দারুন একটা জিনিস ক্রেডিট কার্ড। এটা কেনাকাটার সময়ে ইনস্ট্যান্ট লোন পাওয়ার অসাধারন একটা অস্ত্র। সাধারণ লোনের ক্ষেত্রে যেখানে ব্যাংকে যাও রে, অ্যাপ্লাই করো রে, ওয়েট করো রে — সেখানে এই কার্ড সোয়াইপ করার সাথে সাথে বা কার্ড নাম্বার দিয়ে প্রসিড করার সাথে সাথে কার্ড প্রোভাইডারের তরফ থেকে কেনাকাটার জন্য টাকাটা ইনস্টান্ট লোন হিসাবে পেয়ে যাওয়া যায়। আবার সাধারণ লোনে যেখানে লোন স্যাংশন হওয়ার সাথে সাথেই ইন্টারেস্ট কাউন্ট করা শুরু হয়ে যায় সেখানে এটা ব্যবহার করলে বিনা ইন্টারেস্টে লোন শোধ করার জন্য 50 দিন পর্যন্ত পেয়ে যাওয়া যায়। ক্যাশ বা ডেবিট কার্ড এর বদলে কিভাবে এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বেশি বেশি পরিমাণে টাকা বাঁচানো যেতে পারে সে ব্যাপারে উপায় আমি এখানে শেয়ার করব।
সঠিক ক্রেডিট কার্ড নির্বাচন করে
আপনি যদি এই কার্ড নেওয়ার জন্য গুগল সার্চ করেন দেখবেন বহু রকমের ক্রেডিট কার্ড বাজারে অ্যাভেলেবল আছে। যেমন ধরুন ক্লাসিক, ক্যাশব্যাক, এন্টারটেইনমেন্ট, ট্রাভেল, প্রিমিয়াম বা বিভিন্ন রকমের কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড। আপনি মূলত কি উদ্দেশ্যে বা কি ক্ষেত্রে এই কার্ড ব্যবহার করতে চাইছেন তার উপরে ভিত্তি করে আপনাকে আপনার কার্ড বেছে নিতে হবে। কারণ ক্ষেত্রবিশেষে উপযুক্ত ক্রেডিট কার্ড থেকে বেশি সুযোগ সুবিধা বা ছাড়-ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। যেমন ধরুন আপনি যদি অ্যামাজনে বেশি কেনাকাটা করেন তাহলে অ্যামাজন পে আইসিআইসিআই কার্ডের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারেন, আবার ফ্লিপকার্ট বেশি পছন্দ হলে ফ্লিপকার্ট অ্যাক্সিস ব্যাংক কার্ড বেছে নিতে পারেন। এই দুটো কার্ডেই নিজ নিজ প্ল্যাটফর্মে সব সময় কেনাকাটার জন্য 5% ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়।
ওয়েলকাম অফার এর ব্যবহার করে
সাধারণত বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রেই নতুন কার্ডের জন্য অ্যাপ্লাই করার সময় কিছু ওয়েলকাম অফার, গিফট কার্ড, রিওয়ার্ড পয়েন্ট ইত্যাদি পাওয়া যায়। এই ওয়েলকাম অফার কার্ড ভেদে বিভিন্ন রকম হয়। আপনি যে কার্ডের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন সেই কার্ডের ওয়েলকাম অফার কি কি আছে সেগুলো জেনে নিয়ে যদি সেগুলো কার্ড পাওয়ার সাথে সাথেই ব্যবহার করা যায় তাহলে সেই মতো ব্যবহার করে এবং যদি কোন শর্ত সাপেক্ষে অফার গুলো পাওয়া যায় তাহলে সেই শর্ত পূরণ করার পর সেই অফার গুলো ব্যবহার করে কিছু টাকা বাঁচানো যেতে পারে। যেমন ধরুন এই মুহূর্তে ফ্লিপকার্ট অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ক্রেডিট কার্ডের জন্য যদি আপনি অ্যাপ্লাই করেন তাহলে আপনি ওয়েলকাম অফার হিসেবে ফ্লিপকার্টের 500 টাকার গিফট ভাউচার, মিন্ত্রা তে 15% ক্যাশব্যাক এবং সুইগীতে 50% ডিসকাউন্ট পাবেন। ফ্লিপকার্টের গিফট ভাউচার পাওয়ার জন্য আপনাকে কার্ড পাওয়ার 30 দিনের মধ্যে একটা ট্রানজাকশন করতে হবে। মিন্ত্রা এবং সুইগীর ছাড়টাও আপনি পাবেন 30 দিনের মধ্যে অর্ডার করলে তবেই।
আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে আলাদা আলাদা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে
একটু আগেই বলেছি বিভিন্ন কার্ড প্রোভাইডারের তরফ থেকে বহু রকমের আলাদা আলাদা ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়। এবং বিভিন্ন রকম পরিস্থিতিতে আলাদা আলাদা কার্ড থেকে আলাদা আলাদা রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। এবং আপনি কটা কার্ড নিতে পারবেন সে বিষয়ে কিন্তু কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বা একাধিক কার্ড নিলে এমনিতে কোনও সমস্যাও নেই। তাই আপনি আলাদা আলাদা পরিস্থিতির জন্য একাধিক আলাদা আলাদা কার্ড ব্যবহার করে ওভারঅল বেশি লাভ পেতে পারেন।
রিওয়ার্ড পয়েন্ট-এর সুবিধা নিয়ে
কিছু কিছু ক্যাশব্যাক কার্ড ছাড়া বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায়। সেই রিওয়ার্ড পয়েন্ট গুলো বিভিন্ন কার্ডের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম নিয়ম অনুসরণ করে রিডিম করতে হয়। ওই রিওয়ার্ড পয়েন্ট রিডিম করে গিফট কার্ড বা ক্যাশব্যাক পাওয়া যেতে পারে আবার বিভিন্ন প্রোডাক্ট, সিনেমার টিকিট, সাবস্ক্রিপশন ইত্যাদি কেনার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সেলের সময় ইনস্ট্যান্ট ডিসকাউন্ট-এর সুবিধা নিয়ে
অনলাইনে এমনকি অফলাইনেও বিভিন্ন সময় আলাদা আলাদা কার্ডের উপর 5-15% ইনস্ট্যান্ট ছাড়ের অফার দেয়। কেনাকাটা গুলো, বিশেষ করে বড় বড় দামী জিনিস হলে ওই বিশেষ ছাড়ের সময়ই করা উচিৎ। ধরুন আপনি একটা বড় টিভি কেনার প্ল্যান করছেন। সাধারণ ভাবে যদি আপনার পছন্দের মডেল টার দাম 50000 টাকা হয়, আপনার কার্ডে যখন 10% ছাড় পাওয়া যাবে তখন কিনলে আপনি 5000 টাকা এক্সট্রা বাঁচাতে পারবেন।
ক্যাশব্যাক এর সুবিধা নিয়ে
বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ডে আলাদা আলাদা পেমেন্টের ক্ষেত্রে আলাদা আলদা রকম ক্যাশব্যাক পাওয়ার সুযোগ থাকে। এই ক্যাশব্যাক পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমত সেগুলোর ব্যাপারে জানতে হবে এবং যথাসময়ে আপনার কার্ড ব্যবহার করে সুবিধাগুলো নিতে হবে। তাহলেই আপনি লাভবান হবেন। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। অ্যামাজনের কার্ডে অ্যামাজন থেকে যেকোনো বিল পেমেন্টে 2% ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। এই ক্যাশব্যাক যেমন আপনি মোবাইল রিচার্জ, গ্যাস সিলিন্ডার বুকিং, ইলেক্ট্রিসিটি বিল পেমেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে পাবেন তেমনই আবার ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম পেমেন্ট এর ক্ষেত্রেও পাবেন। ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে আপনার যদি কোন বড় অ্যামাউন্টের ইন্সুরেন্স করা থাকে সেক্ষেত্রে প্রিমিয়াম পেমেন্টের সময় আপনি 2% লাভ পেতে পারবেন। এক লাখের প্রিমিয়াম হলে 2000 টাকা বেঁচে যাবে। এ ধরনের সুবিধা আপনি অন্য কোন ভাবে পাবেন না।
ক্রেডিট কার্ডের বিভিন্নরকম সুবিধা গুলোর ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ডে মূল যে ফিচার থাকে তার বাইরেও অনেক এক্সট্রা ফিচার বা এক্সট্রা ছাড়ের সুযোগ থাকে। যেমন ধরুন তেলের সারচার্জে ছাড়, ফ্রি লাউঞ্জ অ্যাক্সেস, ফ্রি ইন্সুরেন্স ইত্যাদি। আপনি যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন বা অ্যাপ্লাই করার কথা ভাবছেন সেই কার্ডে এই ধরনের কি কি এক্সট্রা ফিচার আছে সেগুলো জেনে নিয়ে এবং তার সদ্ব্যবহার করে আপনি কিছু সেভিংস করতে পারবেন।