সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বলিউডের ‘অ্যানিমেল’ সিনেমা ইতোমধ্যে প্রেক্ষাগৃহ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। অ্যাকশনে ভরপুর এই সিনেমায় ফ্যামিলি-ড্রামাসহ, নারী ও পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ককে যেভাবে দেখানো হয়েছে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
তবে এসবের মাঝেও আলোচনা ও বিনোদনের খোড়াক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে সিনেমায় অভিনেতা ববি দেওলের প্রথম দৃশ্যের গান (এন্ট্রি গান) ”জামাল জামালু।’
ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবহারকারীরাও এই গান দিয়ে তৈরি করছেন রিলসহ ছোট্ট ছোট্ট ভিডিও। জামাল জামালু গানের অর্থ কী, এর নেপথ্যের গল্প নিয়ে এ লেখা।
ঐতিহ্যবাহী ইরানি গান
জামাল জামালু গানটি বেশ পুরোনো। ব্যান্ড ধারার এই গানটিতে লোকগানের আভাস পাওয়া যায়। ইউটিউবে ২০১৩ সালে আপলোড হওয়া একটি ভিডিওর শিরোনামে এটিকে মেয়েদের স্কাউটের কোরাস গান হিসেবে বলা হয়েছে। বিনোদন বিষয়ক ভারতীয় গণমাধ্যম পিংভিলার তথ্যমতে, গানটির নির্মাতা ইরানের ‘খথেরে’ নামের একটি দল।
সঙ্গীতের ঘরানা বা ধরণ হিসেবে বললে এই গানটি ইরানের ‘বান্দারি’ ঘরানার বলা চলে। এই ধারার গান মূলত স্থির ও গতিশীল দুই ধরনের তালে বাজে। গানের ছন্দের তালে নাচের জন্য এই ধরণের গান পরিবেশন করা হয়ে থাকে। বান্দারি শব্দটি এসেছে বন্দর থেকে। গানের তাল শুনলে হাতে শরবতের গ্লাস নিয়ে একদল নাবিক উৎসব করছে বলে কল্পনা করে বসলে হয়তো ভুল হবে না।
গানের অর্থ
জামাল জামালু গানটি প্রেমের যেখানে প্রেমিকা তার ভালোবাসার মানুষের প্রতি তার অনুভূতি ব্যক্ত করছে। অ্যানিমেল সিনেমায় যেটুকু ব্যবহার করা হয়েছে তার অর্থ, ‘ও আমার প্রিয়, আমার ভালোবাসা। আমার মন নিয়ে খেলা করো না/আমায় অবহেলা করো না। তুমি একটি নতুন যাত্রা শুরু করবে, আর আমি এদিকে পাগলপ্রায়। ও আমার প্রিয়, আমার ভালোবাসা।’ সিনেমার মতো মূল গানটিও কোরাস।
প্রায় ৩ ঘণ্টা ২৭ মিনিটের এই সিনেমাতে আবরার খান চরিত্রের আগমন হয় বিরতির (ইন্টার্ভেলের) পর। তখন একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ঘরের নারীরা কোরাসে ইরানের ঐতিহ্যবাহী এই বান্দারি গানটি গায়।
যেভাবে ট্রেন্ডের শুরু
অভিনেতা ববি দেওল ‘অ্যানিমেল’ সিনেমার নির্মাতাদের উৎসর্গ করে গানটি তার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে শেয়ার করেন। তখন থেকেই এটি ভাইরাল। ৬ ডিসেম্বর টি-সিরিজ তাদের ইউটিউব পেইজে ‘অ্যানিমেল: আব্রার’স এন্ট্রি’ নামে সম্পূর্ণ সংকলনটি প্রকাশ করে। সিনেমার জন্য গানটি পুনরায় তৈরি করেন সঙ্গীত পরিচালক হর্ষবর্ধন রামেশ্বর।
গানটি ভাইরাল হবার পর থেকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর দুটি দল রাজাস্থান রয়্যালস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গানটি দিয়ে ভিডিও তৈরি করেছে।
ববি দেওলের মতো সিনেমাতে অভিনেতা রণবীর কাপুরকেও একটি পুরোনো গানের তালে নাচতে দেখা যায়। সিনেমায় একটি পার্টিতে যায় রণবীর। সেই গানটি ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া মণি রত্নমের ‘রোজা’ সিনেমার গান ‘দিল হে ছোটা সা’ এর আধুনিক ইন্সট্রুমেন্টাল ভার্সন। মূল গানটি এসেছিল অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের পরিচালনায়।
যদিও সিনেমাতে তখন রণবীরের লুক দেখনে আশির দশকের শেষ কিংবা নব্বইয়ের দশকের মনে হবে। লম্বা হেয়ারকাট ও কালো জ্যাকেট পরা রণবীরকে কেউ কেউ সঞ্জয় দত্তের সাথেও গুলিয়ে ফেলতে পারেন। ‘সাঞ্জু’ সিনেমাতেও রণবীরকে অনেকটা এমন লুকেই দেখা যায়।
এছাড়া সিনেমাতে আরো একটি বিখ্যাত গানের নয়া সংকলন ব্যবহার করা হয়। সেটি হলো ‘সারি দুনিয়া জালা দেঙ্গে’। সিনেমায় গানটি গেয়েছেন বি. প্রাক। তবে গানের সুর ও তাল পাঞ্জাবের বহুল প্রচলিত ‘টাপ্পে’ বা ‘টাপ্পা’ ঘরানার লোকগীতি থেকে অনুপ্রাণিত।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%9b%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6/
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্রিয়েটিভ রিসার্চ থটসের গবেষণাসহ আরও বিভিন্ন গবেষণাপত্রে পাওয়া যায় পাঞ্জাবের উটারোহীরা মরুভূমি তে এই সুরে গান গাইতেন। এতে প্রেমিক ও এই উটারোহীদের অনুভূতির তীব্র বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও বলা হয়।