ঘরের ভেতরের গাছপালা কেবল ঘরের নান্দনিক আকর্ষণই বাড়ায় না, বরং বাতাসের মান উন্নত করে, মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি করে এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ তৈরিতে অবদান রাখে। কিছু গাছ নিয়মিত সালোকসংশ্লেষণের বাইরেও কাজ করে এবং রাতেও অক্সিজেন নির্গত করে, যা তাদের শয়নকক্ষ এবং থাকার জায়গার জন্য আদর্শ। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন পাঁচটি গাছের সন্ধান ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়-
১. অ্যারেকা পাম (ডাইপসিস লুটেসেন্স)
অ্যারেকা পাম, যা প্রজাপতি পাম নামেও পরিচিত। এটি একটি শক্তিশালী বায়ু-বিশুদ্ধকারী উদ্ভিদ যা দিন এবং রাত জুড়ে অক্সিজেন নির্গত করে। এই উদ্ভিদ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড, জাইলিন এবং টলুইনের মতো বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অত্যন্ত দক্ষ। এমনটাই বলা হয়েছে নাসার ক্লিন এয়ার স্টাডিতে। অ্যারেকা পাম একটি প্রাকৃতিক হিউমিডিফায়ার হিসেবে কাজ করে, যা হাঁপানি এবং সাইনোসাইটিসের মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
২০১৫ সালে জার্নাল অফ ফিজিওলজিক্যাল অ্যানথ্রোপলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যারেকা পামের মতো ঘরের ভেতরের গাছপালার সংস্পর্শে মানসিক চাপ কমায় এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, যা এটি কর্মক্ষেত্র এবং বাড়িতে একটি দুর্দান্ত সংযোজন করে তোলে।
২. স্নেক প্ল্যান্ট (সানসেভিরিয়া ট্রাইফ্যাসিটা)
স্নেক প্ল্যান্ট একটি অনন্য ইনডোর প্ল্যান্ট যা ক্র্যাসুলেসিয়ান অ্যাসিড মেটাবলিজম (CAM) সালোকসংশ্লেষণ করে, যা রাতে অক্সিজেন মুক্ত করতে সাহায্য করে। এটি ঘুমানোর সময় বাতাসের গুণমান উন্নত করতে পারে। নাসার ক্লিন এয়ার স্টাডি স্নেক প্ল্যান্টকে বেনজিন, ফর্মালডিহাইড এবং ট্রাইক্লোরোইথিলিনের মতো ক্ষতিকারক দূষণকারী পদার্থের কার্যকর অপসারণকারী হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
৩. তুলসী (ওসিমাম টেনুইফ্লোরাম)
তুলসী তার ঔষধি গুণাবলীর জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। সারাক্ষণ অক্সিজেন মুক্ত করার পাশাপাশি তুলসী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল যৌগে সমৃদ্ধ যা বাতাসকে বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে।
এভিডেন্স-বেসড কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড অল্টারনেটিভ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, তুলসীর অ্যাডাপটোজেনিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীরকে চাপ এবং উদ্বেগ মোকাবেলায় সাহায্য করে। তুলসী গাছ ঘরের ভেতরে রাখলে মানসিক স্বচ্ছতা উন্নত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে সামগ্রিক সুস্থতা বজায় থাকে।
৪. অ্যালোভেরা (অ্যালো বার্বাডেনসিস মিলার)
অ্যালোভেরা ত্বক নিরাময়ের বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত, তবে এটি ঘরের ভেতরের বাতাসের মান উন্নত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রসালো গাছটি ক্রমাগত অক্সিজেন নির্গত করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড, ফর্মালডিহাইড এবং বেনজিন শোষণ করে, যা এটিকে একটি প্রাকৃতিক বায়ু পরিশোধক করে তোলে।
বিএমসিতে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরা কেবল বাতাসের মান উন্নত করে না বরং প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যও ধারণ করে যা শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অ্যালোভেরা ঘরের ভেতরে আর্দ্রতার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করতে পারে, শুষ্ক ত্বক এবং অ্যালার্জির ঝুঁকি হ্রাস করে।
৫. পিস লিলি (স্প্যাথিফাইলাম)
পিস লিলি একটি জনপ্রিয় ইনডোর প্লান্ট যা রাতেও বাতাসকে বিশুদ্ধ করার এবং অক্সিজেন মুক্ত করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। এটি অ্যামোনিয়া, বেনজিন এবং ফর্মালডিহাইডের মতো বায়ুবাহিত বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে, একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ তৈরি করে।
নাসার ক্লিন এয়ার স্টাডি অনুসারে, পিস লিলি আবদ্ধ স্থানে বায়ুর মান উন্নত করার জন্য সেরা উদ্ভিদের মধ্যে একটি। ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি (২০২১) এর গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, পিস লিলির মতো ইনডোর প্লান্ট চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।