চলতি বছরও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চরম তাপপ্রবাহ জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দাবানলের প্রকোপে অনেক জঙ্গলের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কিছু মানুষ এমন বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
প্রতি বছর দাবানলের কারণে লাখ লাখ হেক্টর জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যায়। সেইসঙ্গে প্রায় ৮০০ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনও ঘটে, যা বিশ্বব্যাপী সিওটু নির্গমনের প্রায় ২০ শতাংশের সমান। বিশাল মাত্রার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়।
ড্রিয়াড নেটওয়ার্ক্সের কর্ণধার কার্স্টেন ব্রিংকশুল্টে বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি প্রথমবার টেলিভিশনের পর্দা, সংবাদমাধ্যমে অ্যামাজন অঞ্চল, অস্ট্রেলিয়ায় বিশাল দাবানল দেখেছিলাম। ফ্রাইডেস ফর ফিউচার আন্দোলন পথে নেমেছিল, আমার নিজের মেয়েও তাতে সামিল হয়েছিল। সেই প্রাথমিক ধাক্কা খেয়ে মনে হয়েছিল, আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।’
যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। বিজ্ঞানী, সফটওয়্যার ও কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের এক টিম গড়ে তুলে তিনি যতটা আগে সম্ভব দাবানল শনাক্ত করার লক্ষ্যে নতুন এক সিস্টেম সৃষ্টি করেন। গন্ধ টের পায় এমন বিশেষ সেন্সর আলট্রা আর্লি ডিটেকশন সম্ভব করে। এক অর্থে সেগুলো অত্যন্ত উন্নত যান্ত্রিক নাক।
কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে ইয়ুর্গেন ম্যুলার অনেক বছর ধরে একই ধরনের সিস্টেম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। এক পরীক্ষামূলক জঙ্গলে তিনি নতুন সেন্সরের কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন। তিন মিটার উচ্চতায় দক্ষিণ দিকে মুখ করে সৌরশক্তিচালিত সেন্সর বসানো আছে।
অত্যন্ত কম আলো থাকলেও সেটি কাজ করে। ছায়ায় ঢাকা জঙ্গলে সেটা খুব জরুরি। কন্ডেন্সরের সাহায্যে সেই ‘ইন্টেলিজেন্ট নোজ’ এমনকি রাতে ও বৃষ্টির সময়েও কাজ করে। কিন্তু ক্ষুদ্র সবুজ বস্তুটি ঠিক কীসের গন্ধ পায়? ফরেস্ট ইকোলজিস্ট ড. ইয়ুর্গেন ম্যুলার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বাতাসে নানা ধরনের উপাদান রয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মোনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফেট এবং নোবেল গ্যাস। সেন্সর সে সব পরিমাপ করে। যে মুহূর্তে বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নেওয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের মিশ্রণও স্বাভাবিকভাবে বদলে যায়। আর এটি পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে নির্দিষ্ট অবস্থান জানিয়ে দেয়। এই প্রণালী আদর্শভাবে কাজে লাগাতে হলে জঙ্গলজুড়ে একশো মিটার দূরত্বে একটি করে সেন্সর বসাতে হবে।’
নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্লাউড সার্ভারে তথ্য পাঠানো হয়। কাগজে কলমে সেই প্রযুক্তি ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ নামে পরিচিত হলেও কার্স্টেন ব্রিংকশুল্টে ভালোবেসে সেটির নাম রেখেছেন ‘ইন্টারনেট অব ট্রিস’৷
কার্স্টেন ব্রিংকশুল্টে মনে করিয়ে দেন, ‘বিশ্বের বড় জঙ্গলগুলোতে সাধারণত টেলিকম কোম্পানিগুলোর কোনও টাওয়ার থাকে না। অর্থাৎ ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল কোনও প্রযুক্তি সেখানে প্রয়োগের অর্থ নেই। আমাদের নিজেদের যোগাযোগের অবকাঠামোর প্রয়োজন। সেটি আবার সৌরশক্তিচালিত হতে হবে। এছাড়া বড় এলাকাজুড়ে সেটা কার্যকর হতে হবে। এই মেশ-গেটওয়ের মাধ্যমে আমরা ঠিক সেটাই সম্ভব করেছি। এর মাধ্যমে আমরা জঙ্গলের মধ্যে দুই কিলোমিটার রেঞ্জে যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছি। এবার ধাপে ধাপে জঙ্গলের আরও গভীরে প্রবেশ করবো।’
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%93%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%b2-%e0%a6%9c%e0%a6%97%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8/
ছোট ও বুদ্ধিমান যান্ত্রিক নাক লোকবল ছাড়াই অনেক কাজ করতে পারে। কাজও বেশ দ্রুত করে। ড. ইয়ুর্গেন ম্যুলার বলেন, ‘ কন্ট্রোল রুমে সহকর্মীরা এই গন্ধ চিনতে পারেননি। আমি পরীক্ষা চালালে কন্ট্রোল রুমে জানিয়ে দেই। তারপর কিছুটা ধূর্ত হয়ে প্রশ্ন করি, তোমরা কি আগুন দেখেছো? দেখো নি? অর্থাৎ অপটিকাল সিস্টেম তখনই ধোঁয়া চিনতে পারে, যখন সেই ধোঁয়া গাছের মগডালের ওপর উঠে যায়।’