মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন অথচ সিম কার্ড চেনেন না—এমন মানুষ খুঁজেই পাওয়া কঠিন। বলা যায় মোবাইল ফোনের প্রাণ সিম কার্ড। এত কাজের এই ছোট চিপ সম্পর্কে আমরা কতটাই জানি? অথচ এই ছোট কার্ডের মধ্যে লুকিয়ে থাকে কথা বলার চাবিকাঠি।
সিম কার্ড কী?
সিম কার্ড হল এক ধরনের ছোট স্মার্ট কার্ড। এর সঙ্গে একটি চিপ লাগানো আছে। এটি ব্যবহার করতে হলে মোবাইল ফোনে জিএসএম (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল) বসাতে হবে। এই জিএসএম মোবাইল ফোনে গ্রাহকদের জন্য ডেটা সঞ্চয় করে। সিম কার্ডে সংরক্ষিত ডেটার মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীর পরিচয়, ঠিকানা, ফোন নম্বর, সেফটি কি, নেটওয়ার্ক পারমিশন, ব্যক্তিগত ডেটা, মোবাইল যোগাযোগের তালিকা ও পড়ার মেসেজ।
সিম কার্ড কে আবিষ্কার করেছেন?
সিম কার্ড বা সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিফিকেশন মডিউল (এসআইএম) প্রথম আবিষ্কার করে একটি জার্মান প্রতিষ্ঠান। তবে এ প্রতিষ্ঠানের কে বা কারা সরাসরি যুগান্তকারী এই আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত তা জানা যায়নি। তার চেয়েও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানটি এই আবিষ্কার নিজে ব্যবহার না করে বরং বিক্রি করেছিল ফিনল্যান্ডের এক প্রতিষ্ঠানকে।
বিশ্বে প্রথম যে সিম কার্ড আবিষ্কার হয়, তার আকৃতি আজকের আধুনিক সিম কার্ডের মতো ছিল না। ১৯৯১ সালে প্রথম জার্মান প্রতিষ্ঠান ‘জিৎসেক অ্যান্ড ডেভ্রিয়েন্ট’ সিম কার্ড আবিষ্কার করেন। প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর ছিল জার্মানির মিউনিখ শহরে।
তবে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য বা সিম কার্ডের বাজারজাতের দিকে না গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের এই আবিষ্কার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। ফিনল্যান্ডের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান রেডিওলিনজার কাছে আবিষ্কৃত প্রায় ৩০০টি সিম কার্ড বিক্রি করে প্রথম তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান জিৎসেক অ্যান্ড ডেভ্রিয়েন্ট।
প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত সিম কার্ডটি দেখতে অনেকটা আজকের যুগের এটিএম কার্ডের মতো ছিল। ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আধুনিকতার প্রযুক্তিছোঁয়ায় আজকের স্মার্ট সিম কার্ড বাজারে দেখতে পাওয়া যায়।
মোবাইল ফোনে প্রথম মিনি সিম কার্ড ব্যবহার করা হয় ১৯৯৬ সালে। পরবর্তী সময়ে আরও ছোট আকারে সিম কার্ডের সংস্করণ করা হয়। ২০০৩ সালে এই সংস্করণের নাম দেয়া হয় মাইক্রো সিম।
মাইক্রো সিম প্রথম মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হয় ২০১০ সালে। মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থা অ্যাপলের আইফোনে এই সিম কার্ড ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রো সিমের পর আসে আরও ছোট এবং আরও আধুনিক ন্যানো সিম কার্ড। ২০১৪ সালের পর প্রায় সব স্মার্টফোনেই এই সিম কার্ড ব্যবহার করা হয়।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের তথ্যমতে, পুরো বিশ্বে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডিভাইসে এই সিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে যোগাযোগের এক বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কার্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইসিএমএ) বরাতে উইকিপিডিয়া জানায় শুধু ২০১৬ সালেই পুরো বিশ্বে ৫.৪ বিলিয়ন সিম কার্ড তৈরি করা হয় এবং ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সিম কার্ডে কী কী তথ্য থাকে?
ব্যবহারকারীর কাস্টমার আইডি সম্পর্কিত তথ্যও সিম কার্ডে থাকে, আপনার মোবাইল ফোনে নয়। তাই আপনি বিভিন্ন জিএসএম মোবাইল ফোনেও আপনার সিম ব্যবহার করতে পারেন। সিম কার্ডটি কেবল জিএসএম মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা যাবে। একটি সিডিএমএ (কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস) মোবাইল হওয়ায় এটি কেবল নতুন ধরনের এলটিই এনাবল হ্যান্ডসেটে ব্যবহার করা যাবে।
সিম কার্ডের পূর্ণরূপ
সিম কার্ডের পূর্ণরূপ হল সাবস্ক্রাইবার আইডেনটিটি মডিউল বা সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিফিকেশন মডিউল।
সিম কার্ড কীভাবে তৈরি করা হয়?
সিম কার্ড তৈরিতে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। প্রথমে প্লাস্টিকের একটি ছোট টুকরা তৈরি করে তাতে সিলিকন ও একটি চিপ লাগানো হয়। এর পরে এটি একটি কোডের মাধ্যমে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক যেমন গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত থাকে। তারপর এই সিমটি মোবাইলে রাখার সঙ্গে সঙ্গেই এর নেটওয়ার্কে কানেক্ট হয়ে যায়।