দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাট মানঅভিমান কিংবা হাসি ঠাট্টা প্রেম ভালবাসাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জীবনে অনেক কিছু করার অনুপ্রেরণা দেয়। কিন্তু অনেক সময়ই শোনা যায় সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা। শোনা যায় দাম্পত্য কলহের কথা, যা পারিবারিক জীবনকে একদম বিষিয়ে তুলে। দাম্পত্য কলহের রয়েছে অসংখ্য ক্ষতিকর দিক। এর ফলে স্বামী বা স্ত্রী কেউই ভালো থাকতে পারে না। আর যদি সন্তান থাকে তাইলে তো আরও বিপদ। কারণ এতে করে সন্তানের মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয়। বেড়ে উঠতে গিয়ে নানাভাবে মানসিক প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়। তাই চলুন জেনে নেই দাম্পত্য কলহ দূর করার কিছু করণীয় দিক সম্পর্কে।
শালীন আচরণ
নিজেদের মধ্যে এমন কিছু নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা উচিত নয় যাতে করে যে কোন একজন আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমরা অনেক সময় এমনভাবে একে অন্যকে ধমক দিয়ে বসি, যা অন্যদের সামনে অসম্মানের বিষয় হয়ে যায়। এভাবে অপমান করা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দেয়। সুতরাং, স্বামী-স্ত্রী উভয়ই একজন আরেকজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং খারাপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
অত্যাধিক বাড়াবাড়ি
আপনার স্বামী/স্ত্রী কি করছেন, কি খেলেন কিংবা কোথায় যাচ্ছেন তা জিজ্ঞেস করা অবশ্যই আপনার কর্তব্য। কিন্তু এই সামান্য কুশল বিনিময় বিরক্তির পর্যায়ে তখনই যায়, যখন আপনি অযথা তার ওপর খবরদারি করতে যান। এখানে যাবে না, সেখানে কেন গেলে, এর সাথে কথা বলবে না, তার সাথে মিশবেন না এই ধরনের বাড়াবাড়িগুলো পরিহার করা উচিত। তা দুইজনের জন্যই মঙ্গলজনক। কারণ এসমস্ত অত্যাধিক বাড়াবাড়ি বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। সেইসাথে অনেকে নিজের বর্তমান ভালোবাসার মানুষটির সামনে কথায় কথায় পুরনো দিনের কথা বলে থাকে। এই অভ্যাসটি আপনার বর্তমান সম্পর্কের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ
দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হয়। এক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রী উভয়কে ভালো শ্রোতা হতে হয়। স্বামী/স্ত্রী কেউ কারও কথা না শুনলে এতে করে কলহ তৈরি হতে পারে। একটু ভুল বোঝাবুঝি থেকে ভাবতে পারে যে আপনি তাকে এড়িয়ে চলছেন। এই ভাবনাটি সম্পর্কের জন্য ভালো নয়। একে অপরের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে করে তিনি নিজেকে আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবেন। এবং সেই হিসেবে তিনিও আপনাকে গুরুত্ব দেবেন। সেইসাথে কখনো সন্দেহ করতে যাবেন না। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ হিসাব দিবে। তাই সন্দেহ দূর করুন। স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের চাদরস্বরূপ, ছোট-খাটো ভুলত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা নিয়ে অন্যদের কাছে বলে বেড়াবেন না।
প্রশংসা করা
আপনার ভালোবাসার মানুষটি যা করে, আপনার জন্য যা করছে তার জন্য প্রশংসা করতে শিখুন। বাইরের কারও সাথে তুলনা করে তার মানসিকতাকে আঘাত করবেন না। অমুকের স্বামী/স্ত্রী তার জন্য অনেক কিছু করেছে তুমি কেন করো না বা করতে পারো না এই ধরনের তুলনামূলক কথা কখনোই নিজের স্বামী/স্ত্রীর সামনে বলা উচিৎ নয়। অন্য একজনের সাথে তুলনা করা সব চাইতে বড় আঘাত আপনার ভালোবাসার মানুষটির জন্য। সেইসাথে মহান রাব্বুল আলামীনের ইবাদাত করুন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত না করে, তার নির্দেশিত পথে চলে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
তৃতীয় পক্ষ
দাম্পত্যের ক্ষেত্রে তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে চোখ বুজে বিশ্বাস করবেন না। যতই হোক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বা প্রিয়জন। কারো কথাই চোখ বুঝে বিশ্বাস করবেন না ও কাউকে নিজেদের দাম্পত্যে কথা বলার সুযোগ দেবেন না। একসঙ্গে পথ চলতে ঝগড়া হবেই। কাজেই এটি স্বাভাবিকভাবে নেওয়াই ভালো। অনেকেই আছেন যারা একটু ঝগড়াতেই ডিভোর্স চেয়ে বসে থাকেন। এ ধরনের মন্তব্য স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। তবে একবার যদি বলেই ফেলেন তাহলে আন্তরিকভাবেই ক্ষমা চান।