সারাবিশ্ব জুড়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারা এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের হাত ধরে উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing) নামক একটি বিশেষ পরিসেবা বেশ সারা ফেলেছে। কেননা এর হাত ধরে আইটি সেক্টরগুলো আরো এক ধাপ সামনে এগিয়ে চলছে।
তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় প্রযুক্তিতে সমান তালে এগিয়ে চলতে আমাদের প্রত্যেকেরই এসব বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। তাই আজকের এই লেখাটি আমরা সাজিয়েছি ক্লাউড কম্পিউটিং এর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত দিয়ে।তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল কথায় চলে যাই।
বস্তুত ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing) হলো একটি বিশেষ ধরনের ব্যবসায়িক মডেল অথবা পরিষেবা, যেখানে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক (যেমন-ইন্টারনেট) এর মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পিউটার টেকনোলজিস এর সার্ভিস প্রদান করা হয়।
অর্থাৎ ক্লাউড কম্পিউটিং কোন একক প্রযুক্তি নয়, বরং এটি হলো কয়েকটি বিচ্ছিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি একক কম্পিউটিং পরিষেবা।
এই ডিজিটাল কম্পিউটিং পরিষেবার আওতায় মূলত কম্পিউটার রিসোর্স সমূহ যেমন- স্টোরেজ (storage), সার্ভার (server), হার্ডওয়্যার (hardware), সফটওয়্যার (software), ডেটাবেজ (databases), ইনটেলিজেন্স (intelligence) প্রভৃতি সেবা কোনো ক্রেতা কিংবা কোম্পানির নিকট নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে এবং অর্থের বিনিময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাড়ায় প্রদান করা হয়।
চলুন কয়েকটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা যাক।
মনে করুন, আপনার বড় পরিসরের একটি আইটি কোম্পানি রয়েছে এবং সেখানে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করে থাকেন। এখন আপনার কোম্পানি এবং কর্মচারীদের বিভিন্ন তথ্য বা ডেটা ব্যবহার ও সংরক্ষণ করে রাখার জন্য অনেক বেশি স্টোরেজ (storage) এর দরকার। যে পরিমাণ স্টোরেজ আপনার লোকার কম্পিউটিং সিস্টেমের মধ্যে নেই।
তো এখন উপায়? এক্ষেত্রে আপনার জন্য সবথেকে সেরা উপায়টি হলো ক্লাউড কম্পিউটিং এর সেবা গ্রহণ করা। অর্থ্যাৎ আপনার পছন্দ মতো যেকোন একটি ক্লাউড সার্ভার থেকে প্রয়োজন পরিমাণ স্টোরেজ ভাড়া নিয়ে নিজের কাজে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার তথ্যগুলো সেই ক্লাউড সার্ভারে যেমন সুরক্ষিত থাকবে, তেমনি ইন্টারনেট এর মাধ্যমে যেকোন সময় এবং যেকোন জায়গা থেকে সেই ডেটা অ্যাক্সেস এবং অ্যানালাইসিস করতে পারবেন।
আবার ধরুন, ডেটা অ্যানালাইসিস অথবা ভিজুয়ালাইজেশন এর জন্য আপনার পাইথন (Python) কিংবা ম্যাটল্যাব (MATLAB) এর মতো বড় এবং দামী সফটওয়্যারগুলোর কোন একটির প্রয়োজন। কিন্তু এত দামী সফটওয়্যার আপনার পিসি বা ল্যাপটপে নেই।
তো সেক্ষেত্রে আপনি পরিচিত কোন ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস প্রোভাইডারের নিকট থেকে মাসিক কিংবা বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশন এর ভিত্তিতে এসব সফটওয়্যারের যেকোনটির অ্যাক্সেস নিয়ে নিতে পারেন। এর ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোন সময় ও যেকোন স্থান থেকে আপনি সেই সফটওয়্যার আপনার নিজের কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারবেন।
এমনকি আপনি ঘন্টা হিসেবেও ক্লাউড সার্ভার থেকে আপনার প্রয়োজনীয় পরিমাণ স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- আপনি যদি কোন অনলাইন গেম খেলতে চান, যার জন্য কোয়াড কোর প্রসেসরের প্রয়োজন। কিন্তু আপনি ডুয়েল কোর প্রসেসর ইউজ করেন।
সেক্ষেত্রে ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাহায্যে কোয়াড কোর প্রসেসর অ্যাক্সেস এর মাধ্যমে গেমটি নিজের ইচ্ছেমত সময় ব্যয় করে নিজের পিসি বা ল্যাপটপে খেলতে পারেন। এ জন্য আপনি ব্যবহৃত সময় হিসেব করেও পেমেন্ট করতে পারেন।
তো এরকম একটি দুটি উদাহরন নয়। বরং ক্লাউড কম্পিউটিং এর এরূপ হাজার হাজার উদাহরণ দেয়া সম্ভব। গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপল, মাইক্রোসফট ইত্যাদির মতো বৃহত্তর প্রযুক্তি কোম্পানি গুলো প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করে শুধুমাত্র এই একটি ক্ষাত থেকে।
কেননা প্রতিদিন একটি ক্লাউড সার্ভার থেকে যে পরিমাণ স্টোরেজ ব্যবহৃত হয়, সে পরিমাণ স্টোরেজ হয়তো আপনার লোকাল এরিয়াতে সারা বছরেও ব্যবহৃত হয় না। যারা থেকে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার এবং জনপ্রিয়তা খুব সহজেই প্রতীয়মান হয়।
পরিশেষে, উপরোক্ত উদাহরণ গুলো থেকে এটিই স্পষ্ট হয় যে, ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing) হলো কম্পিউটারের রিসোর্স গুলো যেমন- হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর বিভিন্ন সার্ভিস সমূহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রেতাকে সরবরাহ করা এবং ক্রেতা কর্তৃক সেই সার্ভিস গ্রহণ করার একটি প্রসেসিং।
ইউজারের উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং প্রধানত ৪ প্রকার। যথা-
Public: ক্লাউড কম্পিউটিং এর এই ধরনের অবকাঠামোতে সাধারণত একটি পরিষেবা একজন গ্রাহক থেকে হাজার হাজার ও লক্ষ লক্ষ গ্রাহক অ্যাক্সেস করার সুযোগ পাবেন।
Private: এই অবকাঠামোটি-তে কোন একটি রিসোর্স সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে কোন একক প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির জন্য তৈরি করা হয়।
Hybrid: এটি হলো পাবলিক এবং প্রাইভেট এই দুই জাতীয় পরিষেবার সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ পরিষেবা।
Community: এক্ষেত্রে কোন একটি রিসোর্স একাধিক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের মাঝে ভাগাভাগি হতে পারে।
আবার সার্ভিসের ওপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং কে আরও ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
IaaS (Infrastructure-as-a-service): এই পদ্ধতিতে মূলত কোন একটি অবকাঠামো ভাড়া দেওয়া হয়। যেমন- কোন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার। যেটি সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রদান এবং গৃহীত হয়।
SaaS (Software-as-a-service): ক্লাউড কম্পিউটিং এ যখন কোন গ্রাহকে-কে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন সফটওয়্যার এর অ্যাক্সেস দেওয়া হয় তখন তাকে সফটওয়্যার এজ এ সার্ভিস বলা হয়। যেমন- ম্যাটল্যাব, মাইক্রোসফট অফিস ইত্যাদি।
PaaS ( Platform-as-a-service): এই পদ্ধতিতে প্রধানত কোন একটি প্লাটফর্ম ভাড়া দেওয়া হয়। যেমন- ডেটাবেজ, অপারেটিং সিস্টেম, স্টোরেজ, সার্ভার অথবা মনিটরিং সিস্টেম।
ক্লাউড কম্পিউটিং কিভাবে কাজ করে?
ক্লাউড কম্পিউটিং এর কর্ম পরিচালনার মূল ভিত্তি হলো ক্লাউড সার্ভার। সার্ভিস প্রোভাইডারগণ তাদের নিজস্ব ক্লাউড সার্ভারে প্রয়োজনীয় কম্পিউটিং পরিষেবাগুলো সংরক্ষণ করে রাখেন এবং সর্বোপরি সেই সার্ভিস প্রদানের এনভায়রনমেন্ট তৈরি করে রাখেন।
এরপর সেখান থেকে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী যেকোন সার্ভিস তার পিসি, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা ফোনে প্রদান করে থাকেন। অর্থ্যাৎ ক্রেতা ঠিক যতটুকু স্টোরেজ চাইবেন কিংবা যেই সার্ভিসটি চাইবেন এবং যখনই ব্যবহার করতে চাইবেন, প্রতিষ্ঠানকে ঠিক তখনই সার্ভার থেকে সার্ভিসটি প্রদান করতে হবে।
একটি ডেডিকেটেড সার্ভারের তুলনায় একটি ক্লাউড সার্ভার অনেক বেশি শক্তিশালী, সিকিউর এবং ইতিবাচক দিক সম্পন্ন।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা কি?
ক্লাউড কম্পিউটিং এর জনপ্রিয়তা ও উচ্চ মাত্রার ব্যবহারই বলে দেয় এর সুবিধা এবং কর্মদক্ষতা কতটা উচ্চ পর্যায়ের।
বিশেষ করে বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাক্তি পর্যায়ের কাজগুলো কতটা সহজ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায় তা মানুষ নতুনভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। চলুন তাহলে এক নজরে দেখে নেয়া যাক ক্লাউড কম্পিউটিং এর ইতিবাচক দিকগুলো কি কি।
অপারেটিং ব্যায় হ্রাস
ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসের প্রধান যে সুবিধা সেটি হলো কোন প্রতিষ্ঠানের অপারেটিং খরচ হ্রাস করা। যেকোন প্রয়োজনীয় কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কিংবা সফটওয়্যার ক্রয় করার পরিবর্তে স্বল্প খরচে ভাড়া করে ব্যবহার করার সুবিধা থাকার কারণে স্বভাবতই এক্ষেত্রে অপারেটিং ব্যয় অনেকাংশে লাঘব হয়।
তথ্য নিরাপত্তা
ক্লাউড কম্পিউটিং এর আওতায় তথ্য চুরি, নষ্ট কিংবা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কেননা লোকাল কম্পিউটিং সিস্টেমে যেমন সহজেই কোন তথ্য হারিয়ে যায় এবং হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যায়, ক্লাউড কম্পিউটিং এ সেরকম কোন চান্স থাকেনা। কেননা ক্লাউড সার্ভারগুলো ডেটা স্টোরেজ করার জন্য একই সঙ্গে একাধিক নোড ব্যবহার করে। ফলে যেকোন ঝামেলা ছাড়াই যেকোন তথ্য পুনরুদ্ধার, হস্তান্তর এবং স্থানান্তর করা যায়।
স্বল্প সময়ে সেবা গ্রহণ
ক্লাউড কম্পিউটিং নূন্যতম সময়ের মাঝে তার সেবা নিশ্চিত করে। গ্রাহক চাওয়া মাত্রই প্রতিষ্ঠান তাদের সার্ভিস প্রদান করতে বাধ্য। ফলে সময় অপচয় রোধ হয়।
সহজ ব্যবহার ব্যবস্থাপনা
সিনক্রোনাইজেশন ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেমের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক দিক। এখানে গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোন সময় যেকোন জায়গা থেকে ক্লাউড সার্ভার থেকে সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া ক্লাউড ভিত্তিক পরিষেবা গুলো কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট থেকে চাহিদা মাফিক গ্রহণ করা যায়।
অতিরিক্ত খরচ হ্রাস
ক্লাউড কম্পিউটিং এর অন্যতম একটি সুবিধা হলো ব্যবহারকারীর অতিরিক্ত খরচ হ্রাস করা। অর্থ্যাৎ একজন ব্যবহারকারী ঠিক যতটুকু সার্ভিস ব্যবহার করবেন তাকে ঠিক ততটুকুর জন্যই পেমেন্ট করতে হবে। এখানে অতিরিক্ত পেমেন্ট গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভাষায় যাকে বলা হয় পে এজ ইউ গো (pay as you go).
তো সম্মানিত পাঠক! এই ছিল আমাদের আজকের ক্লাউড কম্পিউটিং সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আশা করি, এই আর্টিকেলটি থেকে ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা সম্বন্ধে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/top-ten-flower-for-garden/
তবে জানার ও শেখার কোন শেষ নেই। অন্য সবকিছুর মতো ক্লাউড কম্পিউটিং জানা ও শেখার পরিধিও অনেক বিশাল। এর থেকে আপনি কতটুকু জানবেন ও শিখবেন তা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে আপনার একান্ত আগ্রহ ও অধ্যবসায়ের উপর।