গর্ভকালীন সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করে শিশুর ও মায়ের সুস্বাস্থ্য। এ সময় পুষ্টির ওপর নির্ভর করে বাচ্চার বৃদ্ধি, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়ন ও মায়ের সুস্থতা। একজন আদর্শ ওজনসম্পন্ন মায়ের ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময় মায়ের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি দুই থেকে তিন গুণ আয়রনের চাহিদা, দুই গুণ ভিটামিন-বি১২’র চাহিদা ও ১০ থেকে ২০ গুণ ফোলেটের চাহিদা বাড়ে। তাছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-সিসহ সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা এ সময় বাড়ে।
▶ প্রোটিন : দুটি উৎস থেকে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হলে মা ও বাচ্চার বৃদ্ধি সঠিক পরিমাণে হয়ে থাকে। একটি প্রাণিজ প্রোটিন, যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি ও অন্যটি উদ্ভিদ প্রোটিন, যেমন-ডাল, বাদাম, বিচি, ব্রোকলি, মাশরুম, সয়াবিন ইত্যাদি।
▶ ফোলেট ও আয়রন : গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ফলিক অ্যাসিডের চাহিদা বেশি থাকে। পরবর্তী মাসগুলো থেকে ফোলেট ও আয়রনের চাহিদা বাড়ে। এগুলোর সঙ্গে ভিটামিন-বি ও ভিটামিন-সি গ্রহণে শোষণ ভালো হয়। যেমন-ডাল, অংকুরিত বিচি, ব্রোকলি, ফুলকপি, ঢেঁড়স, পেঁপে, কলিজা, চিংড়ি, ডিমের কুসুম, কচু, শাপলা, কাঁচাকলা ইত্যাদি।
▶ ক্যালসিয়াম : ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ভিটামিন-ডি গ্রহণে ক্যালসিয়ামের শোষণ বেড়ে যায়। যেমন-দুধ, দই, পনির, কাঁটাসহ ছোট মাছ, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
▶ ওমেগা ও DHA : এ সময় ওমেগা ও DHA রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বাচ্চার ব্রেন বিকাশে সাহায্য করে থাকে। এ জন্য খাবেন-মাছের ডিম, মাছের চর্বি, সি-ফুড, ব্রোকলি, পালংশাক, এভোকাডো, সয়াবিন, অলিভ ওয়েল ইত্যাদি।
▶ ভিটামিন-বি১২ ও ভিটামিন-সি : এ সময় ভিটামিন-বি১২ ও ভিটামিন-সি’র চাহিদাও অনেক বেড়ে যায়। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ঝিনুক, আমলকী, পেয়ারা, আপেল, মরিচ, লেবু ও দেশীয় টক ফল এ ভিটামিন থাকে।
▶ জিংক, কপার, সেলেনিয়াম : এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে এবং এ সময় এগুলোর চাহিদাও বেড়ে যায়। যেমন-মাংস, ডাল, বিচি, ডিম, দুধ, মুরগি, মাশরুম, পনির ইত্যাদি।
▶ পানি ও তরল : দৈনিক আট থেকে ১০ গ্লাস পানি প্রয়োজন। তাছাড়া তরল খাবার যেমন-স্যুপ, ফলের রস, ডাবের পানি, লেবুর পানি, জিরাপানি বা দইয়ের শরবত ইত্যাদি পান করা প্রয়োজন।
▶ পর্যাপ্ত ঘুম : খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম এ সময় জরুরি। বিশেষ করে রাতে আট ঘণ্টা ঘুম বাচ্চার বিকাশ নিশ্চিত করে। যে গর্ভবতী মায়েদের ঘুম কম হয় তাদের বাচ্চার ওজন কিছুটা কম থাকার আশঙ্কা থাকে।
▶ হাঁটা বা ব্যায়াম : গর্ভাবস্থায় হাঁটা-চলা করা ও স্বাভাবিক ব্যায়াম নরমাল ডেলিভারির জন্য উপকারী। শুয়ে বসে থাকা যাবে না। প্রয়োজনে ১০ মিনিট বা ১৫ মিনিট করে করে হাঁটতে হবে।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি থাকা প্রয়োজন। দিনে দুবার প্রায় ১০০ গ্রাম করে ফল থাকা দরকার। কিছু বাদাম থাকা প্রয়োজন। প্রতিবেলায় পর্যাপ্ত প্রোটিন ও কিছু শর্করা জাতীয় খাবারও প্রয়োজন। সবচেয়ে ভালো হয় একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে খাবার গ্রহণ করা।