মানুষ সবসময় ভুল করে বসে। শয়তানের ধোকায় পড়ে প্রতিনিয়ত গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়। গুনাহ হয়ে গেলে মানুষের উচিত তাৎক্ষণিক তওবা করে নেওয়া। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, হে ঈমানদাররা, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর; তবেই তোমরা নিঃসন্দেহে সফলতা লাভ করবে। (সূরা নূর, আয়াত, ৩১)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, অতঃপর সৎ পথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। (সূরা ত্বহা, আয়াত, ৮২)
মনে রাখা উচিত, মানুষ কোনো ময়লা আবর্জনার গর্তে পড়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে উঠে ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার হওয়ার চেষ্টা করে। ঠিক তেমনি গুনাহের পর তওবা করে নিজেকে পবিত্র করা উচিত।
তাই কখনো কোনো গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নেওয়া উচিত। গুনাহের প্রতি ঘৃণা ও পাপবোধের কারণে অনেকেই তওবা করেন। কিন্তু তওবা কবুল হয়েছে কিনা তা বুঝে উঠা সম্ভব হয়। একজন মানুষের পক্ষে নিশ্চিত করে বলাও কঠিন তওবা আসলেই আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছেন কিনা। তবে কিছু আলামত বা লক্ষণের মাধ্যমে একজন মানুষ বুঝে নিতে পারবেন তার তওবা কবুল হয়েছে কি না।
তওবা আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে, বুঝার কিছু আলামত হলো-
>> আগের থেকে তওবাকারীর অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়া। অর্থাৎ, আগের তুলনায় নেক আমলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়া।
>> গুনাহের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া।
>> আগে যেসব গুনাহ করে ফেলেছেন তার কথা স্মরণ করে অনুতপ্ত হওয়া এবং অনুশোচনায় দগ্ধ হওয়া।
>> মনে আল্লাহ তায়ালা ভয় জাগ্রত হওয়া।
>> পাপের প্রতি আগ্রহ তৈরি হলে জাহান্নামের শাস্তি ও আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির কথা খেয়াল হওয়া।
>> আচার-আচরণে বিনয়ী ভাব আসা।
>> গুনাহের শাস্তি ও আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির কথা স্মরণ করে বারবার তওবার প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া।
তওবার পর কারো ভেতর এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে আল্লাহ তায়ালা তওবা কবুল করেছেন বলে ধারণা রাখা যেতে পারে। এর বিপরীতে তওবার করার পরও তওবা কবুল হয়নি বলে ধারণা করা যেতে পারে যখন কোনো তওবাকারী নিজের ভেতর কয়েকটি বিষয় উপলদ্ধি করবেন। বিষয়গুলো হলো-
>> তওবা করার পরও নিজের মাঝে কোনো পরিবর্তন না হওয়া।
>> আগে যেসব পাপের কাজ করেছেন তার কথা স্মরণ করে মনে আনন্দ অনুভব করা।
>> তওবাকারী নিজে নিজে মনে করে নেওয়া যে আমার তওবা কবুল হয়ে গেছে।
>> দোয়া করা বা আল্লাহর কাছে চাওয়ার সময় চোখে পানি না আসা।
>> গুনাহের শাস্তির কথা ভুলে যাওয়া।
>> আবারো গুনাহের কাজে জড়িয়ে যাওয়া।
>> নেক আমল ও ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি না হওয়া।
>> নিজের ভালো কাজ বাড়ানোর প্রতি কোনো আগ্রহ না থাকা।
তওবা কবুলের বিষয়টি পুরোপুরি আল্লাহ তায়ালা হাতে। বান্দা যখন কোনো গুনাহের পর একনিষ্ঠ চিত্তে আল্লাহ তায়ালার কাছে মাফ চায় তিনি তাকে মাফ করে দেন। গুনাহের পর তওবার মাধ্যমে নিজেকে পূতঃপবিত্র করার স্বভাব মানুষের ভেতর আছে বলেই আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজের প্রতিনিধি করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন।
তওবার পর আবারও গুনাহ করে ফেললে কী করবেন?
এ বিষয়ে এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন– ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস, ২৭৪৮)
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%98%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b6%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%a8/
অপর এক হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আমি দিনে ১০০ বার তওবা করি। (মুসলিম, হাদিস, ৭০৩৪)