চলছে ভাষার মাস। সেই সাথে চলছে বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায় চলছে এ মেলা। এবার বইমেলায় মোট ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি মোট ৩৭ টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে এবারের বইমেলায়।
এত এত প্রকাশনীর স্টলের ভিড়ে নিজের পছন্দের স্টলটিকে খুঁজে পেতে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় মেলায় আসা পাঠক ও দর্শনার্থীদের। মেলায় আসা পাঠক দর্শনার্থীদের সেই কষ্ট লাঘব করতে এবার চালু করা হয়েছে মোবাইল অ্যাপ “বইমেলা কম্পাস”। গুগল ম্যাপসের সহযোগিতায় কাঙ্ক্ষিত স্টল ছাড়াও জনপ্রিয় বই, শৌচাগারের স্থান, নামাজ ঘরের অবস্থান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নম্বর, প্রতিদিনের অনুষ্ঠান সূচিসহ বিভিন্ন তথ্য জানাবে এই অ্যাপটি।
সফটওয়্যার কোম্পানি “স্পিডল্যাবের” সিইও রাকিবুল ইসলামের উদ্যোগে এ অ্যাপটি তৈরি করা হয়। অ্যাপটি তৈরিতে আরও কাজ করেন নাফিস ফুয়াদ, সৈকত সেন, জাহিদ হাসান শামিম নামের আরও তিন তরুণ। গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে এই অ্যাপটি।
মেলায় দোকান, শৌচাগার, নামাযের জায়গাসহ বিভিন্ন জায়গার অবস্থান সঠিকভাবে এই অ্যাপে প্রদানের জন্য ১০ সদস্যের একটি টিমও কাজ করে এই অ্যাপটি নির্মাণে।
অ্যাপটি তৈরি করার পিছনের কারণ হিসেবে অ্যাপটি তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান স্পিডল্যাবের সিইও রাকিবুল ইসলাম বলেন, অ্যাপটি তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট আমরা সকলেই ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের IIT বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমাদের ক্লাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুকাররম ভবনে হবার সুবাদে বইমেলা ছিল একেবারে কাছেই। প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই ক্লাস শেষ করে বন্ধুরা মিলে ছুটতাম বইমেলায়। কিন্তু বিড়ম্বনায় পড়তাম স্টল খুঁজতে গিয়ে। প্রায় ৮০০ স্টলের মাঝে একটা স্টল খুঁজতে খুঁজতে পুরো বইমেলা চক্কর দেয়া হয়ে যেত। এই ঝামেলাটা হত বইমেলা ঘুরতে আসা প্রায় সকলেরই। তাছাড়া র্যাব- পুলিশের সাথে কিংবা ফায়ার সার্ভিসের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা, সহজে নামাজের জায়গা, খাবারের জায়গা, ওয়াশরুম খুঁজে পাবার একটা উপায় দরকার ছিল। মনে হল এই সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য কিছু একটা করা দরকার। যেহেতু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট ছিলাম আমরা, একটা অ্যাপ বানিয়ে ফেলার কথাই প্রথমে মাথায় এসেছিল এবং পরীক্ষামূলক ভাবে বানিয়েও ফেলি, কিন্তু সেবার দেরি হয়ে যায় এবং পরে আর আপডেট করা হয়ে উঠেনি। ভার্সিটি শেষে কিছুদিন চাকরি করে যখন নিজের সফটওয়্যার কোম্পানি “XpeedLab” শুরু করি, তখন মনে হয় এবার মেলার শুরু থেকেই এই স্টল না পাওয়ার সমস্যা তে সমাধান হিসেবে অ্যাপ টা নিয়ে আসি। সহজে স্টল খুজে পাওয়া, ম্যাপে সেই স্টলে যাবার সবচেয়ে সোজা রাস্তা দেখানো, নামাজের জায়গা, ফুডকোর্ট, ওয়াশরুম খুজে পাওয়া, পুলিশ-র্যাব-ফায়ার সার্ভিসের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা, বেরুবার ঢুকবার গেট খুজে পাওয়া, যেকোনো দিনের অনুষ্ঠানসূচি খুজে পাওয়া, বেস্টসেলার বই এর লিস্ট সবই পাওয়া যাবে এই অ্যাপে।
রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, মূলত ২০২০ সালে আমরা এই অ্যাপটি প্রথম লঞ্চ করি। তবে সেবছর সময় একটু বেশি লাগার কারণে সেবার আর তেমন দর্শকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় নি। এরপর করোনার কারণে আর বইমেলা হয়নি। আর আমরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়ে চাকরিতে ঢুকে পড়ি। এরপর এবার আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এই অ্যাপের যাত্রা শুরু করলাম।
কেমন সাড়া পাচ্ছেন প্রশ্নে রাকিবুল ইসলাম বলেন, দর্শকদের সাড়া দেখে আমরা অভিভূত। ২ দিনে পাঁচ শতাধিক ডাউনলোড হয়েছে অ্যাপটি। এবং গুগুল প্লে স্টোরে ইতিমধ্যে ৫০ জনের মতো ফাইভ স্টার রেটিং দিয়েছেন।
দর্শকদের এই সাড়া দেখে পরবর্তীতে আরও ভালোভাবে এই অ্যাপ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছার কথাও জানান প্রতিষ্ঠানটির সিইও ও অ্যাপটি তৈরির প্রধান পরিকল্পনাকারী রাকিবুল ইসলাম।
অ্যাপটির কথা জানতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন মেলায় আসা অনেক দর্শনার্থী।
মেলায় আসা দর্শনার্থী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এত বড় মেলায় কোন স্টলটা কোনখানে অবস্থিত তা জানতে অনেক বেগ পেতে হয় আমাদের। এমন একটা অ্যাপ মেলায় আসা সকল দর্শনার্থীদের জন্য সত্যিই খুব উপকার করবে।
মেলায় আসা আরেক দর্শনার্থী ফাহিমা রহমান জানান, এই একটি অ্যাপের মাধ্যমে মেলায় আসা সকল দর্শনার্থীদের সকল সমস্যা যেন দূর হয়ে গেল! এমন একটি অ্যাপের আসলেই খুব প্রয়োজন ছিল মেলায় আসা সকল দর্শনার্থীদের।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের কষ্ট লাঘব করতে অ্যাপটি জনসাধারণের কাছে আরো প্রচারের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অ্যাপটি তৈরির প্রধান পরিকল্পনাকারী ও স্পিডল্যাবের সিইও রাকিবুল ইসলাম।