ইতিহাদে ম্যানচেস্টার সিটির ভক্তরা হাজির করেছিলেন বিশাল এক টিফো। যেখানে রদ্রির ব্যালন ডি’ অরের ছবি। আর তাতে লেখা, ‘তোমাদের কান্না এবারে থামাও।’ কিন্তু সেই ব্যানারটাই আসলে রিয়াল মাদ্রিদকে তাঁতিয়ে দিলো কি না অনেকটা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা এখন অবান্তর। তাইতো আবারও পুরনো গল্পই নতুন করে লিখলেন রিয়াল। রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচটা তো জিতেছেই, বরং ক্যামেরার সামনে নিজেদের ব্যাজ দেখিয়ে ভিনিসিয়ুস মনে করিয়ে দিলেন লস ব্লাঙ্কোসদের ট্রফি ক্যাবিনেটে ১৫টা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এখনো শোভাবর্ধন করে।
তবে ম্যাচটা রিয়াল যেভাবে জিতেছে সেটা নিয়েই বরং আরও বেশি আলোচনা হতে পারে। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যানসিটি এগিয়ে ছিল ২-১ গোলে। সেখান থেকে যোগ করা সময় মিলিয়ে মোট ৬ মিনিটের মাথায় রিয়াল বদলালো ম্যাচের ভাগ্য। বিশ্বব্যাপী চলমান ভালোবাসার সপ্তাহে, রিয়াল মাদ্রিদ যেন বাধ্য করলো ফুটবলকে আরও একটু বেশি ভালোবাসতে।
আর্লিং হালান্ডের জোড়া গোলকে এদিন ব্যর্থ করেছেন রিয়ালের তারকারা। গোল পেয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে, ব্রাহিম দিয়াজ আর জ্যুড বেলিংহাম। ৩–২ গোলের জয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর পথে খানিকটা এগিয়ে গেল কার্লো আনচেলত্তির দল। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্লে–অফ পর্বের ফিরতি লেগের ম্যাচটা আবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে।
ম্যাচের শুরুটা একেবারেই চিরচেনা আপনার জন্য। ম্যানচেস্টার সিটি নিজেদের পজেশনভিত্তিক ফুটবলের চূড়ান্ত রূপ দেখিয়ে দখল করেছে মাঠের নিয়ন্ত্রণ। আর সেটার সূত্র ধরেই ম্যাচে তাদের এগিয়ে যেতে সময় লেগেছে মোটে ১৯ মিনিট। জ্যাক গ্রিলিশের একটা দারুণ ক্রস, সেটাকে বুক দিয়ে আলতো টাচে হালান্ডের দিকে বাড়িয়ে দেন ইউস্কো গাভার্দিওল। হালান্ড আর অত সহজ সুযোগ মিস করেননি।
রিয়াল মাদ্রিদের জন্য ওটাই যেন ছিল ঘুম ভাঙানোর অ্যালার্ম। ২৫ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারতো তারা। কিন্তু ভিনিসিয়ুসের শট পোস্টে লেগে ফিরলে হতাশ হতে হয়। এরপরেই সিটির জন্য বিপদ বাড়ায় গ্রিলিশের চোট। দারুণ খেলতে থাকা এই উইঙ্গার মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ইনজুরির কারণে। বদলি নেমে ফিল ফোডেনও পেয়েছিলেন দলকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ। তবে বাধার প্রাচীরের নাম থিবো কর্তোয়া।
প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ে। কিন্তু অরক্ষিত কিলিয়ান এমবাপে কী ভেবে যেন মিস করে গেলেন ম্যাচের সেরা সুযোগটা। সিটির গোলকিপার এদেরসনকে এক পেয়েও বল উড়িয়ে মারেন তিনি। বিরতি থেকে ফিরেও ৫৪ মিনিটে মিস করেন সহজ সুযোগ।
আর সেই দুই মিসের প্রায়শ্চিত্ত যেন করলেন ৬০ মিনিটে অপেক্ষাকৃত কঠিন এক গোল করে। ফেদে ভালভের্দের ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে যান দানি সেবায়োস। তার উঁচু করে বাড়ানো বলে শট নেন এমবাপ্পে। ঠিক সাইড ভলিও হয়নি। তবে কাজের কাজটা ঠিকই হয়েছে। বল জড়ায় সিটির জালে। ম্যাচে ফেরে ১-১ সমতা।
পরের ১৫ মিনিটে দারুণ খেললেও ৮০ মিনিটে ভুল করে বসে স্প্যানিশ দলটা। ফোডেনকে ফাউল করে সিটিকে পেনাল্টি উপহার দেয় রিয়ালের রক্ষণ। স্পটকিকে গোল করে ম্যাচে দলের লিড এনে দেন হালান্ড।
৮৪ মিনিটে রদ্রিগোর বদলি হিসেবে নামান ব্রাহিম দিয়াজকে। আর এখান থেকেই শুরু রিয়ালের কামব্যাকের গল্প। মাঠে নামার ২ মিনিটের মধ্যে গোল করে বসেন দিয়াজ। জটলার ভেতর বল পেয়ে জোরালো শটে সিটির জাল কাঁপিয়েছেন। তবে গোলটা সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে, তাই উদযাপন করেননি তিনি।
সিটির দুর্দশা বাড়িয়েছে রিয়াল আরও কয়েক মিনিট পর। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সিটির প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেন রিয়ালের জ্যুড বেলিংহাম। বল নিয়ে ছুটতে থাকা ভিনিসিয়ুস রিকো লুইস আর রুবেন দিয়াজকে পেছনে ফেলে চলে যান গোলরক্ষকের কাছাকাছি। তবে এদেরসনকে বোকা বানিয়েছেন। শট না নিয়ে পাস দেন বেলিংহামকে। ইংলিশ মিডফিল্ডার সেখান থেকে গোল করেছেন সহজেই।