সময় অত্যন্ত মূল্যবান। সময় আর অর্থের ব্যাপারে একটি মৌলিক সত্য হলো দুটিই আমাদের খুব বেশি প্রয়োজন। এত বেশি প্রয়োজন যে সে চাহিদা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। প্রায় সবাই আমরা মনে করি আরও অর্থ পাওয়া গেলে ভালো হতো। আরও একটু সময় যদি পাওয়া যেত তাহলে কাজটা সুন্দরভাবে করা যেত।
আসলে সময়ের অভাবের কারণে কাজ সুচারুরূপে করা যায় না। পরিবারকে নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠা যায় না, নিজেকে নিয়ে যে নিমগ্ন থাকব তাও হয়ে ওঠে না। আমাদের এই প্রজন্মের মাঝেই সময়ের অভাবজনিত হাহাকার সবচেয়ে বেশি।
হাহাকার যতই থাকুক এই ব্যাপারে সময় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে গেলে আপনার জীবন এত বেশি যান্ত্রিক হয়ে উঠবে যে আপনি হাঁপিয়ে উঠবেন। আপনি স্ট্রেস বা মানসিক চাপে আক্রান্ত হবেন। অত্যন্ত নিখুঁত ব্যক্তিগত কর্ম নির্ঘণ্ট আপনার উদ্বেগকেই শুধু বাড়িয়ে দেবে। তাই নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্যে সময়ের উপর আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। নিম্নের প্রণালীগুলো অনুসরণ করলে সময়ের উপর কর্মতালিকার নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে আপনার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রয়োজন নিরূপণ করুন তারপর অর্জনের চেষ্টা করুন
সময় বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মতালিকা প্রণয়ন। প্রতি মুহূর্তেই হাজারটি ভিন্ন ধরনের কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোন কাজটি বিশেষভাবে করা প্রয়োজন তা নিরূপণ করতে পারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সুপারম্যানের ধারণা ত্যাগ করুন
আমরা সবকিছুই নিখুঁত সুন্দরভাবে করতে চাই। আর বড় কিছু করার তাড়না আমাদের স্নায়ুর উপর এক অবর্ণনীয় চাপ সৃষ্টি করে। তবে বড় কিছু করতে চাওয়া ও বড় কিছু করা এর মধ্যে অনেক তফাত রয়েছে। বড় কিছু করতে গেলে ছোটখাট অনেক কিছুকে এড়িয়ে যেতে হয়।
বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে উঠুন
কাজের ঝামেলা কমানোর জন্যে আপনার জমে থাকা কাজগুলোকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলুন। একটি হচ্ছে জরুরি আরেকটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি গ্রুপে অনেক তুচ্ছ বিষয়ও থাকতে পারে। যেমন বসের চিৎকার, টেলিফোনের ঘণ্টাধ্বনি এ ধরনের ব্যাপার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, তুচ্ছ বিষয় নিয়েই আমরা বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি মন দিলে দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যায় এবং সময়ও অনেক বেঁচে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্যের জন্যে সময় বাঁচান
সবসময় দেখবেন জরুরি কাজ করতে করতে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তের প্রয়োজন পূরণ করার পর দূরপ্রসারী কাজের জন্যে সময় পাওয়া যাচ্ছে না। দূরপ্রসারী লক্ষ্যের জন্যে প্রতিদিন আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা সময় ব্যয় করুন। পরবর্তী জীবনে দেখবেন এই আধঘণ্টা-একঘণ্টা সময়ই আপনাকে বড় ধরনের তৃপ্তি দিচ্ছে।
সংখ্যার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার ঠিক করুন
আপনার যা যা করা প্রয়োজন তার তালিকা প্রস্তুত করুন। তারপর গুরুত্বের ভিত্তিতে এক থেকে দশ পর্যন্ত নম্বর দিন। এক হচ্ছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ, আর দশ হচ্ছে সর্বনিম্ন। এরপর তালিকার প্রতিটি বিষয়কে জরুরি ভিত্তিতে নাম্বার দিন। এক হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি, আর তিন হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম জরুরি। এরপর গুরুত্ব ও জরুরি এই দুই-এর সংখ্যাকে পূরণ করুন। যে কাজের সংখ্যা সবচেয়ে কম তাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বলে বিবেচনা করুন।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%ad%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b2-%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%a1%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%a8/
অগ্রাধিকার নিরূপণের কৌশল
অগ্রাধিকার নিরূপণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে প্রতিদিন দিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত করা। সারাদিন কি করতে হবে লিখে ফেলুন। তারপর সবচেয়ে জরুরি কাজগুলোর পাশে ‘ক’ চিহ্ন দিন। এরপর এই কাজটি করতে কত সময় লাগতে পারে তা অনুমান করে দেখুন। যদি দেখেন সবগুলো কাজ করতে আট ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে তাহলে তালিকা সংক্ষেপ করুন। সারাদিন অনুসারে কাজগুলো করতে চেষ্টা করুন।