কম বয়সীদের তুলনায় প্রবীণের খাবারের চাহিদা কিছুটা ভিন্ন। প্রবীণদের রুচি, স্বাদ নিয়ে সমস্যা ও নানা ধরনের রোগবালাইয়ের উপস্থিতির কারণে এ বয়সে তাঁদের খাবারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বাড়িতে বয়স্ক ব্যক্তিটির জন্য খাবার প্রস্তুতের সময় খেয়াল করুন তাঁর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, কিডনি জটিলতা ইত্যাদি আছে কি না বা এগুলোর কী অবস্থা। অনেকে স্ট্রোকের জন্য বা দাঁতের সমস্যার জন্য চিবিয়ে খেতে পারেন না। আর বয়স হলে হজমে গোলমাল, কোষ্ঠকাঠিন্য তো হয়ই। এই সব কিছু মাথায় রেখেই করতে হবে তাঁদের খাদ্যতালিকা।
প্রতিদিন খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ফল, শাকসবজি—এর যেকোনো একটি বা দুটি ফল রাখুন। সেটা হতে পারে কলা, আপেল, কমলা, লিচু, পেঁপে, আম ইত্যাদি। শাকসবজির ক্ষেত্রে টাটকা সবুজ সবজি তালিকায় রাখুন। তবে লক্ষ রাখবেন হজমে সমস্যা হচ্ছে কি না। পালংশাক, ব্রকলি, পাতাকপি, রংবেরঙের সবজি যেমন বেগুন, গাজর, টমেটো ইত্যাদিতে খনিজ ও ভিটামিন প্রচুর। কিন্তু গ্যাস্ট্রিকের বা হজমের সমস্যা হলে সহজে হজম হয় এমন সবজি যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ, জালি ইত্যাদি দিন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু আমাদের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে, তাই প্রতিদিনের রুটিনে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম রাখা অত্যন্ত জরুরি। এতে অস্টিওপরোসিস এবং হাড় ভাঙার মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ক্যালসিয়ামের কিছু ভালো উৎস হলো দুধ, দই, চিজ, দুধের তৈরি যেকোনো খাবার, এর বাইরে ব্রকলি, টফু, বাদাম, পাতাকপি।
ফ্যাট সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে ভালো ফ্যাটগুলো বেছে নিন। যেমন ওমেগা-৩ যুক্ত চর্বি। মাছ এবং বাদাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। এসব খাবার মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে ও আলঝেইমার প্রতিরোধে সহায়ক।
খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন। তবে প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে মাছ, মুরগি, মটরশুঁটি, ডাল, ডিম, বাদাম এবং যেকোনো সবজির বিচি খেতে পারেন। তবে কিডনির সমস্যা ও ইউরিক অ্যাসিড বাড়া থাকলে প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তি কমে যায়, পরিপাকতন্ত্রের চলন কমে যাওয়ার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তাই খাদ্যতালিকায় ফাইবার রাখা জরুরি। হোলগ্রেন রাইস, লাল আটা বা ওটসে আছে ফাইবার। ফলমূল ও শাকসবজিতেও আছে। দরকার হলে ইসবগুল, তোকমা ইত্যাদি দিতে পারেন।
বয়স্কদের ডায়াবেটিস থাকলে সহজেই হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে যায়। তাই সারা দিনে ছয় বা সাতবার খাবার দিতে হবে। অল্প করে হলেও বারবার দিতে হবে। খাবার সময়সূচি ঠিক রাখতে হবে। রাতের খাবার একটু আগেই সেরে নিতে হবে।
অনেকেই তরল বা আধা তরল খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। সে ক্ষেত্রে সুষম খাবার না দিলে অপুষ্টি হতে পারে। ব্লেন্ডারে বা জাউ করে যেভাবেই দেওয়া হোক, তাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম ও ভিটামিনযুক্ত শাকসবজি মিশিয়ে দিন। শুধু চাল দিয়ে তৈরি জাউ বা সুজিজাতীয় খাবারে পুষ্টি হবে না। সব ধরনের খাবারই দিতে হবে। প্রয়োজন হলে বিশেষ ধরনের ক্যালরি চার্টের জন্য পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন।