ডিজাইনে এক্সপার্ট তাদের জন্য এ বিজনেস কতটা লাভজনক হতে পারে!
যেভাবে শুরু করবেন
শুরুতেই বলে রাখি, যেহেতু গ্রাফিক ডিজাইন একটা ডিমান্ডিং সেক্টর, তাই এটা অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় বেশ কম্পিটিটিভ। তাই যদি নিজের গ্রাফিক ডিজাইন স্কিল নিয়ে কনফিডেন্ট হয়ে থাকেন, তাহলেই গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস শুরু করতে পারেন। চলুন এবার জেনে আসা যাক এ বিজনেস শুরু করার স্টেপসগুলো সম্পর্কে –
১।নিজের স্কিল সম্পর্কে জানা
গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস শুরু করার প্রথম স্টেপ হলো নিজের স্কিল সম্পর্কে জানা। প্রথমেই চিন্তা করুন, গ্রাফিক ডিজাইনের প্রতি নিজের কতটুকু প্যাশন রয়েছে । কারণ, এ বিজনেসে প্যাশন একটা ইম্পরট্যান্ট রোল প্লে করে। যদি প্যাশন না থাকে, তাহলে কখনোই গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেসে সাকসেসফুল হতে পারবেননা। আর সাধারণত যার প্যাশন যত বেশি, তার গ্রাফিক ডিজাইন স্কিলও তত বেশি হয়ে থাকে। তাই নিজের কতটুকু প্যাশন রয়েছে তা শুরুতেই আইডেন্টিফাই করুন। এতে করে নিজের স্কিল সম্পর্কেও আইডিয়া পেয়ে যাবেন।
তাছাড়া একজন গ্রাফিক ডিজাইনার কখনোই তার ক্লায়েন্টদের সবরকম গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিস দিতে পারেননা। তাই বিজনেস শুরু করার আগে সময় নিয়ে নিজের গ্রাফিক ডিজাইন স্কিল নিয়ে অ্যানালাইসিস করুন। নিজে কোন ধরনের ডিজাইন করতে বেশি কম্ফোর্টেবল তা বোঝার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি কোন ধরনের ডিজাইনগুলো ক্লায়েন্টদের ডেলিভারি দিতে পারবেন সেটাও ভাবুন৷ এতে করে নিজের স্কিল সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়ার পাশাপাশি পরবর্তীতে দেখবেন, যে সার্ভিসগুলো দেবেন সেগুলোর প্রাইসিং করতেও সুবিধা হবে।
২। নিশ সিলেক্ট করা
সত্যি বলতে গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেসে নিশ সিলেক্ট করার বিষয়টা নিয়ে কিছুটা কন্ট্রোভার্সি রয়েছে। এক্ষেত্রে সাজেশন হিসেবে বলছি, যদি বিগ এন্টারপ্রাইজ ক্লায়েন্ট এবং বড় কর্পোরেট অরগানাইজেশানগুলোকে টার্গেট করে থাকেন, তাহলে নিশ সিলেক্ট করে নেয়াই প্রফিটেবল হবে।
কারণ গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিস নেয়ার জন্য বিগ এন্টারপ্রাইজ ক্লায়েন্টদের আলাদা করে বাজেট রেডি ই থাকে। তাই তাদের ডিজাইনের ডিমান্ডগুলো অনেক বেশি ডিটেইলড আর স্পেসিফিক হয়ে থাকে। তাই এসব ক্লায়েন্টরা এক্সপার্ট গ্রাফিক ডিজাইনার খুঁজে থাকেন যাদের প্রিভিয়াস এক্সপেরিয়েন্স আছে এবং যারা এ ডিমান্ডগুলো বুঝে পারফেক্টলি কাজ করতে পারবে। সুতরাং যদি নিশ সিলেক্ট করেন তাহলে সে নিশটাতে আপনার ডিজাইন স্কিল কতটুকু সে সম্পর্কে ক্লায়েন্টদের মনেও আর কনফিউশান থাকবেনা। যার ফলে এ বিজনেস থেকে ইনকাম করাটাও সহজ হয়ে যাবে।
আবার যদি গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস থেকে খুব তাড়াতাড়ি ইনকাম করার প্ল্যান থাকে এবং স্পেসিফিক নিশ সিলেক্ট করে কাজ করার সুযোগ না থাকে, তাহলে পছন্দমতো ক্লায়েন্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন নিশ নিয়ে কাজ করতে পারেন। এতে করে এক্সপেরিয়েন্স ও হবে পাশাপাশি তুলনামূলক কম সময়ে ইনকামও শুরু করতে পারবেন।
৩। পোর্টফোলিও তৈরি করা
একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের রেগুলার ক্লায়েন্ট পাওয়ার এবং সাকসেসফুল হওয়ার অন্যতম উপায় হলো ভালো মানের প্রফেশনাল পোর্টফোলিও থাকা। কারণ ভালো মানের পোর্টফোলিওই একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের স্কিল সম্পর্কে ক্লায়েন্টদের মনে পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করে দেয়। যেহেতু একেকজন ক্লায়েন্টের চয়েস আলাদা হয়ে থাকে, তাই সাধারণত কোন ডিজাইনারের কাছ থেকে সার্ভিস নেয়ার আগে তারা ডিজাইনারের পোর্টফোলিও দেখতে চান। একারণেই ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করতে এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস সাকসেসফুল করতে প্রফেশনাল পোর্টফোলিওর কোন বিকল্প নেই।
প্রফেশনাল পোর্টফোলিও বানাতে গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য কিছু টিপস হলো –
ফটোশপ মেকআপ ব্যবহার করা যাতে করে ডিজাইনটা দেখতে আকর্ষণীয় মনে হয়।
নিজের বেস্ট ডিজাইনগুলো আপলোড করা।
ডিজাইন কিংবা আর্টওয়ার্কগুলো সম্পর্কে ডিটেইলে লিখে এক্সপ্লেইন করা যাতে করে কোন আর্টওয়ার্ক কী উদ্দেশ্যে করা হয়েছে তা সম্পর্কে ক্লায়েন্টরা আইডিয়া পায় ।
অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন বিহ্যান্স বা ড্রিবলে নিজের কাজ শেয়ার করা। এতে করে ক্লায়েন্ট পাওয়ার চান্স অনেকটা বেড়ে যায়।
৪।নিজের ওয়েবসাইট থাকা
যদি গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস নিয়ে আগানোর প্ল্যান থাকে এবং বড় বড় ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার ইচ্ছা থেকে থাকে ,তাহলে নিজের একটা ওয়েবসাইট থাকা খুবই জরুরি। কারণ, বড় বড় ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার জন্য বিহ্যান্সের পোর্টফোলিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তেমন প্রফেশনাল দেখায়না। এক্ষেত্রে যদি নিজের একটা ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে আরো প্রফেশনালি নিজের পোর্টফোলিও ক্লায়েন্টদের সামনে প্রেজেন্ট করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, নিজের ওয়েবসাইট থাকলে তা বিজনেসের গ্রোথেও হেল্পফুল হবে৷
৫। এক্সপার্টদের কাছ থেকে ইন্সপিরেশন নেয়া
গ্রাফিক ডিজাইনে স্কিল বাড়ানোর অন্যতম ইফেকটিভ উপায় হলো এক্সপার্টদের থেকে ডিজাইন সম্পর্কে ইন্সপিরেশন নেয়া। কোন একটা স্পেসিফিক ডিজাইন টাইপ সিলেক্ট করে সেই একই ডিজাইন টাইপ নিয়ে যেসব এক্সপার্ট ডিজাইনাররা কাজ করেছেন তাদের ডিজাইনগুলো অ্যানালাইসিস করুন। প্রয়োজনে তাদেরকে ডিজাইন সম্পর্কে প্রশ্ন করুন। এরপর নিজে নিজে ডিজাইন করতে চেষ্টা করুন। দেখবেন ডিজাইনে অনেক ইম্প্রুভ করতে পারবেন।
৬। প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টে ইনভেস্ট করা
গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস করার জন্য মাইন্ডসেট করা হয়ে গেলে ডিজাইন করতে যে ইকুইপমেন্টগুলো প্রয়োজন সেগুলোতে ইনভেস্ট করা শুরু করুন৷ একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের রোবাস্ট ডিজাইন সিস্টেম থাকা অবশ্যই প্রয়োজন যাতে করে কোন ক্লায়েন্টের কাজ করার সময় কোনরকম ঝামেলায় পড়তে না হয়৷
গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য নিজের সার্ভিসের সাথে রিলেটেড এমন ইকুইপমেন্টে ইনভেস্ট করুন। বাড়তি টাকা খরচ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন । যেমনঃ যদি লোগো এবং ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ডিজাইনের সার্ভিস দিয়ে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটর ই এনাফ। তাই অযথা অডোবি ক্রিয়েটিভ স্যুইট কিনে টাকার অপচয় করবেননা। সবসময় বুঝেশুনে নিজের সার্ভিসের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টে ইনভেস্ট করুন।
৭। বিভিন্ন অনলাইন কমিউনিটিতে জয়েন করা
গ্রাফিক ডিজাইন সেক্টরে কাজ করেন বলেই যে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করে যাবেন, ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। বরং বিভিন্ন বিজনেস নেটওয়ার্ক ইভেন্ট এবং ডিজাইনারদের অনলাইন কমিউনিটিতে জয়েন করুন৷ এতে করে বিভিন্নভাবে নিজের গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেসে বেনিফিটও পাবেন।
বিজনেস নেটওয়ার্কিংয়ের ফলে নতুন নতুন ডিজাইন প্রজেক্ট পেতে পারবেন। আবার ডিজাইনার কমিউনিটিতে জয়েন করার ফলে নিজের কনফিডেন্স বাড়াতে পারবেন এবং যেকোনো সমস্যায় কমিউনিটি থেকে হেল্প ও নিতে পারবেন। সুতরাং বিজনেসের গ্রোথ বাড়িয়ে সাকসেসফুল হতে চাইলে গ্রাফিক ডিজাইন রিলেটেড বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং অনলাইন কমিউনিটিতে জয়েন করুন।
৮। বিজনেস মার্কেটিং প্ল্যান সেট করা
মার্কেটিং প্ল্যান ছাড়া যেকোনো বিজনেসই বলতে গেলে অচল৷ তাই যদি নিজের গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেসকে অনেকদূর নিয়ে যেতে চান, তাহলে সলিড মার্কেটিং প্ল্যান সেট করুন৷ বিজনেসের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি এমনভাবে বানান যাতে করে বেশি বেশি ক্লায়েন্ট পেতে পারেন৷ সঠিকভাবে মার্কেটিং প্ল্যান সেট করে সেটাকে বাস্তবায়ন করতে পারলেই দেখবেন এ বিজনেসে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবেনা।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%9f-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%82-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%85%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5/
মূলত এ স্টেপগুলোর মাধ্যমেই নিজের গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস শুরু করতে পারেন৷ তবে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, গ্রাফিক ডিজাইন সেক্টরে কাজ করতে হলে এ স্টেপগুলো ফলো করার পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইনের প্রতি প্যাশনেট হতে হবে এবং বিজনেসের পেছনে প্রচুর এফোর্ট দেয়ার জন্য মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড থাকতে হবে। তাহলেই এ বিজনেসে সাকসেসফুল হওয়া সম্ভব হবে।