মোটরসাইকেলের ফুয়েল ট্যাংকগুলো একটা সময় মেটাল দিয়েই তৈরি হতো, এখনও হয়। তবে আধুনিক মোটরসাইকেলগুলোতে আজকাল মেটাল ট্যাংকের উপরে প্লাস্টিক কভার ব্যবহার করতে অনেক বেশি দেখা যায়। কী রহস্য এর পেছনে? আসলেই কি এতে কোনো উপকারিতা আছে?
প্রথমত, ফুয়েল ট্যাংকে যেহেতু ফুয়েল থাকে তাই ট্যাংক মজবুত হওয়া অনেক জরুরি, একই সাথে ট্যাংক বানানোর এমন ধাতব পদার্থ ব্যবহার করতে হয় যা ওজনে হালকা, মজবুত এবং যাতে সহজে মরিচা পড়বে না। তাই ফুয়েল ট্যাংক বানানোর ক্ষেত্রে মেটাল বা অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। তবে বর্তমানে মেটাল ট্যাংকের উপরে প্লাস্টিক কভার ব্যবহার হতে দেখা যায়। চলুন জেনে নেই এর পেছনের কারণগুলো-
প্লাস্টিক কভার খুব সহজে বিভিন্ন আকৃতিতে ডিজাইন করা যায়, যার ফলে বাইকের ডিজাইন ও লুক আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
প্লাস্টিকের ট্যাংক কভারকে সহজেই অ্যারোডায়ানামিক শেপ দেওয়া যায় যা বাইকের স্ট্যাবিলিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
দুর্ঘটনাজনিত কারণে মেটাল ট্যাংক আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেটাতে ডেন্ট এবং লিকেজ আসার প্রবনতা থাকে যা রিপেয়ার করা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
বড় আকারের মেটাল ট্যাংকের ওজন বেশি হয়, যার কারণে বাড়তি ওজন মোটরবাইকের পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলে।
মেটাল ট্যাংকের উপরে প্লাস্টিক কভার থাকলে তা হিট ইন্সুলেটর হিসেবেও কাজ করে। এর ফলে রাইডার ইঞ্জিন থেকে উৎপন্ন তাপ তুলনামূলক কম অনুভব করে।
প্লাস্টিক কভারের কারণে সূর্যের তাপ ও বৃষ্টির পানি সরাসরি মেটাল ট্যাংকে লাগে না। ফলে ফুয়েল ট্যাংক একটু বেশি সুরক্ষিত থাকে।
দুর্ঘটনাজনিত কারণে ট্যাংকে আঘাত লাগলে প্লাস্টিক কভার সেই আঘাতের ধাক্কা অনেকটাই সামাল দিতে সক্ষম। কভার ভেঙে গেলেও তা পাল্টানো সহজ এবং এতে খরচ অনেক কম হয়।
প্লাস্টিক ট্যাংক কভার ব্যবহার করলে উৎপাদন খরচ অনেকটাই কমে আসে। আর এর সুবিধা বাইক উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারী উভয়েই ভোগ করতে পারে।
সবদিক বিবেচনায় প্লাস্টিক ট্যাংক কভার সাশ্রয়ী এবং এর বেশ কিছু ভালো দিক আছে। তবে –
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্লাস্টিকের ব্যবহার যত কমানো যায় ততই ভালো। কারণ প্লাস্টিক ক্ষয় বা ধ্বংস হয় না। এছাড়া মেটাল রিসাইকেল করার চেয়ে প্লাস্টিক রিসাইকেল করা কঠিন।
প্লাস্টিক কভারের আরো একটি খারাপ দিক হলো বিভিন্ন কোম্পানি বাইক উৎপাদন খরচ আরো কমানোর জন্য নিম্নমানের প্লাস্টিক ব্যবহার করছে। এর ফলে অল্প কিছুদিন ব্যবহাহারেই অনেক প্রিমিয়াম বাইকের প্লাস্টিক পার্টগুলো সহজেই ভেঙে যাওয়া এবং জয়েন্টগুলো ফাঁকা হয়ে যাওয়ার ঘটনা আমরা অহরহ দেখছি। এমনকি বাইকের ট্যাংকে হাত দিয়ে হালকা চাপ দিলেও সেটা কতটা ভঙ্গুর তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। তাই বাইক কেনার সময় প্লাস্টিক পার্টের কোয়ালিটি ভালোভাবে চেক করে নেয়া উচিত।