আরও একবার নকআউট পর্বে বিদায়। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ আর ২০১৭ সালের কনফেডারেশন্স কাপের পর জার্মানির ট্রফি ক্যাবিনেটে যুক্ত হয়নি নতুন কোনো শিরোপা। স্টুটগার্টে সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন আরেকবার দলকে সেমিফাইনালে দেখার আশায়। কিন্তু মিকেল মেরিনোর অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটের গোলে জার্মানির স্বপ্নভঙ্গ করে স্পেন।
যদিও ম্যাচে জার্মানির হার আর টনি ক্রুসের বিদায়ের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে জার্মানির পেনাল্টি না পাওয়ার ঘটনা। ম্যাচের ১০৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন জার্মান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জামাল মুসিয়ালা। দুর্দান্ত সেই শট দিক পরিবর্তন করে স্প্যানিশ লেফটব্যাক মার্ক কুকুরেয়ার হাতে লেগে।
মুসিয়ালার শট কুকুরেয়ার হাতে লেগেছে সেটা নিশ্চিত ছিল। তবুও রেফারি অ্যান্থনি টেইলর পেনাল্টি আবেদন নাকচ করেছেন। ভিএআর রুম থেকে রেফারি স্টুয়ার্ট অ্যাটওয়েলও ব্যাপারটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পেনাল্টি না দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। স্বাভাবিকভাবেই এমন এক ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে ঠিক কী কারণে স্পটকিক পেল না জার্মানি। যে সময়ে পেনাল্টি পেলে হয়ত বদলে যেতে পারত ম্যাচের ফল।
কিন্তু দুই রেফারিই নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন অটল। জার্মানিও পেনাল্টি পায়নি। ম্যাচটায় তাদের লিডও নেয়া হয়নি আর। যদিও শেষ পর্যন্ত জানা গেল উয়েফার নির্ধারিত নিয়মের কারণেই পেনাল্টি সিদ্ধান্ত দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন ভিএআর রেফারি। এমন ব্যাখ্যা অবশ্য খুব একটা খুশি মনে গ্রহণ করেননি জার্মান কোচ হুলিয়ান নাগেলসম্যান।
উয়েফার নিয়ম কী বলছে?
উয়েফার নিয়ম অনুযায়ী, হাত যদি উপরে তোলা অবস্থায় থাকে আর সেটা বলের গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে রেফারি কিংবা ভিএআর সেটাকে পেনাল্টি হিসেবে বিবেচনা করবে। তবে কুকুরেল্লার ক্ষেত্রে অবশ্য ঘটেছে ভিন্ন কাহিনী। বল যখন স্প্যানিশ এই ডিফেন্ডারের হাতে গিয়ে লাগে তখন তার হাতটি নিচের দিকে নামানো ছিলো। আর ঠিক এমনই এক সিচুয়েশনের ব্যাপারে আগে থেকেই ট্রেনিং নিয়ে রেখেছিলো উয়েফার রেফারিরা।
এখানে অবশ্য আরও একটি দিক রয়েছে আলোচনার জন্য। একজন ডিফেন্ডার দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বল তাঁর শরীরের পাশ দিয়ে হাতে লাগলে এবং সেই হাত যদি খাড়া বা উলম্ব অবস্থানে থাকে ও হাতটি শরীরের (বডিলাইন) পেছনে থাকলে সেটি পেনাল্টি দেওয়া উচিত হবে না। কুকুরেল্লার হাত কিন্তু তাঁর বডিলাইনের পেছনেই ছিল।
এছড়া ইউরো শুরুর আগে উয়েফার রেফারিদের প্রধান রোবের্তো রোসেত্তি কিছু নির্দিষ্ট উদাহরণ দেখিয়ে পেনাল্টির ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছিলেন। ডিফেন্ডারের হাত নিচে থাকা অবস্থায় হ্যান্ডবল হলে তাতে পেনাল্টি না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
হারের পর জার্মান কোচ হুলিয়ান নাগেলসম্যানের আক্ষেপের বড় অংশ জুড়েই ছিল পেনাল্টি না পাওয়া। , ‘এটা নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। তবে লক্ষ্য কী ছিল (বলের ও হ্যান্ডবল করেছেন যিনি), সেটি মূল্যায়ন করলে ভালো হতো। ধরুন কেউ গ্যালারির দিকে শট নিল এবং বল কারও হাতে লাগল, সেটি কিন্তু পেনাল্টি নয়। ফুটবলে এটি সম্ভব না। কিন্তু বল যখন পরিষ্কারভাবে গোলের পথে ছিল এবং হাতে লাগল, তখন লক্ষ্য নিয়ে কথা বলা অর্থহীন।’
এমনকি জার্মান কোচ এমন পরিস্থিতির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেয়ার কথাও সামনে টেনে এনেছেন, ‘কফি এনে দেওয়ার জন্য ৫০টি রোবট আছে। তাই ক্রস, শট কোন দিকে যাচ্ছে, সেসব বিচারের জন্যও এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) থাকা উচিত। এটা বেশ সহজ। শট কোন দিকে যাচ্ছিল, সেটা সত্যিই দেখতে হবে। তবে আমরা শুধু এ কারণেই ম্যাচটি হারিনি।’