বাংলাদেশের আশপাশে ঘোরার মতো দেশগুলোর মাঝে অন্যতম হলো নেপাল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সুস্বাদু স্থানীয় খাবার ও রোমাঞ্চকর অ্যাক্টিভিটি মিলিয়ে এই দেশটির আকর্ষণই অন্যরকম। তাছাড়া বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বিনামূল্যে পাওয়া যায় দেশটিতে পৌঁছানোর পর। নেপালের প্রতিটি শহর থেকেই দেখা যায় মহিমাম্বিত হিমালয় পর্বতমালার অংশবিশেষ।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণ উত্থানের সাথে সাথে নেপালে পর্যটনের জনপ্রিয়তাও এখন ঊর্ধ্বমুখী। তাই আজ আপনাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি নেপাল ভ্রমণের সব ধরনের খুঁটিনাটি টিপস।
কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে নেপাল যাওয়ার দুইটি পথ আছে। একটি সড়কপথ, অন্যটি বিমান।
কিন্তু কার্যকরীভাবে বিমানে যাওয়াটাই একমাত্র সম্ভবপর পন্থা। কারণ সড়কপথে যাওয়ার প্রক্রিয়াটায় প্রায় ২-৩ দিন সময় রাস্তায় চলে যায়।
তবে ফ্লাইটের কথা শুনে ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই। নেপালের সরাসরি ফ্লাইট এখন বাংলাদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকেই পাওয়া যায়।
তাই স্বল্প খরচে নেপাল পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। খরচ কমানোর সবচেয়ে ভালো পন্থা হল ঘুরতে যাওয়ার আগে ঠিকমত খোঁজখবর নিয়ে যাওয়া। সাধারণত ৩-৪ সপ্তাহ আগে বুকিং করলে খরচটা একটু কমে পাওয়া যায়। শেষ মুহূর্তে বুকিং করলে খরচ তো বাড়েই, তার ওপর টিকেট না পাওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। সচেতনভাবে আপনার ফ্লাইট বুকিং করতে দেখে নিতে পারেন গোযায়ান।
সম্পূর্ণ অনলাইনে বিভিন্ন তারিখে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের দামের মাঝে যাচাই বাছাই করে বুক করে নিতে পারবেন নিজের ফ্লাইটটি। সাথে ফ্লাইটের যাবতীয় সব তথ্য- যেমন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, অনুমোদিত ব্যাগেজ ইত্যাদিও জেনে নিতে পারবেন। তুলনা করে দেখার সুযোগ থাকায় নিজের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী ফ্লাইটই বুকিং করা যাবে এখানে। তাছাড়া গোযায়ান এ আছে ০% ই এম আই সুবিধাও। এটা ব্যবহার করে ফ্লাইটের খরচটা এককালীন না দিয়ে, কিস্তিতে পরিশোধ করা সম্ভব।
নেপালে যেহেতু থাকা খাওয়ার খরচ একেবারেই কম, কিছুটা বেশি খরচ করে ফ্লাইটেই চলে যাওয়া যায়। তাই স্বল্প বাজেট রাখলেও ভালোভাবেই নেপাল ঘুরে আসা সম্ভব।
কোথায় ঘুরবেন
নেপালে যেয়ে প্রথমতই রাজধানী কাঠমুন্ডুতে ফ্লাইট অবতরণ করে। কাঠমুন্ডুতে আছে পবিত্র এবং ঐতিহাসিক বেশ কিছু স্থপত্যের নিদর্শন। সাধারণত এইগুলো ঘুরে দেখার পর পর্যটকরা দেশটির অন্যান্য শহরের দিকে রওনা হন। কাঠমুন্ডু সমগ্র শহর জুড়েই দেখা যায় সুক্ষ্ম কারুকার্য খচিত কাঠের বাড়ি এবং প্রাচীন মন্দির। পুরাকালীন স্থপত্য এবং আধুনিক জীবনধারার সুন্দর মেলবন্ধন বিদ্যমান এই শহরটিতে। ধুপকাঠির ঘ্রাণ নিজের আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে কাঠমুন্ডুর আনাচে কানাচে। অনেকের জন্যই কাঠমুন্ডু একটি আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা, আবার অনেকের জন্য শহুরে জীবনের আনন্দ উপভোগ করার জায়গা। রাজধানী শহরটি শুধুমাত্র ঐতিহ্যগত তাৎপর্যই নয়, শহুরে সবধরনের উত্তেজনাও বহন করে।
কাঠমুন্ডুর পরেই নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর পোখারা। হিমালয়বেষ্টিত নেপালের সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর মাঝে একটি এটি। ছবির মতো সুন্দর পোখারা “লেকের শহর” নামেও পরিচিত। ধাউলাগিরি, মানাস্লু, অন্নপূর্ণা ১ -পৃথিবীর বৃহত্তম কিছু পর্বত। এই পর্বতগুলোই কাছে থেকে ঘিরে রেখেছে পোখারা শহরটিকে। তাই নেপালের অন্যান্য জায়গার তুলনায় পোখারা থেকে দৃশ্যগুলো একটু বেশিই সুন্দর। তাছাড়া জনপ্রিয় অন্নপূর্ণা রেঞ্জ ট্রেকিং এর ক্ষেত্রেও পোখারা থেকে যাত্রা শুরু করা লাগে। তাই পর্বতারোহীদের জন্যও শহরটি বেশ জনপ্রিয়।
ট্রেকিং করার ইচ্ছা থাকলে নেপাল ভ্রমণটা আবার একটু ভিন্নভাবে সাজাতে হয়। অন্নপূর্ণা সার্কিট, পুন হিল, ল্যাংটাং অঞ্চল ইত্যাদি এলাকা পর্বতারোহীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া আছে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অ্যাক্টিভিটি যেমন- ভোটে কোশী নদীর উপর বাঞ্জি লাফ, ত্রিশূলী নদীতে র্যাফটিং, জিপ লাইনিং, মাউন্টেন বাইকিং ইত্যাদি। দেশটি অত্যধিক উচ্চতা বিশিষ্ট হওয়ায় এখানে রোমাঞ্চকর অ্যাক্টিভিটির অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। অ্যাডভেঞ্চারের খোজে থাকলে, অবশ্যই এই ছুটিতে নেপাল ঘুরে আসা দরকার।
কি খাবেন?
পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া, চায়না এবং তিব্বতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় নেপালের রন্ধনপ্রণালীতে। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও, ডাল ভাতই নেপালের জাতীয় খাবার। বাংলাদেশিদের জন্য এই নামটা সুপরিচিত। তবে বাংলাদেশের ডাল ভাত থেকে নেপালের খাবারটিতে মশলার ব্যবহার কিছুটা ভিন্ন।
আরেকটি খুবই জনপ্রিয় খাবার হল মোমো। রাস্তার পাশের কার্ট থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত এখানে মোমোর জয়জয়কার। বিভিন্ন ধরনের মোমোর মাঝে পাওয়া যায় সবজি, মুরগির মাংস এবং মহিষের মাংসের পূর। মোমোর সাথে আরো থাকে বিভিন্ন ধরনের মজাদার সস।
আরেকটি সুস্বাদু নেপালি খাবার হলো সুকুতি। এটি বানাতে শুকনো মাংসকে আদা, পেয়াজ, মরিচ, রশুন দিয়ে রান্না করা হয়। সুকুতি নেপালের বেশ জনপ্রিয় একটি নাস্তা। আরো আছে নেপালি চোইলা। গ্রিল করা মহিষের মাংসের সাথে চিড়া, মশলাপাতি ইত্যাদি যোগ করে এটি তৈরি হয়। দেশটিতে সাধারণত গরুর মাংস, দুধ ইত্যাদি পাওয়া যায় না। এটার একটি ভালো বিকল্প হিসেবে মহিষ ব্যবহার করা হয়। মহিষের দুধের তৈরি বিশেষ দই বা “জুজু ধাউ” খুবই সুস্বাদু এবং সমৃদ্ধ একটি খাবার।
নেপাল ঘুরতে যাওয়ার জন্য ভ্রমণের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতের মাসগুলোতে না গেলে হিমালয় পর্বতমালার সৌন্দর্য হয়তো মেঘেই ঢাকা পাবেন। আবার বেশি শীতের সময় গেলে কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন থাকবে সুবিশাল পর্বতগুলো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্তই নেপাল ঘুরে আসার সেরা সময়। তাই দেরি না করে এখনই পরিকল্পনা করে ফেলুন নেপাল ভ্রমণের খুঁটিনাটি।