সংসারের একটি খাতে খরচ কমালেও অন্য খাতে আবার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে যা রোজগার হচ্ছে, তা থেকে কিছুই আর সঞ্চয় হচ্ছে না। খরচ কমানোর জন্য আপনাকে একটু পরিকল্পনা করে চলতে হবে। চলুন জেনে নিই ঘরোয়া খরচ কমানোর কয়েকটি উপায়:
দৈনন্দিন জীবনে চাহিদা দিন দিন বাড়ছেই। জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়ে চলেছে, তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকে। কিছুতেই রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না সংসারের খরচের। আয়ের তুলনায় ব্যয়ের মিল নেই। তাই মাস শেষে ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেকে। কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই আপনি আপনার প্রতি মাসের খরচ যেমন কমিয়ে আনতে পারেন, তেমনি পারেন সেই টাকা থেকে কিছুটা আপনার ভবিষ্যতের জন্যে সঞ্চয় করতেও! চলুন জেনে নিই সংসারের খরচ কমানোর কয়েকটি উপায়:
সংসার
কোন খাতে খরচ বেশি হচ্ছে, লক্ষ রাখুন
খাওয়া-দাওয়া, বাড়িভাড়া, বিদ্যুতের বিলের মতো কিছু খরচ সব বাড়িতেই নির্দিষ্ট থাকে। তবে অনলাইনের যুগে অনলাইন শপিংয়ের পেছনে অনেক টাকা খরচ করে ফেলি আমরা। সারা মাস খেয়াল রাখুন, কোথায় বেশি টাকা খরচ হচ্ছে, আপনার কোনও শখের জিনিসে নয় তো? তাই ব্যাঙ্কের স্টেটমেন্ট খেয়াল করে দেখুন, সবচেয়ে বেশি কোন খাতে আপনি টাকা খরচ করছেন। স্টেটমেন্টে দাগ দিয়ে রাখু্ন, কোনটা বেশি প্রয়োজনীয়, কোনটা না হলেও চলবে।
ঋণ শোধ করুন
মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই সবার আগে আপনার ঋণ শোধ করতে চেষ্টা করুন। পুরোটা না পারলেও যতটা সম্ভব করুন। ঋণ শোধ না করে সঞ্চয়ের পথে পা ভুলেও বাড়াতে যাবেন না।
কিছু কেনার আগে ভাবুন
আমাদের অনেকেরই অভ্যাস হল রাস্তায় যেতে যেতে কোন দোকানে কিছু পছন্দ হলে হুট করে কিনে ফেলা। এটা করার ফলে বেশীরভাগ সময়েই আমরা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে ঘর বোঝাই করে ফেলি। জিনিস পছন্দ হয়ে গেলেই হুট করে কিনে না ফেলে একটু ভেবে নিন। দরকার হলে ১/২ দিন পরে কিনুন।
সংসার
প্রতিদিন কিছু না কিছু জমান
প্রতিদিনই চেষ্টা করুন কিছু না কিছু টাকা জমাতে। হতে পারে সেটা ১০-১০০ টাকা। যাই হোক না কেন জমান। এবং সেটার কথা ভুলে যান। ভুলেও সেটায় হাত দেবেন না।
মাসের বাজেট স্থির করুন
প্রতি মাসে যে খরচগুলি হয়, সেগুলোর জন্য আগে থেকেই টাকা বরাদ্দ করে রাখুন। আর সেই মাসের অন্যান্য খরচের জন্যেও আলাদা টাকা বরাদ্দ করুন। চেষ্টা করুন সেই টাকার মধ্যেই খরচ করার। ওই খাতে টাকা কম পড়লে অন্য খাতে খরচ কমিয়ে আনুন। প্রতি মাসে ভ্রমণের জন্যে, বিনোদনের জন্য আলাদা টাকা বরাদ্দ রাখুন।
ব্র্যান্ডিং প্রবণতা ত্যাগ করুন
বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে অযথা ব্র্যান্ডিং প্রবণতায় ভুগবেন না। আপনাকে ভালো মানায় এমন পোশাক বা এক্সেসরিজ ব্যবহার করুন। এভাবেও কিন্তু আপনি ট্রেন্ডি হয়ে উঠতে পারেন। অযথা দাম দিয়ে ব্র্যান্ড এর পোশাক সব সময় পরার চেয়ে কিছু ব্র্যান্ডেড পোশাক কিনে রাখুন বিশেষ উপলক্ষে পরার জন্যে। এতে আপনার অর্থ ও স্ট্যাটাস দুটোই রক্ষা পাবে।
অ্যাপের সাবস্ক্রিপশনে খেয়াল রাখুন
আমাদের ফোনে এমন অনেক অ্যাপ থাকে, যা হয়তো আমাদের প্রয়োজনও হয় না। কেবল প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলিই ফোনে রাখুন। বুদ্ধি করে অ্যাপের সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে। ধরুন আপনি ব্যবহার করছেন না, অথচ সেটার একটা বিশাল সাবস্ক্রিপশন প্রতি মাসে আপনাকে দিতে হচ্ছে। কখন হুট করে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে, আপনি বুঝতেও পারছেন না। সেই রকম অ্যাপ আনসাবস্ক্রাইব করুন।এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে যার পরিবর্তে অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। সেগুলোর খোঁজ করুন।
সংসার
বিদ্যুতের খরচ কমান
দিনের বেলাতেও বাড়ির সমস্ত আলো জ্বালিয়ে রাখার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। এই অভ্যাস বাদ দিয়ে জানালাগুলো খুলে রাখুন। কোনও ঘরে অকারণে পাখা চলছে কি না খেয়াল রাখুন। পাখাতেও বিদ্যুতের খরচ অনেক বেশি হয়। সারা রাত এসি চালানোর প্রয়োজন না পড়লে মাঝরাতে এসি বন্ধ করার জন্য টাইমার দিয়ে রাখুন। প্রতিদিন ওয়াশিং মেশিন চালানোর প্রয়োজন না পড়লে সপ্তাহে তিন দিন চালান।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমান
ক্রেডিট কার্ড পকেটে থাকলেই অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ফেলার অভ্যাস থাকে অনেকের। তাই খরচের মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। অত্যন্ত বুঝেশুনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হবে। সংসারের খরচ যতটা সম্ভব নগদ টাকা দিয়েই করার চেষ্টা করুন, তা হলে হিসাব রাখাও সহজ হবে।
ছাড়ের সময় পণ্য কিনুন
অলংকার বা অন্যান্য পণ্যের দামে বছরের বিশেষ কিছু সময়ে ছাড় দেয়া হয়। চেষ্টা করুন সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে পণ্যটি কেনার। এতে আপনার বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাবে। খরচ কমানো খুব কঠিন কিছু নয়। আপনার একটু সদিচ্ছা আর সতর্কতাই যথেষ্ট!