গ্লোবাল ভিলেজ ধারণার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ডেটিং অ্যাপ। এখানে লোকে নিজের ছবি, নাম, ই-মেইল, ফোন নম্বর, আগ্রহের বিষয়, অপছন্দ, নিজের সম্পর্কে কিছু কথা ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে একজন নারী বা একজন পুরুষ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে, বন্ধুত্ব করে থাকে। উন্নত দেশের মতো এখন বাংলাদেশেও গত কয়েক বছর ধরে ডেটিং অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে। প্রথমদিকে শুধু ছেলেরা এর ব্যবহারকারী হলেও এখন অনেক মেয়েও এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। তবে সঠিকভাবে এই অ্যাপ ব্যবহারে বাংলাদেশের ছেলে ও মেয়েদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ব্যবহারকারী অনেকের মতে, সিরিয়াস রিলেশনশিপের জন্য ডেটিং অ্যাপের ওপর নির্ভর করা একদমই উচিৎ না।
জানা গেছে, অনলাইনে অনেক ধরণের ডেটিং অ্যাপ রয়েছে। ট্যানট্যান, হিঞ্জ, ওকেকিউপিড, কফি মিটস বেইগেল, ট্রুলিম্যাডলি, ই-হারমোনি, ম্যাচের মতো আরও অনেক অ্যাপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। তবে বাংলাদেশের তরুণ তরুণীদের থেকে জানা গেছে, তারা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে টিন্ডার। মেয়েদের মাঝে বাম্বল ব্যবহার করার প্রবণতা আবার তুলনামূলকভাবে বেশি।
এদিকে ড্যাটিং অ্যাপ ব্যবহার বা এই অ্যাপরে বিষয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো বিস্তারিত গবেষণা করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারে ২০২৩ সালের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশটির শতকরা ৩০ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে। এদের মাঝে ৩৪ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ শতাংশ হলো নারী। তবে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মাঝে, তাদের মাঝে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করার প্রবণতা সবচেয়ে।
এছাড়া ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই হয় অবিবাহিত, অথবা ইতোমধ্যে তাদের কোনো না কোনো সঙ্গী আছে। বিবাহিত বা যাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাদের মাঝে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করার প্রবণতা কম।
কিন্তু ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে মেয়েদের। রাজধানীর ফার্মগেটের বাসিন্দা এক তরুণী জানান, অধিকাংশ ছেলেরা আসলে শারীরিক অন্তরঙ্গতা চায়। এসব অ্যাপ ব্যবহার করার সময় ছেলেরা কথা বলা শুরু করতে না করতেই তাদের আল্টিমেট প্রশ্ন হলো, ডু ইউ ওয়ান্ট টু মিট মি?
এদিকে মিজ রুবিনা নামে এক তরুণী জানান, বন্ধুদের উৎসাহে ডেটিং অ্যাপ বাম্বলে অ্যাকাউন্ট খুললেও পছন্দমত কোনো সঙ্গী তৈরি করতে পারেননি তিনি।
তিনি বলেন, আমার কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। তারা ইমোশনাল ইন্টিমেসির ওপর ওয়ার্ক করার চেয়ে ফিজিক্যাল ইন্টিমেসি বেশি চাচ্ছিলো। বিষয়টা ভালো লাগেনি আমার। যারা ক্যাজুয়াল ডেটিং পছন্দ করে, ওদের জন্য ডেটিং অ্যাপ ভালো। কারণ প্রতি সপ্তাহে তারা কারও না কারও সঙ্গে ডেটে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে কোনো ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট থাকছে না।
মিজ রুবিনার মতে, ডেটিং অ্যাপগুলোতে যাদের বয়স ৩০ বছরের কম, তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য হলো শারীরিক অন্তরঙ্গতা। আর যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি, তারা আবার বিয়ের জন্য মেয়ে খোঁজেন।
এদিকে একই ধরণের অভিজ্ঞতার কথা জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেহেরুন নাহার মেঘলা। তিনি বলেন, ডেটিং অ্যাপের সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ কিছু বুঝে না। এর কনসেপ্টটা বুঝে না। এখানে বলাই আছে যে এটা একটা হুক-আপ অ্যাপ, ক্যাজুয়াল ডেটের জন্য। কিন্তু মানুষ ভাবে এটা বিয়ে করার অ্যাপ।
তিনি আরও বলেন, সবাই যে শারীরিক সম্পর্কের জন্যই টিন্ডার ব্যবহার করে তা না। তবে টিন্ডারে যদি কেউ শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে থাকে তবে সেটা অ্যাবনরমাল মনে করার কিছু নাই। কারণ টিন্ডার থেকে সিরিয়াস বা কাটকাট সম্পর্ক আশা করার কিছু নাই।
এদিকে এই বিষয়ে ছেলেদের অভিজ্ঞতা বা দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকটা মেয়েদের মতই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইমরান হোসেন।
ইমরান হোসেন জানান, করোনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। সেই সময় লোনলিনেস কাটাতে এমনিতেই টিন্ডার অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, এদের প্রত্যেকের কমিনিউকেশন সিস্টেমটাই কেমন যেন। হাই হ্যালো, অর্থাৎ মিনিমাম কনভারসেশনও হতে পারে না। তার আগেই শারীরিক সম্পর্কের কথাবার্তা শুরু করে দেয়।
এদিকে ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন মো. ইমরান। তখন তাকে একাডেমিক কারণে ডেটিং অ্যাপের ওপর একটি গবেষণা করতে হয়।
তিনি বলেন, এই অ্যাপগুলোতে এইসব প্রস্তাব ছেলেরাই বেশি দেয়। তারা বলে যে ঐ জায়গায় ট্রিপে যাবো। মূল লক্ষ্য, নিজেদের শারীরিক চাহিদা মিটানো।
যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬ শতাংশ নারী ব্যবহারকারী বলেছে যে তারা অনাকাঙ্খিতভাবে বা না চাওয়া সত্ত্বেও ডেটিং অ্যাপে পুরুষদের কাছ থেকে যৌনোদ্দীপক বা হয়রানিমূলকও মেসেজ এবং ছবি পেয়েছেন।