ঘরে নকল মেঝে বা ফলস ফ্লোর যোগ করে সৌন্দর্যের ভিন্নমাত্রা। গতানুগতিক ঘরের মেঝের বাইরে নান্দনিক বিভিন্ন নকশার মেঝের কারুকার্য অন্দরমহলে এনে দেয় নান্দনিকতার ছোঁয়া। ফলস পাথর, কাঠ, টাইলস অথবা মোজাইকের উঁচু স্তরবিশিষ্ট মেঝে ঘরের একটা অংশ পুরোপুরি আলাদা করে দেয়; যা ঘরের নির্দিষ্ট কোনো অংশকে বিশেষভাবে নজরে আনে। হতে পারে সেটা বসার ঘরের সোফার জায়গা অথবা খাবার টেবিলের স্পেসটি অথবা শোয়ার ঘরের বিছানার জায়গা কিংবা হতে পারে সেটি বারান্দায় যাওয়ার জায়গাটিও। কোথায় কীভাবে নকল মেঝে বসাবেন সেটা পুরোপুরি নির্ভর করছে আপনার সৌন্দর্যবোধের ওপর।
ঘরের এসব নকল মেঝের কারুকার্য সম্বন্ধে জানিয়েছেন শান্ত-মারিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের প্রভাষক মোহাম্মদ আবিদ আবান অভিক।
মেঝের ভিন্নতা
অস্থায়ী মেঝের জন্য কাঠের ব্যবহার বেশ কার্যকর। চাইলেই যেকোনো সময় আপনি এর ডেকোরেশন বদলে নতুনভাবে কাঠামো বানাতে পারেন। টাইলসের ক্ষেত্রে, উঁচু করে সিমেন্টের স্তর বানিয়ে তার ওপর বিভিন্ন ডিজাইনের টাইলস লাগাতে পারেন। ঘরের রং বদলাতে চাইলে পরবর্তী সময়ে টাইলস বদলে নিতে পারেন। টাইলসের রং ও ডিজাইনের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। তাই অনেকেই বাড়ির বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের টাইলস ব্যবহার করে থাকেন।মোজাইকের ক্ষেত্রেও এমনটি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পরে আর ডেকোরেশনের প্রয়োজন নেই। টেকসই ও আভিজাত্যের ভাব থাকায় অনেকেই মোজাইকের মেঝে করে থাকেন। মেঝের ডেকোরেশনের মধ্যে আপনি চাইলে স্টোরেজও বানাতে পারেন। উঁচু ফাঁকা জায়গাটিতে কোনো কিছু রাখার জন্য বক্স করতে পারেন। ড্রয়ার স্টাইলের এসব বক্স চাইলে কাঁচের গ্লাস দিয়ে ডেকোরেট করতে পারেন। আধুনিক এসব মেঝে শুধু স্টাইল আর সাজানোর জন্যই নয়, এ থেকে ভালো স্টোরেজ সুবিধাও পাওয়া যাবে।
মেঝের মাপ
এ ধরনের মেঝে সাধারণত দুই ইঞ্চি (৫১ মিলিমিটার) থেকে চার ফুট (১২ মিলিমিটার) পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। আরামদায়ক এবং আধুনিক নকশা অনুযায়ী সাধারণত ১০ ইঞ্চি (২৫০ মিলিমিটার) উঁচু মেঝে দেখতে বেশ স্টাইলিশ লাগে।
জায়গাবিশেষ
ঘরের সব জায়গায় এ ধরনের মেঝে ভালো লাগে না। লিভিং রুমের সোফা রাখার জায়গাটিতে এমন মেঝে তৈরি করে নিতে পারেন। এতে সোফাগুলো হাইলাইট হবে। চাইলে তিনটি স্টেপ বা সিঁড়ি দিয়ে স্পেসটি তৈরি করতে পারেন। এতে দেখতেও ভালো লাগবে আবার সিঁড়িগুলো বক্সের মতো ব্যবহারও করতে পারবেন। ডাইনিং টেবিলকে পুরো ঘরের ডেকোরেশন থেকে আলাদা করতে চাইলে এর নিচে পুরোটা রেইজড বা ফলস মেঝে বানিয়ে নিন; যা সম্পূর্ণ ঘর থেকে আপনার ডাইনিং রুমকে আলাদা জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করবে। বেডরুমে আপনি চাইলে পুরো বিছানাই ফলস মেঝের ওপর করতে পারেন। এতে আলাদা করে খাট বা বিছানা কিনতে হবে না। বিছানাটিকে পুরোপুরিভাবে সেট করে নিতে পারেন। এতে করে জায়গাও বাঁচবে আবার দেখতেও স্টাইলিশ লাগবে। বাচ্চাদের ঘরের বিছানা ফলস মেঝের মধ্যে ড্রয়ার স্টাইলে করতে পারেন। এতে ঘুমানোর সময় শুধু ড্রয়ারের মতো বের করে নিলেই হবে। আবার রুমের একটা অংশের মেঝে একটু উঁচু করে বানালে তাতে বই বা খেলনা রাখার জায়গা বানাতে পারেন। স্টাডি রুমেও এমন মেঝেতে কেবিনেট বানাতে পারেন বই রাখার জন্য। এতে জায়গা নষ্ট হবে কম। টিভির নিচের জায়গাটিও এমন মেঝে বানিয়ে তাতে কেবিনেট দিতে পারেন। এসব কেবিনেটে সিডি বা ম্যাগাজিন রাখতে পারবেন।
লাইফস্টাইল-বিষয়ক ওয়েবসাইট লাসহোমে ফলস বা রেইজড ফ্লোরের কারুকার্য, ডিজাইন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
• বাসা ছাড়াও বাসার বেজমেন্ট, বিভিন্ন স্টুডিও, এমনকি ছোট ছোট বেডরুমের স্পেস বাড়াতে এমন মেঝে বেশ উপকারী।
• এসব মেঝে স্টোরেজের জন্য খুবই ভালো, যা প্রয়োজনের সময় বেশ কাজের এবং জায়গা নষ্ট না করে স্টাইলিশ লুকও এনে দেয়।
• ঘরের যে কোনো কোনাকে হাইলাইট করতে এই মেঝে বানাতে পারেন। খুব সহজেই জায়গাকে ফোকাস এবং ব্যবহারযোগ্য করে তোলে।
• মেঝের ড্রয়ারগুলো বিভিন্ন রঙের করতে পারেন। এতে দেখতে বেশ বর্ণিল লাগবে।
• এসব ড্রয়ার বা কেবিনেটে চাইলে স্পট লাইট লাগাতে পারেন।
• টাইলস বা মোজাইকের এসব মেঝে প্রতিদিন পানি দিয়ে মোছার পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত একদিন লিকুইড ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a7%ab-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a8/
• কাঠের মেঝে প্রতিদিন পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে এর রং উঠে যাবে এবং কাঠ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
• মেঝের দাগ বা স্যাঁতসেতে ভাব দূর করতে সপ্তাহে একদিন গরম পানির সঙ্গে লেবুর রব মিশিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন