এই পৃথিবীতে একজন ধনী মানুষের মানসিকভাবে অসুখী থাকার চেয়ে খারাপ বোধহয় আর কিছু হতে পারে না। যদিও এর পেছনে বিশেষ কোন কারণ নেই, কিন্তু প্রতিদিনই আশেপাশে এই ধরনের উদাহরণ অহরহই চোখে পড়ে। প্রফেশনাল জীবনে সফল এমন অনেক মানুষই আছেন যাদের কাছে অর্থ বিত্ত সবই আছে। কিন্তু সেই তুলনায় তারা কেন যেন সুখী নন। যদি আর্থিক দিক থেকে আপনি সফল হওয়ার পরেও এভাবে অসুখী থাকেন, তবে তার প্রভাব আপনার জীবনের অন্যান্য ধাপগুলোতেও পড়বে।
আত্মতুষ্টির ব্যাপারটি আপনার মাঝে থাকা প্রয়োজন। কোনো কিছু করার পর সেই বিষয়ে যদি আপনার ভেতর থেকে সন্তুষ্টি না আসে তবে সফলতার মর্ম আপনি কখনোই বুঝবেন না। আর যদি আত্মসন্তুষ্টি নাইই আসে, তাহলে জীবনে অর্জনের মূল্য কী?
মানুষের সফলতা ও জীবনের লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা করার পর অনেক ধরনের সমাধানই বেরিয়েছে। কিন্তু ক্যারিয়ার কাউন্সেলররা সবকিছু যাচাই বাছাই করে তিনটি ব্যাপারের উপর জোর দিয়ে এসেছেন। আসলে সেগুলো ব্যাপার নয়, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
মানুষ তার কর্মজীবনে যেই ভুলটি বেশি করে থাকে তা হল পরিস্থিতি বিচার না করেই সিদ্ধান্ত নেয়া। এই ধরনের ভুল আপনার জীবনের লক্ষ্যকে বৃথা চেষ্টার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এমনকি আপনি আর্থিক তো বটেই, মানসিক দিক থেকেও ভেঙ্গে পড়তে পারেন। কিন্তু আপনি যদি ক্যারিয়ার শুরুর আগে তিনটি সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সাবধানতার সাথে নেন তাহলে একটি সুন্দর ক্যারিয়ারের অধিকারী হওয়া আপনার জন্য সময়ের ব্যাপার হয়েই দাঁড়াবে।
সিদ্ধান্ত ১ – কী করতে চান তা সাবধানতার সাথে নির্ধারণ করুন।
ক্যারিয়ার গড়ার শুরু থেকেই হাজারো ব্যাপার আপনাকে আকর্ষণ করবে। অতীত থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ, পুরো সময়টাতে ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলো থেকে আপনি সহজেই আপনার জন্য পছন্দের ক্যারিয়ারের রাস্তা নির্বাচন করতে পারেন। অতীতে কাউকে কোন বিষয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে দেখেছেন, চাইলে সেদিকে যেতে পারেন। বর্তমানে বিশেষ কোনো বিষয়ে সবাই উন্নত ক্যারিয়ার গড়ছে, সেদিকে দৃষ্টিপাত করতে পারেন। কিংবা ভবিষ্যৎ বিবেচনায় যদি আরো নতুন পথ খোলার সম্ভাবনা থাকে, তবে সেটাও বেছে নিতে পারেন।
মনে রাখবেন, এখন যে সিদ্ধান্তটি আপনি নেবেন, ঠিক অনুসারেই আপনার জীবনের লক্ষ্য এবং চলার ধরন নির্ধারিত হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের জীবনের দিকে একবার তাকাতে পারেন। চিন্তা করতে পারেন যে আপনার জীবনে আসলে কোন বিষয়টি, কোন ব্যাপারটি কিংবা কোন জিনিসটির অভাব রয়েছে। সেই অনুসারে চিন্তাভাবনা করতে পারেন।
তবে খেয়াল রাখা উচিত যে আপনি যে বিষয়ে বা যে পথে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছেন সেটা যাতে আপনার সামর্থ্যের মধ্যে হয়। সবার সামর্থ্য সমান হয় না, আপনার চাইতে বেশি সামর্থ্যের অধিকারী, (ধরা যাক আর্থিক ভাবে উন্নত) কারো জীবনের লক্ষ্যকে নিজের করে নিতে যাবেন না। পারিবারিক অবস্থা, আর্থিক সাপোর্ট, আপনার মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা এই সবকিছু বিচার করেই তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। কারণ আপনার সিদ্ধান্তকে আপনি যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন, তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
সিদ্ধান্ত ২ – আপনার পারিপার্শ্বিকতার অর্থ খুঁজে বের করুন।
আপনার চারপাশে যা ঘটছে, কিংবা ধরুন আপনার সাথেই যা ঘটছে, সেগুলোর আলাদা কোন অর্থ থাকে না। আপনি যে অর্থে ব্যাপারগুলোকে নেবেন, আপনার মস্তিষ্ক ঠিক সেভাবেই আপনাকে পরিচালনা করবে। অধিকাংশ সময়ই আমরা আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলোকে চলে যেতে দেই। কিন্তু এই ঘটনার পেছনের ব্যাখ্যা কিংবা কারণ খোঁজার জন্য সময় ব্যয় করি না।
তবে এগুলোর মাঝেও আপনার ক্যারিয়ারের জন্য কিছু বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেমন ধরুন, আপনার কিংবা পরিবারের সাথে খারাপ কিছু হল। কোন দূর্ঘটনা, স্বাস্থ্য বিষয়ক জটিলতা, কিংবা চাকরি হারানোর মত ঘটনা। এটাই কি আপনার জীবনের শেষ? নাকি আপনার জীবন মাত্র শুরু হচ্ছে এখান থেকে? কেউ যদি আপনাকে সবার সামনে আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে উপহাস করে, তাহলে সে কি আপনাকে ঘৃণা করে? নাকি আপনার ভালো চায়? আপনি যাতে সবকিছুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন সেটা চায়? আপনার জীবনের দূর্ঘটনার জন্য আপনি কি সৃষ্টিকর্তাকে দোষী বলবেন? নাকি আপনাকে ধৈর্য্য বাড়ানোর সুযোগ দানের জন্য তাকে ধন্যবাদ দেবেন?
এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর যখন বের করতে পারবেন, তখন আপনার পারিপার্শ্বিকতার অর্থ আপনি বুঝতে পারবেন। তবে আশেপাশে নয়, এই প্রশ্নগুলোর অর্থ আপনার মাঝেই বিদ্যমান। আপনি এই ব্যাপারগুলোর ব্যাখ্যা যেভাবে দেবেন, আপনার জীবনের লক্ষ্য সেভাবেই পরিবর্তিত হবে। তাই খেয়াল রাখবেন, ব্যাখ্যা গুলো যাতে সময়, ইচ্ছা এবং বাস্তব উপযোগীহয়।
সিদ্ধান্ত ৩ – কীভাবে ইচ্ছা বাস্তবায়ন করবেন?
উপরের দুটো ধাপ যখন আপনি সাফল্যের সাথে পার করবেন তখন আপনার সামনে আসবে শেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি।
আপনি যখন আপনার লক্ষ্য সবাইকে জানাবেন, তখন দুই ধরণের মানুষের সামনে পড়বেন। এক দল আপনাকে নিরুৎসাহিত করবে, আরেকদল আপনাকে উৎসাহ দেবে। যদি আপনি ভেবেচিন্তে আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য ঠিক করে থাকেন তাহলে নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন। যারা নিরুৎসাহিত করছে তাদেরকে এড়িয়ে যান। কারণ পাহাড়ে চড়ার সময় তারাই আপনাকে বাঁধা দেবে, যারা সেই কঠিন লক্ষ্য পার হতে ভয় পেয়েছে, কিংবা চেষ্টা করলেও পার হতে পারনি।
সুতরাং কখনোই আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। লক্ষ্য অনুযায়ী প্রস্তুত করতে থাকুন নিজেকে। পরিবারের সহায়তা নিন, আর্থিক নিশ্চয়তা বজায় রাখুন। যেটা হাতের বাইরে সেটা শুরুতেই করার ঝুঁকি নেবেন না। তাতে সম্বল হারিয়ে আপনি নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন। শিশু যখন হাঁটতে শেখে, তখন সে অনেক টালমাটাল করে শুরুতে। আপনার ক্যারিয়ারের শুরুটাকেও একটি শিশুর হাঁটার মত করে চিন্তা করুন। তাই শুরুতে বাঁধা পেলে পিছিয়ে যাবেন না। নিজের বুদ্ধি বিবেকের শক্তি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিন।
এই তিনটি সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবতার সাথে মিল রেখে আপনি ঠিক ঠিক নিতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনি হতে পারবেন একজন সফল ক্যারিয়ারের অধিকারী। তাই এখন থেকে এই তিনটি ব্যাপার মাথায় রেখে কাজ করুন, সাফল্য আসবেই।