বর্তমানে প্রায় সকল শিক্ষার্থীই স্বপ্ন দেখে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়ার। এর মধ্যে কেউ কেউ চায় দেশের বাইরে গিয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা সরাসরি পি এইচ ডি বা ডক্টরেট ডিগ্রী গ্রহণ করতে।বিদেশে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করছেন তারা কিভাবে আবেদন করেছেন? কি প্রক্রিয়া অনুসরন করেছেন, তা জানতে চান? কোন দেশগুলো স্কলারশিপ দিয়ে থাকে? উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষর্থীদের জন্য প্রথম পাঁচটি পছন্দের দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, মালেয়শিয়া, অস্ট্রেলিয়া,জার্মানি এবং কানাডা। অনেক দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃত্তি প্রদান করে থাকে। হাংগেরি, চায়না, জাপান কিংবা কমনওয়েলথ স্কলারশিপের মতো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বৃত্তিগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর মাধ্যমে আবেদন করা যায়।
স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে পড়াশোনা করতে আগ্রহী এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলাদেশে দিনদিন বাড়লেও, দক্ষিন এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় তা অনেক কম। এর একটি বড় কারন আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনার অভাব। এই প্রক্রিয়ায় সম্পর্কে সচ্ছ ধারনা থাকলে আপনি কোনো এজেন্সির সাহায্য ছাড়াই নিজের চেস্টায় একটি ভালো বৃত্তি পেতে পারেন।
বিদেশে স্কলারশিপের জন্য কিরকম যোগ্যতার প্রয়োজন হয়?
একেকদেশে বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার ধরন একেকরকম। তাই প্রথমেই জেনে নিতে হবে কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির জন্য আপনি আবেদন করতে চান। এক্ষেত্রে আপনার বড় তথ্যকেন্দ্র হতে পারে বিভিন্ন দেশের অফিসিয়াল ওয়বেসাইট।
নানা দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস গুলোর ওয়েবসাইটেও বিভিন্নদেশের প্রতিবছরের বৃত্তির তথ্য দেয়া থাকে। আপনি চাইলে সরাসরি এসব দুতাবাসে যোগাযোগ করেও সেসব দেশের রাষ্ট্রীয় বৃত্তিগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া যায়।
প্রত্যেকটি স্কলারশিপের জন্যই আবেদন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ডেডলাইন থাকে। তাই আগে থেকেই আপনার প্রয়োজনের কাগজপত্র প্রস্তুত থাকাটা বাঞ্চনীয়।
এতে করে আপনার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আবেদন সম্পন্ন করতে সুবিধা হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
মেয়াদসম্পন্ন পাসপোর্ট, সকল পরীক্ষার সনদ, ভাষাগত দক্ষতার সনদ অনেক দেশেই এসব কাগজের নোটারি পেপার চায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে নোটারি করার প্রয়োজন নেই।
কিসের ভিত্তিতে স্কলারশিপ দেওয়া হয়?
বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে নিচের ব্যপারগুলো খেয়াল রাখতে হবে।
প্রথমত, যে দেশে আপনি বৃত্তির জন্য আবেদন করছেন, সে দেশের ভাষা জানা থাকলে বৃত্তি পাওয়া তুলনামুলকভাবে সহজ হবে।
IELTS, TOEFL এ ভাল একটা মার্কস আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
ইউরোপেরর বিভিন্ন দেশ যেমন জার্মানি বা ফ্রান্সের ক্ষেত্রে ওইদেশের ভাষা সম্পর্কে ভালো একটা ধারনা এবং ভাষাগত পরীক্ষায় ন্যুনতম স্কোর অর্জন করতে হবে।
এমন নয় যে বাইরের দেশের বৃত্তিগুলো কেবল রোলনাম্বার এক বা দুই এরা পায়। আপনি মোটামুটি পর্যায়ের স্টুডেন্ট হলেও মিডিয়াম লেভেলের জিপিএ/সি জিপিএ দিয়ে বৃত্তি পাবার অনেক চান্স থাকবে আপনার জন্য।
তবে সিজিপি যতো ভালো রাখা যায় ততোই সম্ভবনা বাড়বে বৃত্তি পাবার ক্ষেত্রে।
একাডেমিকের বাইরের জগতটাও গুরুত্বপূর্ণ
একাডেমিক ব্যপারগুলো ছাড়াও স্কলারশিপ পাবার জন্য অনেককিছু বিষয় আছে। সেটা হতে পারে নিজের পড়াশোনার বাইরে এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটিজ।
খেলাধুলা, অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন সেবামুলক সংগঠনে কাজ করা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
পড়াশোনার পাশাপাশি কোনো গঠনমুলক কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করাটাও খুব গুরত্বপুর্ন একটা ব্যপার।
বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুথিগত বিদ্যায় বিশ্বাসি না। আপনার ওভার অল পার্ফর্মেন্স তারা দেখবে। এসব ব্যপার তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কাজের অঅভিজ্ঞতা বা পাবলিকেশন্স ঃ
আপনি যেই বিষয়ে পড়াশোনা করছেন, সে বিষয়ে আপনার কোনো কাজের অভিজ্ঞতা কিংবা পাবলিকেশনস আছে কি? এটা আপনার বৃত্তি পাবার সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়িয়ে দিবে।
স্টেটমেন্ট অফ পার্পাস (SOP)
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই বৃত্তি পাবার জন্য স্টেটমেন্ট অব পারপার(SOP) অর্থাৎ কেন আপনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান সেটা সম্পর্কে সুন্দর একটা কনসেপ্ট পেতে চাইবে।
আপনার লেখার মাধ্যমে আপনাকে তুলে ধরতে হবে, কেন আপনি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান। আপনার প্ল্যন কি? আপনাকে কেন স্কলারশিপ দেয়া উচিত।
আপনার স্পেশালিটি কি? এই ব্যপারগুলো তুলে ধরবেন। অর্থাৎ এটা একরকমের চিঠি বলতে পারেন।
এই চিঠির মাধ্যমেই ওনাদেরকে কনভিন্স করতে হবে যে, আপনি তাদের স্কলারশিপের জন্য রাইটফিট!
যারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কলারশিপ পেয়েছেন, তারা SOP লেখার ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভ বা সৃজনশীল হবার জন্য বলেছেন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই লেটার লেখার জন্য স্যম্পল বা নমুনা দেয়া থাকে।
হুবুহু সেই চিঠি কপি না করে, আপনার নিজের কাজের অভিজ্ঞতা, পাবলিকেশন, আপনার স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং আপনি বিশ্ববিদ্যালয়কে কিভাবে হেল্প করতে পারেন বা কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভুমিকা রাখতে পারেন সেটা সম্পর্কে একটা স্পস্ট ধারনা দেবার চেস্টা করবেন SOP তে।
রিকমেন্ডেশন লেটারঃ
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই স্কলারশিপএর জনহ আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রিকমেন্ডেশন লেটারের দরকার হয়। এই লেটারের ভাষা যদি আট দশজন আবেদনকারির মতোই হয়, তবে বৃত্তি পাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই আপনি যেই শিক্ষকের অধীনে পড়াশোনা করেছেন, তাকে যথেষ্ট সময় দিয়ে একটি রিকমেন্ডেশন লেটার লিখে নিন।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%89%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%b6/
পরিকল্পনা ও গবেষণা করুনঃ
আপনার মতো হাজারো শিক্ষার্থী বৃত্তির জন্য আবেদন করবে। তাই আবেদনেত প্রতিটি ধাপে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগান। আপনি যতো ভালোভাবে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইতিহাস, ফান্ডিং, নিজের সাবজেক্ট সম্পর্কে প্ল্যন ইত্যাদি নিয়ে ভালোভাবে জানবেন, ততোই আপনার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে বাড়তে থাকবে। তাই ভালোভাবে সময় নিয়ে গুছিয়ে পরিকল্পনা করুন।