বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্যের আদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম রুপে নেটওয়ার্কিং সবার কাছে পরিচিত। তাই নেটওয়ার্ক কি ও কিভাবে কাজ করে তা জেনে রাখা উচিত আপনার দৈনন্দিন কাজের জন্য। কারন এর সাহায্যে আপনি দ্রুততম সময়ে ডাটা বা যেকোনো ফাইল, ছবি প্রভৃতি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠাতে পারবেন।
তথ্যের এই সব খুটিঁনাটি আর প্রয়োগবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে চলুন আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন এক নিমিষেই। যাতে আপনার কাজ কর্মে তা আরও ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারেন।
নেটওয়ার্ক এর অর্থ কি?
দুই বা একাধিক কম্পিউটার তার বা তরঙ্গের মাধ্যমে পরষ্পরের সাথে যুক্ত হতে পারে। আর এর ফলে তারা পারষ্পরিক তথ্যের পাঠাতে পারে, আর একেই সহজ ভাষায় নেটওয়ার্ক বলে। এই পদ্ধতিতে অনেকগুলো ডিভাইসকে একই সাথে সংযুক্ত করে কার্য পরিচালনা ও তথ্যের আদান-প্রদান সম্ভব হয় নিমিষেই।
যার ফলে যোগাযোগ মাধ্যম গতিময়তা লাভ করেছে। আর তাই খুব অল্প সময়ের ভিতর আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন ঝামেলাবিহীন ভাবে। নেটওয়ারর্কিং এর আওতাভুক্ত সব ডিভাইসকে নোড (node) বলা হয়। সংযোগকৃত অন্যান্য মাধ্যমগুলো হল অপটিক্যাল ফাইবার, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, প্রভৃতি।
নেটওয়ার্ক এর ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো কি?
বিভিন্ন ডিভাইস পরষ্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়। তার জন্য নেটওয়ার্কিং ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোর হলঃ
Computer
Smartphone
Firewalls
Bridges
Repeaters
Modem
Switches
Routers
Hubs
Network Interface Cards
Consoles
এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া প্রয়োজন। কারন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই দুইয়ের প্রভাব অনেক।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরিতে নোড এর প্রয়োজন হয়। কারন এর মাধ্যমেই একটি ডিভাইস অন্য ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম লাভ করে। সার্ভার দ্বারা কয়েকটি কম্পিউটার একসাথে নেটওয়ার্কিং এর আওতাভুক্ত থাকে।
সার্ভারে তথ্য যা আদান প্রদান করা হয় তা সংরক্ষিত থাকে। এতে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।
মোবাইল নেটওয়ার্ক কি?
আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত মোবাইলের সাহায্যেও আজকাল প্রায় সব তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হয়। ডাটা ব্যবহার, ইন্টারনেট সংযোগ বা ব্লুটুথ দিয়ে তথ্য, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে প্রেরণ করা যায় মুহুর্তেই।
তাই দিন দিন মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা উন্নতি হচ্ছে। এর ফলে আপনি ৫ জি ব্যবহার করতে সক্ষম ন্যানো সেকেন্ডেই তথ্য এক স্থান হতে অন্য স্থানে পাঠাতে পারছেন।
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর নাম কি?
ARPANET হল বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। এখানে লার্জ স্কেল, জেনারেল পারপোজ কম্পিউটার ছিল। যার সাহায্যে বিভিন্ন কম্পিউটার এর সাথে যুক্ত করা যেত। সর্ব প্রথম ‘node to node’ এর মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে এক কম্পিউটার এর সাথে অন্য কম্পিউটার এর সংযোগ স্থাপন করা হয়।
আজকের এই ডিজিটাল বিশ্বে অক্টোবরের ২৯ তারিখ এক বিশেষ দিবস রুপে সবার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। কারন এই মাধ্যমেই আজকের এই পৃথিবী এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি?
কতটি ডিভাইসের সাথে যুক্ত হবে, তার সাইজ, লোকেশন প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্ককে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. PAN ( personal area network)
এই নেটওয়ার্ক একটি ছোট সীমাবদ্ধ জায়গায় নেটওয়ার্ক স্থাপন করে। এর সাথে আপনি টেলিফোন, ভিডিও গেমস কন্সোল সহ নানাবিধ ডিভাইস যুক্ত করতে পারেন।
ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাপনার জন্য এটি বেশি ব্যবহার করা হয়।
এই নেটওয়ার্ক এর রেঞ্জ সবোর্চ্চ ১০ মিটার। আর তাই এই এরিয়ার ভিতর ব্যক্তি তার যোগাযোগ পরিচালনায় সক্ষম হয় প্যান এর মাধ্যমে।
২. HAN( home area network)
হোম এরিয়া নেটওয়ার্ক প্যান এর মতো হলেও এর মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। এখানে কম্পিউটার গুলো নিজেদের ভিতর নেটওয়ার্ক স্থাপন করে তথ্য শেয়ার করে। ছোট অফিস বা বাসায় এর ব্যবহার অধিক।এর ব্যবহৃত devices হলঃ মোবাইল, স্মার্টটিভি, প্রিন্টার প্রভৃতি।
৩. LAN( local area network)
এইক্ষেত্রে একটি নেটওয়ার্ক এর পরিধি একটু বেশি। তবে তাও নির্দিষ্ট এরিয়ার ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকে। সাধারণত অফিস, স্কুল, কলেজ, বা ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর প্রাধান্য বেশি। এইখানে নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা PAN ও HAN থেকে বেশি। তাই লোকাল এরিয়ায় মানুষের কাছে জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিনত হয়েছে।
৪. WAN( wide area network)
আপনি যখন বড় কোন networking connection এর সাথে যুক্ত থাকতে চাইবেন তখন আপনাকে wide area network এর ব্যবস্থাপনায় থাকতে হবে। না হয় তথ্য আদানে সমস্যার সম্মুখীন হবেন। বড় কোন স্থানকে এক সাথে নেটওয়ার্ক এর অধীনে পরিচালিত করতে হলে এটি ব্যবহার করা আব্যশিক।
এই ব্যবস্থায় ছোট ছোট নেটওয়ার্ক একটি বড় নেটওয়ার্ক এর অধীনে জালের মতো যুক্ত করে রাখে। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ককে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক এর অধীনে পরিচালনা করা সম্ভব। করপোরেট, মাল্টিন্যাশনাল, ব্যাংকিং প্রভৃতিতে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। এটি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সংযোগ মাধ্যম।
৫. MAN( metropolitan area network)
মেট্রোপলিটন নেটওয়ার্ক হল LAN ও WAN এর মধ্যবর্তী। এটি অল্প জায়গায় সংযোগ স্থাপনে সক্ষম। সাধারণত মেট্রো শহরে বা স্টেশনে এই নেটওয়ার্ক এর আওতাভুক্ত থাকে।
এটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর আওতায় বড় নেটওয়ার্ক তৈরিতে সক্ষম হয়।
নেটওয়ার্ক কিভাবে তৈরি হয়?
কানেক্টিভিটির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। যেখানে অনেকগুলো নেটওয়ার্ক এক সাথে পরষ্পরের সাথে মিলিত হয়ে কাজ করে। নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য সাধারণত ৫ টি জিনিস এর প্রয়োজন হয়।
Sender বা প্রেরক
Receiver বা প্রাপক
Message বা তথ্য
Protocol বা চুক্তি
Transmission Media বা হস্তান্তর মাধ্যম
এই প্রত্যেকটির সাহায্যে আপনি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা পরিচালিত করতে পারবেন সহজেই।
প্রেরকঃ
যে বার্তা প্রদান করবে তাকে sender বা প্রেরক বলা হয়। যোগাযোগ এর অন্যতম মাধ্যম হল প্রেরণকারি। যার মাধ্যমে তথ্য এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাবে।
প্রেরকের মাধ্যমেই প্রথম নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয় অন্য ডিভাইস এর সাথে।
প্রাপকঃ
তথ্য প্রেরণ করা হলে তা অন্য ডিভাইসে প্রাপক গ্রহণ করে। আর ডাটা বা ফাইল আদানের এর থেকে সহজ উপায় আর একটিও নেই। শেয়ারকৃত তথ্যাবলী যদি প্রাপক বুঝে না পায় তবে নেটওয়ার্কিং সম্ভব হবে না ডিভাইসগুলো মধ্যে।
তথ্যঃ
সাধারণত তথ্য বলতে আমরা ডাটা বুঝি। তবে তথ্য বলতে ছবি, ভয়েস, ভিডিও, লিখা, ডকুমেন্ট ইত্যাদি ও বুঝায়। আমরা এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে এই তথ্য প্রেরণ করি যোগাযোগ স্থাপন করে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার জন্য।
চুক্তিঃ
প্রত্যেকটি ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে সংগঠিত করতে কিছু চুক্তির প্রয়োজন হয়। যার সাহায্যে স্বচ্ছভাবে কার্য সামাধান করা হয়। আর প্রোটোকল নির্ধারণ করে দেয় কিভাবে প্রাপক তথ্য পাঠাবে আর গ্রহীতা কিভাবে তা গ্রহণ করবে।
আর এই জন্য তারা কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি জারি করে যেন তার মাধ্যমে আমরা কোন ঝামেলা ছাড়া যোগাযোগ করতে পারি।
হস্তান্তর মাধ্যমঃ
এক ডিভাইস এর সাথে অন্য ডিভাইসে যুক্ত হতে কিছু মাধ্যমের প্রয়োজন হয়, যা ট্রান্সমিশন মিডিয়া নামে পরিচিত। এটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড কারন এর মাধ্যমেই সব কিছু পরিচালিত হয় সুষ্ঠু রুপে। যেমনঃ ক্যাবল, তার, রেডিও ওয়েভ, ফোন লাইন, কোক্সাইল ক্যাবল প্রভৃতি।
নেটওয়ার্কিং এর সুবিধা কি?
রিসোর্স শেয়ারিং
দ্রুত তথ্য প্রেরণ
নির্ভরযোগ্যতা
আপনার প্রয়োজনীয় সকল ডাটা, ছবি, ফাইল, ভিডিও সবার সাথে মূহুর্তেই শেয়ার করতে পারবেন এই ব্যস্থায়। আর এতে নির্দিষ্ট প্রোটকল যুক্ত থাকায় তা মেনে চললে তথ্য চুরির সম্ভাবনা থাকে না। দ্রুত তথ্যের জন্য তাই নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হল নেটওয়ার্কিং।
নেটওয়ার্ক প্রটোকল কি?
যেকোনো নেটওয়ার্ক পরিচালনায় কিছু নিয়ম নীতি থাকে। আর এই নিয়ম নীতিকেই প্রটোকল বলে। যার সাহায্যে সুষ্ঠুভাবে যেকোনো যোগাযোগ পরিচালনা করা যায়।
কিছু উল্লেখযোগ্য নেটওয়ার্ক প্রটোকলের নাম হলঃ
TCP
IP
IPX/ SPX
NetBEUI
HTTP
FTP
আজকের এই উন্নত বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ করার মাধ্যম হল নেটওয়ার্ক। তাই নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত বিষয়ে জেনে কাজ করা ভালো। কারন আপনার জীবনের একটি অভেদ্য অংশ এই যোগাযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে আপনার সামাজিক ও অফিসিয়াল সব কাজ পরিচালিত হয়।