ঢেঁড়স আমাদের শরীরে অজান্তেই অনেক উপকার করে৷ ঢেঁড়সের কিছু গুণ রয়েছে যা শরীরকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে৷
ঢেঁড়সে রয়েছে সলিউবল ফাইবার পেকটিন যা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে। ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে অনেক ওষুধ গুণ। এর মধ্যে রয়েছে আঁশ, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে।
ঢেঁড়সের আদি উৎস সুদূর আফ্রিকা মহাদেশের ইথিওপিয়ায়। পরে ধীরে ধীরে তা আরব হয়ে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোসহ ইউরোপ এবং অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশে ঢেঁড়সকে অনেকে ভেন্ডি বা ভিন্ডি বলেও চেনেন। ঢেঁড়স বা ভেন্ডি যে নামেই ডাকা হোক না কেন, অতি সাধারণ সবজিটি যে অসাধারণ পুষ্টিগুণের আধার, সে কথা আমরা কজন জানি? যা জানার পর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ঢেঁড়স রাখতে চাইবেন আপনি।
কোলেস্টেরল কমায়
বাজে কোলেস্টেরল কমায় ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে সলিউবল ফাইবার (আঁশ) পেকটিন, যা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রতিরোধ করে।
ভ্রুণ তৈরিতে
গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ তৈরির জন্য ভালো ঢেঁড়স গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে, মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে।
ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
ঢেঁড়স ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের টিস্যু পুনর্গঠনে ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে
ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। অ্যাজমার লক্ষণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে এবং অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ঢেঁড়স বেশ উপকারী।
ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
ঢেঁড়স কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ঢেঁড়সের উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
ঢেঁড়স রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া আরো প্রয়োজনীয় মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
হজমে সহায়ক
ঢেঁড়সে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ আঁশ যা হজমে সাহায্য করে। পেকটিন অন্ত্রের স্ফীতিভাব কমায় এবং অন্ত্র থেকে বর্জ্য সহজে পরিষ্কার করে।
চুলের যত্নে
ঢেঁড়স চুলের কন্ডিশনার হিসেবে বেশ ভালো। এটি খুসকি দূর করে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য উপকারী।
বিষণ্ণতা দূর করে
ঢেঁড়স বিষণ্ণতা, দুর্বলতা এবং অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।
দৃষ্টি ভালো রাখে
ঢেঁড়সে আছে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন যা চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
রক্তে চিনির মাত্রা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ঢেঁড়সে উপস্থিত ফাইবার বা আঁশ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ ওয়ান, টাইপ টু এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ঢেঁড়স কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ঢেঁড়সে উপস্থিত পলিফেনল রক্ত জমাট বাঁধা এবং ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজ প্রতিহত করে হৃৎপিণ্ডের জটিলতা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া ঢেঁড়সের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের প্রদাহ কমিয়ে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের বড় শত্রু কোলেস্টেরল। ঢেঁড়সের মিউসিলেজ নামের উপাদানটি হজমের সময় কোলেস্টেরলের সঙ্গে মিশে গিয়ে একে দেহ থেকে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।
কীভাবে খাবেন?
ঢেঁড়স নানাভাবে খাওয়া যেতে পারে। ভর্তা, ভাজি, ঝোলের তরকারি ইত্যাদি। তবে অল্প তেল এবং অল্প মসলায় রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় কম। ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েটে ঢেঁড়স অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হলেও যাঁদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা আছে, তাঁদের নিয়মিত ঢেঁড়স খাওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে পরিমাণ কতটুকু হবে, তা জেনে নেওয়া ভালো।