আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ভ্যালেন্টাইন্স উইক। প্রতিবছর ৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন হয় প্রেমের সপ্তাহ। সবাই ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালন্টোইন ডেতে গা ভাসান। কিন্তু এই ভ্যালন্টোইন ডের আগে আরো বেশকিছু দিন আছে যে দিনগুলো বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ৭ফেব্রুয়ারি থেকে ভ্যালেন্টাইন্স উইক শুরু হয়। আর এর পরে বিশেষ দিনগুলো কোন তারিখে কোন দিবস আসুন আমরা জেনে নিই।
রোজ ডে
৭ই ফেব্রুয়ারি রোজ ডে। বিশ্ব গোলাপ দিবস। সারা বছর ঘুরে এই একটি দিনই রোজ ডে হিসেবে পালিত হয় বিশ্বব্যাপী। আর তারই সাথে শুরু হয় ভালোবাসার সপ্তাহ। বাতাসে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে প্রথমেই পালন করা হয় এই রোজ ডে।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ভিক্টোরিয়ানরা একে অপরের প্রতি তাদের ভালবাসা প্রকাশ করার জন্য এক সময় গোলাপ উপহার হিসেবে দিতেন। এমনকি রোমান যুগের মানুষও ভালোবাসার অঙ্গ হিসেবে এই ফুল ব্যবহার করে এসেছেন। জানা যায় যে, গ্রীক দেবতা ইরস তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। তার স্ত্রী ছিলো ইথিনা। তিনি ছিলেন গ্রীক দেবী। ইরস মাঝেমধ্যেই তার স্ত্রীকে লাল গোলাপ উপহার দিতেন। ইরস এই ফুল দিয়ে বুঝাতে চাইতেন যে, তিনি তার স্ত্রীকে কতোটা ভালোবাসেন।
ভালোবাসার প্রতীক গোলাপ। যেকোনো অনুষ্ঠানে গোলাপফুল একটি চমৎকার উপহার হিসেবে কাজ করে। গোলাপফুল প্রেম, আবেগ এবং প্রশংসার সাথে যুক্ত। এই আবেগগুলি প্রকাশ করার জন্য নিখুঁত একটি উপায় একগুচ্ছ গোলাপ ফুল। এটি এমন একটি ফুল যা মানুষকে ভালবাসার দিকে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করে।
কথিত আছে, গোলাপের সংখ্যাও নাকি অনেক অর্থ বহন করে। যেমন, শুধুমাত্র একটি গোলাপ কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ জানানোর টোকেন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আবার দুইটি গোলাপ বিয়ের প্রস্তাব হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তবে আপনি যদি লাল এবং সাদা গোলাপ ব্যবহার করেন তবে এটি শান্তির বার্তা বহন করে। একসাথে ছয়টি গোলাপ ভালবাসার প্রয়োজন অর্থে ব্যবহার হয়। যদি কাউকে সত্যিকারের এবং গভীরভাবে ভালোবেসে থাকেন তাহলে নির্দ্বিধায় তাকে ১১টি গোলাপ উপহার দিয়ে ফেলুন। তরুণদের মাঝে আজকাল ক্রাশ নামক একটি ট্রেন্ড আছে। যদি কেউ আপনার ক্রাশ হয়ে থাকে তাহলে তাকে উপহার দিন তেরোটি গোলাপ। এর অর্থ আপনি তার একজন গোপন ভক্ত।
গোলাপ শুধু আপনার জীবনসঙ্গীকেই উপহার হিসেবে দিবেন তা নয়। মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধুদেরও উপহার দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারেন যে আপনি তাদের কতোটা ভালোবাসেন।
প্রপোজ ডে
প্রস্তাব দিবস ভালোবাসা সপ্তাহ বা ভ্যালেনটাইন সপ্তাহ শুরুর দ্বিতীয় দিন যা ফেব্রুয়ারি ৭-১৪ তারিখে শুরু হয়। উপমহাদেশের ভারতে দিবসটি প্রতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে পালিত হয়। এই দিবসে তরুণ বয়স্ক ছেলেমেয়ে তাদের বন্ধু-বান্ধবী, প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু এবং পরিচিতদের গোলাপ দিয়ে প্রস্তাব দিয়ে থাকে।
চকলেট ডে
গোলাপ উপহার ও প্রেম নিবেদনের পর এবার এলো চকলেট ডে। প্রতিবছর ৯ ফেব্রুয়ারি এই দিনটি পালন করা হয়।
অনেক দেশেই চকলেট ডে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকেই পুরুষ এবং নারী একে অপরকে যে উপহার দিয়ে আসছে তার একট বড় অংশ হচ্ছে চকলেট।
জানা যায়, সেই যুগে রিচার্ড ক্যাডবেরি নামক একজন বিক্রেতা ভ্যালেন্টাইন ডে আসার আগে চকলেট বিক্রি করতেন। তার সেই চকলেটগুলো ভরা থাকত একটি হার্ট-শেপড বক্সে। আর এরপর থেকেই নাকি চকোলেট উপহার দেওয়া একটি রীতি হয়ে ওঠে।
আজকাল অনলাইন ঘাটাঘাটি করলেই পেয়ে যাবেন চকলেট তৈরির নানা রেসিপি। সেখান থেকে সহজ একটি রেসিপি নিয়ে বানিয়ে ফেলুন চকলেট। এরপর নিজ হাতে বানানো চকলেটটি উপহার দিন আপনার সঙ্গীকে। এরকম উপহার পেয়ে আপনার সঙ্গী হয়ত খুশিতে আটখানা হয়ে উঠবেন।এছাড়া, প্রিয় মানুষটির জন্য একটি চকোলেট-থিম পার্টি দিতে পারেন। পার্টির খাবারের মেন্যুতে রাখতে পারেন নানা রকম চকলেট।
টেডি ডে
১০ ফেব্রুয়ারি টেডি ডে। ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের চতুর্থ দিন। ভালবাসা প্রকাশ করতে এই দিনে আপনার প্রিয়জনকে একটি সুন্দর টেডি বিয়ার উপহার দিতে পারেন ।
টেডি ডে এর ইতিহাস এখনও অজানা। বলা হয়ে থাকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর ‘টেডি’ রুজভেল্টের নামে টেডি ডে এর নামকরণ করা হয়। তিনি নাকি একবার ভাল্লুক শিকারে জঙ্গলে যান। আর তখন একটি টেডি বিয়ার দেখে তিনি আর প্রাণীটিকে শিকার করতে পারেননি। এরপর থেকেই বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদযাপন করা হয়ে থাকে।
প্রতি বছর, দম্পতি এবং তরুণরা তাদের প্রিয়জনকে টেডি বিয়ার দিয়ে ভ্যালেন্টাইনস উইক উদযাপন করে। টেডি বিয়ার স্নেহের প্রতীক। এই দিনে আপনি টেডি বিয়ারের গায়ে আপনার ও আপনার প্রিয়জনের ছবি লাগাতে পারেন। এরপর সেটি দিয়ে পুরো বাড়িটি সাজাতে পারেন। এটি হয়ে যাবে আপনার প্রিয়জনকে খুশি করার একটি আকর্ষণীয় উপায়।
প্রমিস ডে
প্রতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় এই প্রমিস ডে। প্রেমের সপ্তাহের পঞ্চম দিন উদ্যাপন করা হয় এই প্রমিস ডে। সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিশ্রুতি। নিজেদের সম্পর্ককে আরও মজবুত আঁটসাট করতে এর থেকে ভাল উপহার আর কী হতে পারে।
হাগ ডে
ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ বিশ্ব হাগ ডে হিসেবে উৎযাপিত হয়। এটি প্রপোজডের ঠিক পরে আসে। সঙ্গীর প্রতি অনুভূতি এবং কতটা ভালোবাসেন তা দৃঢ় ভাবে আলিঙ্গনের মাধ্যমে প্রকাশ করুন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে শক্তি আনতে পারে হাগ ডে।
কিস ডে
১৩ ফেব্রুয়ারি এই দিনটিতেই প্রতিবছর অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইন্স ডে-এর একদিন আগে ‘কিস ডে’ পালন করা হয়। যারা তাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিরিয়াস, তাদের জন্য এই দিনটি খুব স্পেশাল। এই বিশেষ দিনে প্রেমিক-প্রেমিকারা এবং বিবাহিত দম্পতিরা একে অপরকে চুম্বন করে নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। আজকের মতো সেরা দিন বছরে বারবার কিন্তু আসে না।
ভ্যালেন্টাইন ডে
প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারিই কেন ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয় এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ভালোবাসার জন্য এই দিনে মানুষের জীবন ত্যাগের ইতিহাস।
এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ইতিহাসটি হচ্ছে রোমের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের। তিনি ছিলেন মানবপ্রেমিক ও খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাট বারবার খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। সেই থেকেই দিনটির শুরু।
আরও একটি প্রচলিত কাহিনী আছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়েই। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর অনেক যুবক-যুবতী প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। এক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দুজন প্রাণ খুলে কথা বলত। একসময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালোবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
এ ছাড়া খ্রিষ্টীয় ইতিহাস মতে, রক্তপিপাষু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দি হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালোবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন।
একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি একসময়ে সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন। ওই দিনের শোকগাঁথায় প্রতিবছর পালন করা হয় এই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’।