বর্তমান সময়ে চাকরির জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং একটি উল্লেখযোগ্য, দ্রুত প্রসারমান, চ্যালেঞ্জিং এবং জনপ্রিয় একটি ক্ষেত্র। যারা আনন্দ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন, তারা ইচ্ছে করলে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। কারণ, এই ক্যারিয়ার আপনাকে একদিকে যেমন প্রযুক্তিপ্রেমী করে তুলবে, অন্যদিকে আপনার জীবনকে করে তুলবে স্বাচ্ছন্দময়।
আর প্রযুক্তির হাত ধরে ই-কমার্স যেভাবে প্রতিমুহূর্তে জনপ্রিয় হচ্ছে, তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার এটিই সঠিক সময়। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আগে হোক আর পরে হোক, প্রায় সব ধরণের ব্যবসাই ডিজিটাল রূপ নিচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রসারে আপনার মতো ডিজিটাল মার্কেটারদের সহযোগীতা লাগবেই।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং পণ্য বা সার্ভিস বিক্রির জন্যে এমন এক ধরণের মার্কেটিং যা ইন্টারনেটের সাহায্যে প্রযুক্তির ব্যবহারে সম্পন্ন করা হয়। এটি মোবাইল ফোন, ডিসপ্লে অ্যাডভার্টাইজিং ও অন্যান্য ডিজিটাল মিডিয়ামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কোন পণ্য বা বিজনেস ব্র্যান্ডকে কাস্টোমারের কাছে পৌঁছানোর জন্যে নানা ধরণের অনলাইন চ্যানেল ব্যবহার করা হয়। আর এটাই মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং যা ইন্টারনেটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মাঝে ডিজিটাল মার্কেটিং ডেভেলপ করে। টেকনোলোজির ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং পণ্য, ব্যবসা, এমনকি ব্র্যান্ডিং এর সংজ্ঞাই পাল্টে দেয়, পাল্টে দেয় ব্র্যান্ডিং করার প্রচলিত পদ্ধতি। ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারে যা যা করতে হয়।
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান, তবে জেনে নিন এই ক্যারিয়ারে আপনাকে কী কী কাজ করতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে একজনের পণ্য বা সার্ভিস অন্যদের কাছে ডিজিটাল্লি পৌঁছে দেয়া। আর এটির জন্যে নানা ধরণের কাজ করতে হয়। তার মাঝে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত কাজগুলো দেখে নিন নিচের তালিকায়-
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাউজেশন (SEO)
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM)
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
কন্টেন্ট মার্কেটিং
কন্টেন্ট অটোমেশন
ক্যাম্পেইন মার্কেটিং
ইমেল মার্কেটিং
ডাটা-ড্রাইভেন মার্কেটিং
সোশ্যাল মিডিয়া অপটিমাইজেশন
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
ই-কমার্স মার্কেটিং
কেন ডিজিটাল মার্কেটিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেবেন?
প্রথমেই বলেছি, বর্তমাণ সময়ে সবার কাছে একটা পণ্য বা সেবা প্রচারের সেরা মাধ্যম ডিজিটাল মার্কেটিং। যারফলে, একটা সাধারণ কোম্পানী থেকে শুরু করে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কিংবা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানী প্রায় সম্পূর্ণরূপেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর নির্ভরশীল। কাজেই, এ সেক্টরে কর্মীর চাহিদা অনবরত বেড়ে চলেছে। সুতরাং, ডিজিটাল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার গড়া যে কারো জন্যেই সহজ ও নিরাপদ এবং সময়যোগী।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্যে বিশেষ কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। কাজেই, আপনি যে বিষয়েই প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নিন না কেন, চাইলে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এ আসতে পারেন। সত্যিকার অর্থে আপনি নিজের অজান্তেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে জড়িয়ে আছেন।
আপনি কি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন না? আপনি কি কাউকে ইমেল পাঠান না? আপনি কি সার্চ ইঞ্জিনে কোন কিছু খুঁজে দেখেন না? অবশ্যই, আপনি এ সবের প্রায় সব কাজই করেন। তবে, সেটার জন্যে আপনার কোন পূর্ব পরিকল্পণা থাকে না, আপনি এমনিই করেন। যখন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেবেন, তখন আপনার কাজই এগুলোই যেগুলো আপনি আগেই করতেন।
আবার, এর মানে এই নয় যে, আপনি কোন কিছু সম্পর্কে ভাসা ভাসা ধারণা নিয়েই সেটি শুরু করে দেবেন। যদি করেন, তবে সফল হওয়ার সম্ভাবণা কমে যাবে। আর যদি জেনে শুনে, ভাল করে বুঝে নিয়ে করেন, তাহলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন। সুতরাং, নতুন কোন কিছু শুরু করার আগে যদি কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে কিছু টিপস অনুসরণ করা যায়, তাহলে সেটি অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়।
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার
যারা এইমুহূর্তে নিজের ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার শুরু করার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য আমরা এখন সেরা কিছু টিপস নিয়ে করব আলোচনা! যে কোন কিছুতেই ভালো করতে চাইলে সেটা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও এটি সত্যি। যেহেতু জনপ্রিয় এবং দ্রুত বর্ধনশীল একটি পেশা তাই এখানে প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। তবে সেই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার একটিই মৌলিক উপায়; সেটি হচ্ছে, প্রতিমুহূর্তে সবকিছু থেকে শেখার আগ্রহ। এসইও, এসইওম, পিপিসি এসব কী জিনিস তা সম্পর্কে জানুন।
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এ প্যাশন হিসবে নিতে পারেন, তাহলে সফলতা আপনার হবেই হবে। আর প্যাশন হিসেবে নেওয়া তখনই সম্ভব হবে, যখন এটি সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত জ্ঞান থাকবে। অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন এ বিষয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়াকে সঠিকভাবে কাজে লাগান
সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির কল্যাণে এখন সারা পৃথিবীতেই পরিচিত অপরিচিত মানুষের সাথে যোগাযোগের বিশাল একটি সুযোগ তৈরী হয়েছে। তাই, আপনি যদি শুধুমাত্র এটিকে সেলফি বা ছবি আপলোড কিংবা সময় কাটানোর একটি মাধ্যম হিসেবে এতোদিন ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে সেই অভ্যাসকে বিদায় জানাতে হবে এখন।
ডিজিটাল মার্কেটিং-এ ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চাইলে মানুষের সাথে স্মার্টলি যোগাযোগ করা শিখতে হবে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মানুষের সাথে সুন্দর যোগাযোগ তৈরী করে, এটিকে কাজে লাগাতে শিখুন।
আমি ফেসবুক মার্কেটিং এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করছি ২ বছরের বেশি সময় ধরে। আমার কাছে এই পেশাটা খুব মজাদার। যদিও আমি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, তারপরও আমার পছন্দ ফেসবুক মার্কেটিং। ফেসবুক মার্কেটিং শিখতে হলে আপনাকে জানতে হবে।
কিছু সাধারণ স্কিল বা দক্ষতা। ধরুন,আপনি একটি কাপড়ের বিজ্ঞাপণ দিয়ে ক্রেতা আনতে চান, বিক্রি বাড়াতে চান, সেক্ষেত্রে যদি টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করতে না পারেন, বা থ্রি পিসের বিজ্ঞাপণে যদি ছেলেদেরও দিয়ে রাখেন সেটা খুব একটা কার্যকরী হবে না। অর্থাৎ পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেওয়ার সময় আপনার বুঝে নিতে হবে এর ক্রেতা কারা, তারপর তাদের টার্গেট করেই বুস্ট বা এডস দিতে হবে। বুস্টের ক্ষেত্রে ‘গেট ম্যাসেজ’ অপশন হলো যেটায় লাইক,কমেন্টের চেয়ে ক্রেতাদের ম্যাসেজ বেশি আসবে।
বর্তমানে এটায় বেশি কার্যকরি বলে আমি মনে করি। আরেকটা আছে ‘পোস্ট ইনগেজমেন্ট’ যেটায় পোস্টে লাইক,কমেন্ট ও বেশী মানুষ দেখবে। পেজের বা পোস্টের বিজ্ঞাপণের রিচ নির্ভর করে সিলেক্ট করা বাজেট ও বিজ্ঞাপণের দিন, অডিয়েন্স বা তাদের বয়স,টার্গেট ইত্যাদি অনুযায়ী। ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে মাসে ২০,০০০ টাকা থেকে .৩ লক্ষ
টাকাও আয় করা সম্ভব! ফেসবুকের ই-লার্নিং সাইট ব্লু-প্রিন্টের মাধ্যমে অনলাইনে ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স করে নিতে পারেন।
এখানে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কোর্স সম্পূর্ণ করে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে অনলাইনেই। পেয়ে যাবেন সার্টিফিকেটও। এছাড়া অনেক ভালো কিছু আইটি কোম্পানি আছে যাদের কাছ থেকেও কোর্সটি শিখে নিতে পারেন। তবে, কাজ শুরুর সময় আপনার দরকার হবে একটি ডুয়েল কারেন্সির অর্থাৎ ডলার দিয়ে পেমেন্ট হয় এমন একটি আন্তর্জাতিক মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ড (ডেবিট/ক্রেডিট)। এছাড়া পেপল একাউন্ট দিয়েও ফেসবুকে বিজ্ঞাপণ দিয়ে ইনকাম করতে পারেন।
নিজেকে আপ-টু-ডেট রাখুন
বর্তমান সময়ে চারপাশের হালচাল কী, বিশেষ করে প্রযুক্তি বিশ্বে এখন কোন বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে, সে সব সম্পর্কে আপনাকে ভালো ধারণা রাখতে হবে। যেহেতু ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড প্রতিমুহূর্তে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই একে কেন্দ্র করে ক্যারিয়ার গড়তে গেলে নিজেকেও রাখতে হবে আপ-টু-ডেট। একদম আপডেট খবরের জন্য টুইটার এবং বর্তমানের মার্কেটিং ট্রেন্ড এর জন্য লিংকডইন ব্যবহার করতে পারেন।
নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরী করুন- এর অর্থ হচ্ছে নিজের পরিচয় অন্যদের সামনে তুলে ধরা। অনেকটা নিজের ঢোল নিজে পেটানোর মতো মনে হলেও এটিই বাস্তবতা। আপনি যদি আপনার দক্ষতা বা যোগ্যতাকে অন্যদের সামনে তুলে ধরতে না পারেন, তাহলে ক্যারিয়ার প্রতিযোগিতায় কখনোই এগিয়ে থাকার সুযোগ পাবেন না।
নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করুন
যেভাবেই দেখুন না কেন, সকল ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জনের জন্য নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বাস্তব জীবন সকল ক্ষেত্রে মানুষের সাথে মিশে যেতে শিখুন, সুন্দর করে কথা বলা শিখুন। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ক্যারিয়ার বিষয়ক ওয়ার্কশপ, সেমিনার ইত্যাদি হয়, সেগুলোতে অংশ নিন।
নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পেলে আপনাতেই দেখবেন নিজেকে আপডেট রাখা বা মেন্টর খুঁজে বের করা বা নিজের ব্র্যান্ডিং করার ব্যাপারগুলো অনেক সহজ হয়ে গেছে।
কোডিং সম্পর্কে অল্প হলেও জ্ঞান রাখুন
এইচটিএমএল বা ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে। এটি আপনাকে আরও একটু সমৃদ্ধ করে তুলবে অন্যান্যদের থেকে। আবারও বলছি, আপনাকে যে একজন ওয়েব ডেভেলপার হতে হবে না, এমনটি নয়। কোন একটি ওয়েবসাইটের অ্যাডমিন প্যানেল কীভাবে কাজ করে কীভাবে ওয়েবসাইটকে আপডেট রাখা যায়, এসব বিষয়ে মোটামুটি ধারণা থাকলেই ক্লায়েন্টের সামনে নিজের যোগ্যতাকে আরও একটু ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।
আগে বা পরে আমাদের চারপাশের সব ব্যবসা-বাণিজ্যই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়বে। সেকারণে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্ষেত্রে কর্মীর চাহিদা অদূর ভবিষ্যতে কমার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আজ থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করে দিন।