জুন-জুলাই মাস এলেই গণমাধ্যমে জাতীয় বাজেট নিয়ে হইচই দেখা যায়। রাষ্ট্রীয় জীবনের মতোই নিজের জীবনে কিন্তু বাজেট বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সংসার যারা শুরু করবেন কিংবা শুরু করেছেন তাদের বাজেট পরিকল্পনা প্রথম থেকেই তৈরি করা প্রয়োজন। ব্যক্তিজীবনে বাজেটের নানান প্রেক্ষিত নিয়ে লিখছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের অডিওলোজি অ্যান্ড স্পিচ ল্যাংগুয়েজ প্যাথোলজি পাইজারের সিনিয়র প্রভাষক ফাতিমা আলম মেঘলা।
আর্থিক বিষয় মানেই কিন্তু পরিকল্পনা
সংসার মানেই কিন্তু পরিকল্পনা। নানা পরিকল্পনার মধ্যে আর্থিক পরিকল্পনা একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। সংসার শুরুর আগে থেকেই আর্থিক বিষয়গুলোকে সব সময় গুরুত্ব দিতে হবে। সংসার বা সম্পর্কের বিন্দু যদি প্রেম-ভালোবাসা হয়, সমন্বিত আর্থিক পরিকল্পনা তার একটি শাখা বলা যায়। সুন্দর সম্পর্ক ও পরিবার তৈরিতে পরিকল্পিতভাবে আর্থিক বিষয়টিকে সাজিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
শুরু করুন প্রথম থেকেই
সংসার বা সম্পর্ক শুরুর প্রথম থেকেই বাজেট পরিকল্পনায় মনোযোগ দিন। নিজের আয় বুঝে ব্যয় করার গুরুত্ব আমরা দর্শন থেকে শিখেছি। পরিবারের জন্য কীভাবে কী ব্যয় করবেন, তা নিয়ে আমাদের সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বলা যায়। পরিবারের আয়-উপার্জনের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। ভালোবাসা থাকলেই শুধু হবে না, মাস শেষে যেন ভালো বাসায় থাকার অর্থ জোগাড় হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আয় বুঝে ভাগ করুন
নিজেদের সংসারকে গতিশীল করতে প্রথমেই আয়-উপার্জনের বিষয়টিকে বুঝে নিন। কার কেমন আয়, কোন খাতে কেমন ব্যয় সেগুলো ভাগ করে ফেলুন। মাসের বেতনের অঙ্ক সেই অনুপাতে ভাগ করুন। চলাফেরা-যাতায়াত, ভ্রমণ, স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে কেমন খরচ করবেন তা খেয়াল রাখুন।
২-২-২ নিয়ম মেনে চলুন
অনেক মনোবিদ সংসারে গতিশীলতা রাখতে আর্থিক বিষয়ে ২-২-২ নিয়ম অনুসরণের পরামর্শ দেন। ২ সপ্তাহ পরপর সঙ্গীকে নিয়ে বাড়ির আশপাশেই কোথাও থেকে ঘুরে আসুন, সময় কাটান। দুজনের পছন্দের খাবার খেতে পারেন, সিনেমা দেখতে পারেন। ২ মাস পরপর নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করুন। দেখা করতে না পারলে বাড়িতে দাওয়াত করুন। নিজের সামাজিক ক্ষেত্রে সচেতন উপস্থিতি তৈরি করুন। প্রতি ২ বছর পরপর দূরে কোথাও বা ভিন্ন কোনো দেশে দুজনে ঘুরে আসার পরিকল্পনা রাখুন। যখনই পরিকল্পনা করবেন তখন থেকেই আর্থিক পরিকল্পনাগুলো কাগজে-কলমে লিখে রাখুন।
সপ্তাহের খরচ হিসাব করুন
নতুন সংসার সাজানোর প্রথম থেকেই সপ্তাহের বাজারের বিষয়টি মাথায় রাখুন। নিত্যদিনের খরচ চালানোর বিষয়টি বুঝতে হবে। একবারে মাসের বাজার করতে পারেন, আবার সাপ্তাহিকভাবেও বাজার করতে পারেন।
দাম্পত্য সম্পর্কে পরস্পরের ভালো রাখার দিকটি গুরুত্ব পায়। সামনে কোনো উৎসব বা সামাজিক কোনো আয়োজন থাকলে সেই বিষয়টিকেও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।
মাসের হিসাব করুন সাবলীলভাবে
প্রেমের পরে সংসার, সেই সংসার চালাতে কিন্তু অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম। নিজেদের পরিবারের মাসিক আর্থিক বিষয়গুলো দাম্পত্যসঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা করুন। নিজে থেকে পরিকল্পনা করার চেয়ে, সঙ্গীর পরামর্শে দুজনে এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিন। পরিবারের জন্য বিশেষ কোনো কেনাকাটা, সেটা ফ্রিজ হোক কিংবা গাড়ি, তার জন্য টাকা জমানোর বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিন। আপনার আয় যদি ১০০ টাকা হয়, তা হলে পরিবারের জন্য ৪০ টাকা ব্যয় করুন সংসারের মাসিক খরচের জন্য।
সঞ্চয়কে গুরুত্ব দিন
পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সব সময় সঞ্চয়ের বিষয়টিকে মাথায় রাখুন। একসঙ্গে অনেক টাকা সঞ্চয় না করে প্রতি মাসে একটু একটু করে সঞ্চয়ের অভ্যাস করুন। সঞ্চয়ের অর্থ নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবারের কোনো বিষয়ে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। আপনার আয় যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে মাসে ১০ টাকা সঞ্চয়ে গুরুত্ব দিন। এই অর্থ পারতপক্ষে কখনই ব্যবহার বা খরচ করবেন না। জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময়গুলোর জন্য এই অর্থ ব্যবহার করবেন।
বিপদ-আপদের কথা মাথায় রাখুন
পরিবারের আর্থিক বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার সময় অসুস্থতা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ-আপদের কথা মাথায় রাখুন। ১০০ টাকা আয়-উপার্জন থাকলে, অন্তত ১০ টাকা রাখুন বিপদ-আপদের কথা বিবেচনা করে। নিজের অসুস্থতা, পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের অসুস্থতার কথা মাথায় রাখুন।
নির্দিষ্ট খরচের কথা বিবেচনা করুন
সংসারে বাসাভাড়া, ইন্টারনেট বিল, যাতায়াতের মতো কিছু বিষয় থাকে, যার জন্য নির্ধারিত খরচ হবেই। এসবের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। ১০০ টাকা যদি আয় হয়, তাহলে ৩০ টাকা এই খাতে বরাদ্দ করুন।
জীবনের জন্য খরচ করতে হবে
সংসারে আমরা সব সময় পরিবারের জন্যই যেন সব করে যাই। নিজের জন্য কিংবা নিজের দাম্পত্যসঙ্গীর জন্য খরচের কথা অনেকটা এড়িয়ে যাই। ১০০ টাকা আয়-উপার্জন হলে অন্তত ১০ টাকা রাখুন নিজেদের বিনোদন কিংবা নতুন কোনো অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য।