শাকসবজি ও ফলমূল দ্রুত পচে গেলে ফেলে দিতে হয়৷ এই সমস্যার সার্বিক সমাধানের লক্ষ্যে প্রকৃতি-নির্ভর এক সমাধানসূত্র উদ্ভাবন করেছে৷ আমরা সবাই জানি, ফল দুই-একদিনের মধ্যে পচে যায়৷ কিন্তু সাদা এই স্যাচেট সেটা বদলে দিতে পারে৷ সেইসঙ্গে খাদ্য অপচয়ের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে৷ সমস্যার মাত্রা বিশাল৷ ২০২১ সালের জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে বছরে ব্যক্তিপ্রতি প্রায় ৫০ কিলো খাদ্যের অপচয় ঘটে৷ অর্থাৎ সব মিলিয়ে সাত কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়৷ অব্যবহৃত খাদ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয় এবং সেগুলি গোটা বিশ্বে কার্বন নির্গমনের প্রায় দশ শতাংশের জন্য দায়ী৷
ভারতের এগ্রি-বায়োটেক কোম্পানি গ্রিনপড ল্যাবস ফলমূল ও শাকসবজির আয়ু বাড়ানোর দাবি করছে৷ পরিবহণের বাক্সে ছোট স্যাচেট ভরে দিয়ে তারা এমনটা করতে চাইছে৷ প্রকৃতিই এই সমাধানসূত্রের প্রেরণা জুগিয়েছে৷
কোম্পানির কর্ণধার দীপক রাজমোহন বলেন, ফল বা সবজি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে কোল্ড স্টোরেজের তুলনায় পচনের সম্ভাবনা তিন গুণেরও বেশি বেড়ে যায়৷ ফলে এক অর্থে কোল্ড স্টোরেজ প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে৷ কিন্তু বিশাল মূলধন বিনিয়োগ ও চালানোর ব্যয়ের কারণে সেই অবকাঠামো অত্যন্ত ব্যয়বহুল৷ সেটাই কোল্ড স্টোরেজের অসুবিধা৷ এখন আমাদের সব পণ্য দশ থেকে শুরু করে ৪৫ বা ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভালোভাবে কাজ করে৷ ফলে এই স্যাচেট কোল্ড স্টোরেজের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে৷
গাছের প্রাকৃতিক নির্যাস কাজে লাগিয়ে ছোট এই স্যাচেট ফলের পেকে যাওয়ার প্রক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেয়৷ গ্রিনপড ল্যাবসের গবেষক দর্শিনী বলেন, সংক্রমণ মোকাবিলা করতে সাধারণত সব গাছপালার নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে৷ আমরা আমাদের পণ্যে সেই কৌশল প্রয়োগ করছি৷ উদ্বায়ী যৌগগুলি সেই ডিফেন্স মেকলানিজম জাগিয়ে তুলে বাড়তি দুই দিন তাজা রাখে৷ অত্যন্ত প্রাকৃতিক উপায়ে সেটা ঘটে৷ এই কোম্পানি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্য অপচয় কমানোর লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে৷ পরিবহণের সময়েও খাদ্য পণ্যের অনেক ক্ষতি হয়৷ গ্রিনপড ল্যাবস সবে তোলা আঙুর নিয়ে এক পরীক্ষা চালিয়েছিল৷ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দশ দিন পর সেগুলির হাল বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল৷ কোম্পানির স্যাটেচ ব্যবহার করে সেই একই আঙুর অনেক তাজা থেকেছে৷
দীপক রাজমোহন বলেন, ফলমূল ও শাকসবজি পরিবহণের সময়ে বিক্রেতারা দুটি পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখ দেখেন৷ প্রথমত, পচনের সমস্যা৷ তারা ১০০ কিলো বহন করলে প্রায় ২০ কিলো নষ্ট হয়, মাত্র ৮০ কিলো বিক্রি করা যায়৷ এটা এক ধরনের অপচয়৷ দ্বিতীয়ত, বাকি ৮০ কিলোর মানও কমে যাওয়ার কারণে মূল্যও কমে যায়৷ ফলে বিক্রেতা ১০০ টাকার বদলে ৮০ বা ৯০ টাকা পান৷ আমরা গ্রিনপডের মাধ্যমে দুটি সমস্যারই সমাধান করছি৷ ফলমূল ও শাকসবজি পচনের হার ৩০ থেকে মাত্র এক শতাংশে কমাতে পারছি৷ ফলে শেষ পর্যন্ত আমাদের গ্রাহকদের আর্থিক সুবিধা হচ্ছে৷
প্রশ্ন হলো, ভোক্তা হিসেবে খাদ্যের অপচয় এড়ানোর উপায় কী? ঠিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার কেনা একটা উপায় হতে পারে৷ সেইসঙ্গে আপনি ও আপনার পরিবার যা খেতে পারছে না, সেই উদ্বৃত্ত খাবার বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও প্রতিবেশীদের বিতরণ করা যায়৷ অথবা উদ্বৃত্ত খাবার ফুড ব্যাংকের মাধ্যমে অভাবী মানুষের কাছেও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব৷