৬৯তম ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে ‘টুয়েলভথ ফেল’। পুরস্কার হিসেবে ব্ল্যাক লেডি ট্রফি গ্রহণ করেন সিনেমাটির অভিনেতা বিক্রান্ত মেসি, মেধা শঙ্করসহ অভিনয় শিল্পীরা।
বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত এ সিনেমাটি ইউপিএসসি শিক্ষার্থীদের সংগ্রামের ওপর তৈরি। বাস্তবের আইপিএস অফিসার মনোজ কুমারের কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আইপিএস হয়ে ওঠার সত্যি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়।
এছাড়া সেরা অভিনেতা পুরস্কারও জিতেছেন বিক্রান্ত মেসি। বিশ্ব জুড়ে এই ছবিটি দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এছাড়া অভিনেতাদের মধ্যে কমল হাসান, সঞ্জয় দত্ত, ঋষভ শেট্টি, ফারহান আখতারও এই সিনেমাটির প্রশংসা করেছেন।
টুয়েলভথ ফেল সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার সময় থেকেই সর্বমহলে চর্চা শুরু হয়। যেহেতু খুবই সীমিত সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে এই সিনেমা দেখা যাচ্ছিল, ফলে বিশাল সংখ্যক মানুষ তা দেখতে পাননি। আর তাই ওটিটিতে আসার পরেই যেন এর জনপ্রিয়তা একবারে কয়েক ধাপ বেড়ে গেছে।
ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ শর্মা ও আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশি দম্পতির জীবনের গল্প নিয়ে ২০১৯ সালে ‘টুয়েলভথ ফেল’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন দেশটির ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠক। সেই উপন্যাস অবলম্বনে ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা নির্মাণ করেন বিধু বিনোদ চোপড়া।
বাস্তব জীবনে আর্থিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সঙ্গী করে বেড়ে ওঠেন মনোজ। পরিবারকে সহযোগিতা করতে পড়াশোনার পাশাপাশি অটো রিকশাও চালাতেন তিনি। মাধ্যমিকে কোনোরকম পাস করলেও দ্বাদশ শ্রেণিতে হিন্দি ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন তিনি। পরেরবার অনেক কষ্টে দ্বাদশ পাস করেন।
এর মধ্যেই একবার এক পুলিশ কর্মকর্তা মনোজর অটোটি আটক করেন। পরে থানায় গিয়ে অটোটি ছাড়িয়ে আনতে যান তিনি। সেখানে একটি সাক্ষাৎ বদলে দেয় তার জীবনের প্রথম গতিপথ। কীভাবে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় সবকিছু ওই আলোচনায় উঠে আসে। এরপর মনোজ স্বপ্ন বুনেন আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার।
ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন চেপে বসে মধ্য প্রদেশের এই দ্বাদশ ফেল ছেলেটির মাথায়। পাড়ি দেন গোয়ালিয়র। প্রথমটায় টেম্পো চালিয়ে, ছোটখাট কাজ করে লড়াই শুরু করেন তিনি। সে সময় তার মাথার উপর ছাদটুকুও ছিল না। ফুটপাথে ভিখারিদের সঙ্গে ঘুমাতে হয়েছে মনোজকে। একটা সময় লাইব্রেরিতে পিয়নের কাজ পান তিনি। কাজের সূত্রে বই পড়ার সুযোগ পেয়ে যান । সেটাই তাকে নতুন দিশা দেখায়। ধীরে ধীরে ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।
সেই থেকে শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে মধ্য প্রদেশ থেকে দিল্লিতে পৌঁছান মনোজ। সেখানে ধনী পরিবারের কুকুরদের দেখভালের মতো কাজও করতে হয়েছে তাকে। তবে লড়াই বন্ধ হয়নি। এই লড়াইয়ের যাত্রায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটির জীবনে আসে উত্তরাখন্ডের মেয়ে শ্রদ্ধা জোশি। তার সব সময়ের সঙ্গী ছিলেন প্রেমিকা শ্রদ্ধা। তিনিও চাকরির পরীক্ষা দিতে দিল্লি যান। প্রথমবারেই আইআরএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান শ্রদ্ধা।
তিনবারের চেষ্টায়ও উত্তীর্ণ হতে পারেননি মনোজ। শ্রদ্ধার অনুপ্রেরণায় চারবারের চেষ্টায় আইপিএস এর চাকরিটা পেয়ে যান তিনি। ২০০৫ সালে মনোজ শর্মাকে বিয়ে করেন বিয়ে করেন শ্রদ্ধা। বর্তমানে এই দম্পতির ঘরে চিয়া ও মানস নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।