নব্বই দশকের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পোস্টার নিয়ে বসতেন হকাররা। সেখানে বিক্রি হতো ভিউকার্ড। উৎসব-পার্বণে মেলা বসত। সেসব মেলায় কিছু দোকান থাকত, যেখানে তারকাদের মুখাবয়ব-সমৃদ্ধ পোস্টার বিক্রি হতো। সেসব পোস্টার-ভিউকার্ডে একটা মুখ খুব দেখা যেত, তিনি বলিউড অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। ছেলেদের মানিব্যাগে, আয়নার পেছনে, সেলুনে কিংবা মেলায় অথবা ভিসিআরের ক্যাসেটের কভারে থাকত তার লাস্যময়ী ছবি।
দিব্যা ভারতী এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। অভিমানে ঝরে যাওয়া ফুলের নাম। তিন বছরের অভিনয়জীবনেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দিব্যা জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র তিন বছরের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার রেখে ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল ১৯ বছর বয়সে অকালেই চলে গিয়েছিলেন দিব্যা। দিব্যা ভারতীর মৃত্যু আজও এক অজানা রহস্য। শুধুই কি দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে ছিল কোনো ষড়যন্ত্র? উত্তর মেলেনি আজও।
নব্বই দশকের ভিসিআর আর পোস্টারের সে যুগে বলিউডে নারী তারকার নতুন আইকন ছিলেন দিব্যা ভারতী। সে যুগ শেষ হয়েছে। এসেছে অ্যান্ড্রয়েড-আইফোনের যুগ। টিকটক, লাইকির যুগ। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এখন তারকাদের বড় ‘ঠিকানা’। এই যুগে দিব্যা নেই। তবে আজও দারুণ স্পষ্ট দিব্যার নামটি।
বাবা ওমপ্রকাশ ভারতী ছিলেন জীবনবিমার কর্মী। মা মিতা ভারতী গৃহিণী। ছোট ভাই কুনাল ও সৎবোন পুনমের সঙ্গে মুম্বাইয়ে বেড়ে ওঠা দিব্যার। ছোট থেকেই হিন্দি, মারাঠি আর ইংরেজিতে স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন। পড়তেন মানেকজি কুপার হাইস্কুলে। তবে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার পর নবম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা করেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর সময় পাঁচ থেকে ছয়টি ছবি অসমাপ্ত ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজকদের নতুন নায়িকাদের নিয়ে নতুন করে শুটিং করে ছবি শেষ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ‘লাডলা’, যা নতুন করে শুটিং করা হয় শ্রীদেবীকে নিয়ে। রয়েছে, ‘মোহরা’, ‘কর্তব্য’, ‘বিজয়পথ’, ‘দিলওয়ালে’ ও ‘আন্দোলন’। আরও কয়েকটি বড় ব্যানারের ছবির কাজও বন্ধ হয়ে যায়, যেগুলোয় অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত ছিল।
বলিউড বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, মাত্র তিন বছরে যে অভিনেত্রী সাফল্যের এই উচ্চতায় উঠতে পারেন, বেঁচে থাকলে হয়তো আজকের দিনে তিনি মাধুরী অথবা শ্রীদেবীর মতোই হয়ে উঠতেন বলিউডের আরেক কিংবদন্তি নায়িকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিব্যার অকালমৃত্যু না হলে শ্রীদেবী, জুহি ও মাধুরী দীক্ষিতদের হিসাব-নিকাশটা অন্য রকম হতো।