প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল ভারত। আর তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ছিল কার্যত নিয়মরক্ষার। তবে কে জানতো এমন ম্যাচেই রোমাঞ্চে ভরপুর থাকবে! নির্ধারিত ওভারে ম্যাচ অমিমাংসিত থাকার পর প্রথম সুপারেও টাই। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফয়সালা হয় দ্বিতীয় সুপার ওভারে। ১০ রানে জয় পায় ভারত। তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে রোহিত শর্মা বাহিনী।
বুধবার বেঙ্গালুরুতে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে রোহিত ও রিংকু সিংয়ের তাণ্ডবে ৪ উইকেটে ২১২ রানের বড় পুঁজি পেয়েছিল ভারত। জবাবে আফগানদের ইনিংসও শেষ হয় ৬ উইকেটে ২১২ রানে। নাটকীয়ভাবে প্রথম সুপার ওভারও টাই হয়। প্রথমে ব্যাট করে আফগানরা। সফরকারীদের হয়ে ব্যাট করতে নামেন গুলবাদিন নাইব এবং রহমানুল্লাহ গুরবাজ। মুকেশ কুমারের প্রথম বলেই রান আউট হন নাইব। পরের বলে এক রান নেন মোহাম্মদ নবি। তৃতীয় বলে চার হাঁকান রহমানউল্লাহ গুরবাজ। চতুর্থ বলে আবার সিঙ্গেল। পঞ্চম বলে ছয় মারেন নবি। শেষ বল থেকে আসে ৩ রান। ফলে ১৭ রানের টার্গেট পায় ভারত।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের প্রথম দুই বলে মাত্র ২ রান নেয় ভারত। পরের দুই বলেই ৬ হাঁকান রোহিত শর্মা। ফলে শেষ দুই বলে দরকার হয় ৩ রান। পঞ্চম বল থেকে আসে মাত্র ১। শেষ বলে জয়সওয়াল নিতে পারেন কেবল ১ রান। আবারও ম্যাচ টাই হয়।
এরপর দ্বিতীয় সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করে ভারত। নামেন রোহিত এবং রিংকু। রোহিত ৩ বলে ১১ তোলার পর রিংকু প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। পরের বলে আউট হন রোহিতও (১১)। ফলে আফগানিস্তানের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২ রান। ব্যাট করতে নামেন নবি এবং গুরবাজ। রোহিত এবার বল দেন রবি বিষ্ণোইকে। তিনি প্রথম বলেই আউট করেন নবিকে। তৃতীয় বলে গুরবাজকে আউট করে ভারতকে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দিলেন।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ভারত। ২২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। এরপরই টিম ইন্ডিয়াকে পথ দেখান রোহিত শর্মা। অধিনায়কের অনবদ্য ১২১ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং রিংকু সিংহের ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংস ভারতকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দেয়।
প্রায় দেড় বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফেরার অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না রোহিত শর্মার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে ফিরেছিলেন ডাক (শূন্য) নিয়ে। এরপর তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে তিনি রান করলেন সুদে-আসলে! যার মাধ্যমে রোহিত সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন।
এই দুজনের জুটি শেষ ওভারে করিম জানাতের বলে নিয়েছেন ৩৬ রান। শেষ ওভারে রানের গ্রাফ ছিল এমন— ৪-৭ (নো বল)-৬-১-৬-৬-৬। এর মাধ্যমে তারা যুবরাজ সিং এবং কাইরন পোলার্ডের রেকর্ড স্পর্শ করে ফেলেন। এই দুই ব্যাটসম্যান এক ওভারে যথাক্রমে ইংল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬টি ছক্কা হাঁকিয়ে নজির গড়েছিলেন। তবে আজ রোহিত-রিংকু দু’জনে মিলে করেন সমান ৩৬ রান।
পাশাপাশি পঞ্চম উইকেটে ৯৫ বলে অপরাজিত ১৯০ রানের পার্টনারশিপ গড়েও টি-টোয়েন্টিতে নতুন নজির গড়েন রোহিত-রিংকু। পঞ্চম উইকেট জুটিতে যা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ভারত যখন ২২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে, তখনই হাল ধরেন দুই ব্যাটসম্যান। এই জুটি এরপর বিস্ফোরণ ঘটান। দুই তারকাই ছুটিয়েছেন চার-ছক্কার ফুলঝুরি। তাদের দাপটে ভারত শেষপর্যন্ত নির্দিষ্ট ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১২ রান করে।
জবাবে শুরুটা ভাল করেও ম্যাচ জিততে পারল না আফগানরা। দুই ওপেনার গুরবাজ (৫০) এবং জাদরান (৫০) প্রথম উইকেটের জুটিতে ১১ ওভারে ৯৩ রান তোলেন। তিন নম্বরে নেমে ঝলক দেখালেন গুলবাদিন নাইবও। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ৫৫ রান করে। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪টি করে চার ও ছক্কা। এ ছাড়া অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার নবির ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ৩৪ রানের আগ্রাসী ইনিংস। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সফলতম ওয়াশিংটন সুন্দর। তিনি ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন আবেশ খান এবং কুলদীপ যাদব।