রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে হেরে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। তবে অফসাইডে বাভারিয়ানদের একটি গোল বাতিল নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে। যা নিয়ে রেফারির বিরুদ্ধে ক্রমাগত মন্তব্য করে যাচ্ছেন বায়ার্নের কোচ ও খেলোয়াড়রা। আর তাতেই কপাল পুড়তে পারে জার্মান জায়ান্টদের। রেফারির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর তা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে উয়েফার নীতিমালা লঙ্ঘন হতে পারে, এতে নিষিদ্ধ হতে পারে ক্লাবটি।
রিয়াল–বায়ার্ন ম্যাচের যোগ করা সময়ের ১৩তম মিনিট চলছিল, হোসেলুর ৩ মিনিটের ব্যবধানে করা ২ গোলে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে যায় ২-১ এ। ফলে রিয়ালের রক্ষণ ভেঙে গোল শোধে মরিয়া ছিল বায়ার্ন। পাল্টা আক্রমণে তারা একটা গোল পেয়েও যায়। নুসাই মাজরাউইয়ের কাছ থেকে বল পান টমাস মুলার। সেখান থেকে ভলিতে ম্যাথিয়াস ডি লিটের গোল। তবে বল জালে যাওয়ার আগেই অফসাউডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। খেলা বন্ধ করে দেন রিয়ালের খেলোয়াড়রা।
চোখের পলকে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনায় পরে ভিএআর চেকের অনুরোধ জানায় বায়ার্ন। যদিও রেফারি সিমোন মার্সিনিয়াক তাতে কান দেননি। ম্যাচ শেষে বায়ার্ন মিউনিখের ডিফেন্ডার ম্যাথিয়াস ডি লিট অবশ্য দাবি করেছেন অফসাইডে পতাকা তোলায় লাইনসম্যান তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। অফসাইডের পতাকা না তুললে হয়তো গোল করে বায়ার্নকে সমতায় ফেরাতে পারতেন ডি লিট। এমনকি রেফারির এমন সিদ্ধান্তে ‘প্রতারিত’ হওয়ার কথা জানান বায়ার্ন কোচ থমাস টুখেল।
গোল বাতিল নিয়ে রেফারির ওপর ক্ষুব্ধ বায়ার্ন, যা বলছে রিয়াল
এমন বিষয় নিয়ে উয়েফার নিয়ম কী বলছে, সেটিও জানা যাক। নিয়মে বলা হয়— মাঠে নেওয়া রেফারির কোনো সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয়, তবে ‘আইডেন্টিটি এরর’ ছাড়া। আইডেন্টিটি এরর বলতে ভুলক্রমে একজন খেলোয়াড়ের পরিবর্তে অন্য কেউ শাস্তি পেলে, সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবে উয়েফা। তাদের নীতিমালার ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে– শৃঙ্খলাজনিত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেবেন রেফারি। মাঠে রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং উয়েফার শৃঙ্খলা কমিটি সেটি রিভিউ করারও সুযোগ নেই। কেবল একজনের বদলে অন্য কারও বিরুদ্ধে ভুলক্রমে সিদ্ধান্ত গেলে সেটি উয়েফা বদলাতে পারবে।
স্প্যানিশ পত্রিকা মুন্দো দিপার্তিবো বলছে, যদি কাল রাতে কোচ টুখেল কিংবা কোনো বাভারিয়ান খেলোয়াড়ের মন্তব্য রেফারির জন্য অপমানমূলক কিংবা আচরণগত নীতিমালা লঙ্ঘন করে, সেটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে। সেটি হোক খেলা কিংবা খেলার বাইরের কোনো বিষয়ও, সেই আচরণ অনুচিত বলে ধরে নেবে উয়েফা। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে উয়েফা সিদ্ধান্তের ওপর। যদি সংস্থাটি টুখেল থেকে শুরু করে ডি লিট ও টমাস মুলারের মন্তব্য আমলে নেয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ইউরোপীয় ফুটবলের আচরণবিধির ১৫ নম্বর ধারায় এমন নিষেধাজ্ঞার সুযোগ রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে– ‘রেফারির প্রতি কোনো বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জন্য একটি দলকে প্রতিযোগিতামূলক দুটি ম্যাচ কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে।’ আরেকটি ধারায় বলা আছে– ‘রেফারির মানক্ষুণ্ন করে মন্তব্য করলে তিন ম্যাচ কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ হবে।’ তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে উয়েফার ওপর।
এদিকে, রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতী আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বায়ার্ন ডিফেন্ডার ডি লিট, ‘আমি এটা বলতে চাই না যে, রিয়ালের পক্ষেই সবসময় রেফারি থাকে। তবে আজ ওটা বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, অফসাইড নিশ্চিত না হলে…খেলা চালিয়ে যেতে হবে। আর শেষ মিনিটে এভাবে বাঁশি বাজানো, আমার মনে হয় এটা বড় ভুল। অফসাইড হয়েছে কি না, আমি জানি না, সেটা ভিএআর পরীক্ষা করতে পারে। কিন্তু এটা (অফসাইড) পরীক্ষা করে না দেখলে বুঝলেন কীভাবে? এটা লজ্জার।’
ডি লিটের মতো অতটা শান্তভাবে কথা বলেননি বায়ার্ন কোচ টুখেল। অভিযোগ এনেছেন ফুটবলীয় আইন ভঙ্গের, ‘এটা যাচ্ছেতাই। একেবারেই যা তা। আর নিশ্চিতভাবেই ফুটবল আইন ভঙ্গ করেছে। নিয়ম বলছে খেলা চালিয়ে যেতে হবে। প্রথম ভুল করেছে লাইন্সম্যান। পরের ভুলটা করেছে রেফারি।’
তিন বছর পর ছেলেকে নিয়ে প্রকাশ্যে নুসরাত, প্রতিক্রিয়ায় নেটিজেনরা যা বলছেন
ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে ক্ষোভ উগরে দেন মুলারও, ‘রেফারি ভিএআরের সাহায্য নেয়নি। তিনি এটা দেখার সুযোগও পাননি। এমন পরিস্থিতি খুব অদ্ভুত, এত দ্রুত বাঁশি বাজালেন! অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্ত। সাধারণত বাঁশি বাজানোর আগে তিন মিটার দৌড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়। জানি না আসলে কী ঘটেছে। দুঃখজনকভাবে মাদ্রিদে এটা প্রায়ই হয়। ২০১৭ সালেও আমাদের সঙ্গে এটা ঘটেছে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দুই গোল করেছিল…তবে সেটা ভিএআরের আগে।’