বাঙালির কাছে তেতো বলতে মূলত উচ্ছে, করলা, পাটশাক, নিমপাতা, সজনে ডাঁটা বা ফুল। এ ছাড়াও আছে মেথি, কালমেঘ বা থানকুনি। আছে ব্রাহ্মি আর হেলেংচাও। আর এদের নাম শুনলেই অনেকের চোখে, ঠোঁটে বিরক্তি আসে। মাছ-মাংস, মিষ্টি ছেড়ে কে-ই বা তেতো খেতে চায়। কিন্তু তেতোর অনেক গুণ। তা জানলে মন বদলাবে অনেকেরই।
প্রতিদিনের খাবারে না হলেও অন্তত সপ্তাহে চারদিন তেতো খাওয়া দরকার বলেই জানান চিকিৎসকেরা। তেতো খাবারের আরও কিছু গুণগুণ জানলে অবাক হবেন আপনিও।
জেনে নিন তেতো খাবারে কী কী উপকারিতা রয়েছে—
মেথি: রান্নায় নিয়মিত মেথি ব্যবহার করুন। মেথি ফোঁড়ন দিয়ে আলুর চচ্চড়ি যদি কোনও খেয়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন মেথির স্বাদ সামান্য তিতকুটে হলেও আলুর চচ্চড়ির স্বাদ বিশ্বের সেরা। পাঁচ ফোঁড়নেও মেথি থাকে। সুতরাং তা থেকেও খাওয়া যায়। আবার রাতে মেথি ভিজিয়ে সকালে সেই জল খেলে শরীর ভালো থাকে। মেথি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি মশলা বা বীজ। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং সলিউবল ডায়টারি ফাইবার। নিয়মিত মেথি খেলে কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর হয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক থাকে। কোলেস্টরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে এই মেথি।
করলা: করলা স্বাদে তেতো। কিন্তু এর গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। করলার রস অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য আদর্শ। করলা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। প্রতিদিন একটি বা একাধিক করলা খেতে পারলে রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
পাট শাক: পাট গাছের কচি পাতাগুলোকে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এই শাকের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাট, লাইকোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। লাইকোপিন শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। পাট শাকে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম, যা হাড় গঠনে সহায়োক এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। পাট শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ব্রাহ্মী শাক: তিতা স্বাদের এই শাকের রয়েছে বিশেষ কিছু ওষধি গুণ। স্বরভঙ্গ, বসন্ত রোগ, শিশুদের ঠাণ্ডা-কাশিতে এ শাক খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। এই শাক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ব্রাহ্মী শাক খেলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।
গ্রিন টি: বিজ্ঞাপনে নায়িকা যখন গ্রিন টি খেয়ে মিষ্টি মুখে হাসি হাসেন তখন মনে হয় যেন কতই সুস্বাদু এই চা। কিন্তু বাস্তবটা আলাদা। গ্রিন টি বেজায় তেতো আর কষালো স্বাদের হয়। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ অসাধারণ। নিয়মিত গ্রিন টি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ওজন কমে। গ্রিন টি-তে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং পলিফেনোল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
শাক: নিয়মিত পাতে রাখতে পারেন পালং শাক, সর্ষের শাক। পালং শাক সুস্বাদু। কিন্তু সর্ষে শাকে সামান্য তিতকুটে স্বাদ আছে। যদিও রান্নার পর খেতে ভালোই লাগে। এগুলি আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং মিনারেলে পরিপূর্ণ। খেলে শরীর ফিট থাকে।
সজনে ফুল: সজনে ডাটার মতোই উপকারী সজনে ফুল। তবে সারাবছর এই ফুল পাওয়া যায়না। বসন্তকালে দেখা পাওয়া যায় সজনে ফুলের। তাই সে সময় এই ফুল খেতে হবে নিয়মিত। সজনে ফুল খেলে দূরে থাকে অনেক রকম অসুখ। সর্দি-জ্বর, ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন, বসন্ত ইত্যাদি রোগ দূরে রাখতে পারে এই ফুল। এতে আছে প্রচুর পটাশিয়াম ও ক্যালশিয়াম। প্রসূতি মায়ের শরীরের জন্য উপকারী এই ফুল।
ডার্ক চকোলেট: নামে চকোলেট থাকলেও এটি আদতে তিতকুটে স্বাদের হয়। কিন্তু সাধারণ সুস্বাদু চকোলেটের থেকে হাজার গুণ ভালো। যাঁরা চকোলেট খেতে ভালোবাসেন অথচ ডায়াবিটিসের কারণে খেতে পারেন না তাঁরা কিন্তু অনায়াসেই ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকোলেটে থাকে জিঙ্ক, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পলিফেনোল এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। রক্ত চলাচলে এটি এগুলি সাহায্য করে। শরীরে প্রদাহ কমায়।
তেলকুচা পাতা: শাক হিসেবে খেতে পারেন তেলকুচা পাতা। এই পাতার রস আমাদের মাথা ঠান্ডা রাখতেও ব্যবহার করা হয়। তেলকুচা পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই পাতা খেতে পারেন। তবে তেলকুচা পাতা তেলে ভেজে খেলে এর পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন ঝোল রান্না করে খেতে। বাড়ির আশেপাশে কিংবা বাজারে মিলবে এই উপকারী পাতা।
তেতো খাবার: ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রতি দিন খাবারের পাতে রাখুন তেতো। হয় নিম পাতা, নয়তো উচ্ছে। এ সবের অ্যান্টিভাইরাল উপাদান শরীরকে মজবুত রাখে ও এই সময় বাতাসে উড়ে বেড়ানো রোগজীবাণুর সঙ্গে্ লড়তে সাহায্য করে।