বাংলাদেশের পপগুরু আজম খানের জন্মদিন বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)। ১৯৫০ সালের আজকের দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন প্রয়াত এই সংগীতশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বেঁচে থাকলে আজ ৭৪ বছরে পা দিতেন আজম খান।
গানের প্রতি, বিশেষ করে গণসংগীতের প্রতি একটা বাড়তি টান থেকেই নিজেকে সংগীত জগতে বিলিয়ে দেন আজম খান। বরাবরই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ও প্রজন্মের স্বার্থেই বাস্তবিকতাকে গানে রূপ দিতেন তিনি।
আজম খানের প্রকৃত নাম ছিল মাহবুবুল হক খান। তবে সবাই তাকে ‘গুরু’ বলেই ডাকতেন। কিন্তু গুরু নয়, ‘আজম ভাই’ সম্বোধনটি পছন্দ করতেন আজম খান। কিন্তু সবার ভালোবাসাই তাকে ‘গুরু’ করে তুলেছিল। আজ তার অগণিত গুণগ্রাহী ও ভক্তরা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সহকারে স্মরণ করছেন প্রিয় শিল্পীকে। সামাজিকমাধ্যমেও নিজেদের মতো করে অনেকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আজম খানকে।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনিতে জন্মগ্রহণ করেন আজম খান। শৈশবের ৫ বছর সেখানেই ছিলেন তিনি। ৫ বছর বয়সে ঢাকেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। এরপর সপরিবারে কমলাপুরে নিজেদের বাড়িতে চলে যান তারা। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসস পাস করেন আজম খান।
১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের সময়েই সোচ্চার হয়ে ওঠেন প্রগতিশীল চেতনার ধারক আজম খান। সেসময়ের ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচারে অংশ নেন তিনি। দলটির সঙ্গে ঘুরে ঘুরে গানও করেছেন তিনি। বরাবরই দেশের মানুষের কল্যাণে গান গেয়ে গেছেন এই পপগুরু।
এরপর ১৯৭১ সালে পাক হানাদারের বিরুদ্ধে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আজম খান। কুমিল্লা ও ঢাকার আশেপাশে সেকশন কমান্ডার হিসেবে অনেকগুলো গেরিলা আক্রমণে বীরবিক্রমে অংশ নেন তিনি।
দেশ স্বাধীন হলে ‘উচ্চারণ’ নামে একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন আজম খান। দেশের সংগীত জগতে তখন দারুণ আলোড়ন তোলে ব্যান্ড দলটি। এখান থেকে তিনি পশ্চিমা ঢঙে গান বানানো শুরু করেন। তবে তার গানগুলো ছিল সহজ-কথা সুরে।
কাগজ-কলমে কখনও গান লিখতেন না আজম খান। এমনকি তার এত এত গানের সংরক্ষণও তার কাছে ছিল না। মাথায় কোনো শব্দ-কথা এলে সেটাকেই বড় করে গানে রূপ দিতেন। এরপর সুর দিয়ে সেটাকে গাইতেন। জাদুকরি উপায়ে সেই অলিখিত কথা-সুর ছড়িয়ে যেতো দেশজুড়ে। যা এখনও সমানভাবে আকৃষ্ট করে দর্শক-শ্রোতাদের।
১৯৭২ সালে তার ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ আর ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি বিটিভিতে প্রচার হয়ে প্রশংসিত হয়। পরবর্তী সময়ে বিটিভিতে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গান গেয়ে ব্যাপক আলোড়ন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন আজম খান।
আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে— ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অ্যাকসিডেন্ট’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’, ‘অনামিকা’, ‘আমি যারে চাইরে’ ইত্যাদি।
দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আজম খান। শিল্পকলায় (সংগীত) অবদানের জন্য ২০১৯ সালের মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয় তাকে। তবে আজম খানের শূন্যতা কখনোই পূরণ হবার নয়।