সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে হলে প্রতিটি মানুষেরই প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের খাবার একটি নির্দিষ্ট পরিমাপে বা পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন। খাবারের পরিমাপ বা পরিমাণ কমবেশি হলেই শরীরে ক্যালোরি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের অভাব বা আধিক্য দেখা দেয়। ফলে দেখা দেয় অপুষ্টি বা ওজনাধিক্য। আজকে জেনে নেই বাঙালি খাবারের পুষ্টিগিুণ সম্পর্কে:
খাবারের ভাগ ও পুষ্টি উপাদান
১. শষ্যজাতীয় খাবার
ভাত, গম, যব, বার্লি, মুড়ি, চিড়া, ময়দা, আটা, ভুট্টা, খই ইত্যাদি মূলত শক্তি জোগায়। এছাড়া কিছু প্রোটিন, সামান্য ফ্যাট, ভিটামিন-বি১, বি২, ফলিক অ্যাসিড ও খাদ্যের আঁশ পাওয়া যায়।
২. ডাল ও বীজজাতীয় খাবার
মশুর, মটর, অড়হর, মাষকলাই, ছোলা, মুগ ইত্যাদি ডাল ও শিমের দানা, কুমড়ার দানা, রাজমা (কিডনি বিন) ইত্যাদি। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস। এর সঙ্গে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি পাওয়া যায়।
৩. শাকজাতীয় খাবার
পালং, পুঁই, কলমি, সজনে, লালশাক, মেথিজাতীয় দেশি শাকপাতা, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, লেটুস, বাঁধাকপি ইত্যাদি। পাওয়া যায়– ক্যারোটিন, ভিটামিন বি২, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে।
৪. অন্যান্য সবজি
গাজর, বেগুন, ঢেঁড়স, ক্যাপসিকাম, পটল, শালগম, মুলা, ফুলকপি, ব্রকলি, কুমড়া ইত্যাদি। পাওয়া যায়– ভিটামিন এ, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে-এর উৎস। কয়েক ধরনের মিনারেলও পাওয়া যায়।
৫. ফল ও ফলজাতীয়
আম, জাম, পেয়ারা, পেঁপে, লেবু, কমলা, টমেটো, আমলকি, তরমুজ, বাঙ্গি, ফুটি, কাঁঠাল, জামরুল ইত্যাদি। এসবে আছে প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলের সমারোহ।
৬. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, পনির, ছানা, দই, দুধের তৈরি খাবার যেমন পায়েশ, সেমাই ইত্যাদি। প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর উৎস।
৭. মুরগি, গরু, খাসি, ডিম, কলিজা, মিঠা পানির ও সমুদ্রের মাছ, পায়া ইত্যাদি।
প্রাণিজ প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস। পাশাপাশি জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম এবং আয়রনও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে।
৮. ফ্যাটজাতীয়
মাখন, ঘি, বাটার অয়েল, সয়াবিন তেল, সর্ষের তেল, জলপাই তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। শক্তিবর্ধক। ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি ও ভিটামিন কে পাওয়া যায়।
৯. চিনি ও মধুজাতীয়
চিনি, মধু ও গুড় ইত্যাদি। মূলত শক্তি পাওয়া যায়। তবে গুড় ও মধু কিছু মিনারেলেরও উৎস।
উপরের এই খাবারের ভাগগুলো থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু ‘সার্ভিং’ বা ‘পরিবেশন’ খাবার গ্রহণ করা উচিত আমাদের সবার।
১. যেমন শষ্যজাতীয় খাবার সারাদিনে ৬ থেকে ১০ সার্ভিংয়ের বেশি গ্রহণ করা ঠিক নয়। শষ্যজাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে এক সার্ভিং ভাতের পরিমাণ বলতে আধাকাপ ভাত বোঝায়।
২. ডাল ও বীজজাতীয় খাবার দিনে অন্তত দুই সার্ভিং নেওয়া আবশ্যক। এক সার্ভিং পরিমাণ বলতে এক কাপ মাঝারি ঘন ডালকে বোঝায়।
৩. আধা কাপ রান্না করা শাক মানে এক সার্ভিং। প্রতিদিন একজন ব্যক্তির দুই সার্ভিং, অর্থাৎ এক কাপ রান্না করা শাক বা পাতাজাতীয় খাবার গ্রহণ করা জরুরি।
৪. সুস্থ ও কর্মক্ষম মানুষের জন্য অন্যান্য সবজিও দিনে অন্তত দুই সার্ভিং খাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
৫. মাছ, মাংস, ফল, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের ভাগ থেকেও প্রতিদিন দুই সার্ভিং করে খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। ৫০-৬০ গ্রাম ওজনের মাছ বা মাংস হল এক সার্ভিং। ছোট একটা আপেল বা কমলা বা অর্ধেকটা আম বলতে এক সার্ভিং বোঝায়। দুই সার্ভিং দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারের চাহিদা পূরণ হয় দুই কাপ দুধ বা দই থেকে।
৬. ফ্যাট আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি দরকারি পুষ্টি উপাদান। দিনে তিন থেকে চার সার্ভিংয়ের সমপরিমাণ ফ্যাট আমাদের প্রয়োজন। এক সার্ভিং ফ্যাটের চাহিদা ১৫ গ্রাম কাঠবাদাম বা দুই চা-চামচ পরিমাণ তেল থেকেই পূরণ করা সম্ভব।
৭. চিনি, গুড় বা মধু আলাদাভাবে খুব বেশি প্রয়োজন নেই। রান্না বা বিভিন্ন খাবারে ব্যবহূত পরিমাণ থেকেই তা পূরণ হয়ে যায়। মনে রাখা দরকার, সারা দিনে এক থেকে দেড় চামচ পরিমাণ চিনি বা গুড় আমাদের এক দিনের চাহিদা খুব ভালোভাবে পূরণ করতে পারে।