অনেক স্মৃতি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। একটা সময় ফুটবলের সাথে ভাগাভাগি করে এই মাঠেই আকরাম-বুলবুল–নান্নুরা ক্রিকেট খেলতেন। এখানে কত স্মৃতি মাখামাখি করেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে বিদায় বলেছেন তারা। বর্তমান দলে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে কেবল মাহমুদউল্লাহর এখানে ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা। তাও কেবল ঘরোয়া ক্রিকেট। বাকি ক্রিকেটারদের কারও এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও নাজমুল হোসেন শান্ত-মেহেদী হাসান মিরাজ-নাহিদ রানারা সেই মাঠে দৌড়ে অতীতের স্মতি ফিরিয়ে আনলেন।
২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে বিদায় নেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এরপর থেকে দেশের ক্রিকেটের স্থায়ী ঠিকানা মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তাহলে কি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবারও ক্রিকেট ফিরতে যাচ্ছে? না, তেমন কিছুই নয়। ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকায় পা রাখবে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট দল। মূলত সেই সিরিজের আগে ক্রিকেটারদের ফিটনেস পরখ করতেই এই স্টেডিয়ামে আসা শান্ত-মিরাজ-লিটনদের।
শনিবার সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে ক্রিকেটারদের রানিং সেশন রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রেন্থ এন্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেইলি। দুই ভাগে ভাগ হয়ে ১৬’শ মিটার দৌড়েছন নাজমুল হোসেন শান্তরা। সবার মধ্যে সেরা হয়েছেন দুই পেসার।
ভোরে মাঠে গিয়েই স্মৃতিকাতর হয়ে উঠেন বেশ কয়েকজন। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঘরোয়া ক্রিকেটের একটি টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন তখনকার তরুণ মাহমুদউল্লাহ। শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঢুকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন তিনি। জাতীয় দলের ম্যানেজার নাফীস ইকবালেরও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে এই স্টেডিয়ামে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নাফীস বলেছেন, ‘১৯৯৪ সালে প্রথম এই মাঠে আসি আমি। অনেক আইকন ক্রিকেটার এখানে খেলতেন। তাদের দেখতে মাঠে আসতাম। ২০০৪ সালে আমার ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস এই মাঠে খেলেছি, ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষেও প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলাম। তখন হয়তো বুঝিনি। কিন্তু এখন বুঝি সেই ইনিংসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বন্ধুবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রত্যেকটা ইঞ্চি ইতিহাস বহন করে। আমাদের প্রজন্মের খেলোয়াড়, শুধু ক্রিকেটার নয়, অন্য অঙ্গনের খেলোয়াড়রাও একই কথা বলবে।’
নতুন ক্রিকেটাররা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম নিয়ে কোন স্মৃতি না থাকলেও নাফীস নিশ্চিত নতুন প্রজন্ম এই স্টেডিয়াম সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে। গণমাধ্যমকে ক্রিকেটে পরিচালনা বিভাগের এই ম্যানেজার বলেছেন, ‘যারা একদম নতুন প্রজন্ম, তারা হয়তো এখানে খেলেনি। কিন্তু এই স্টেডিয়ামের কথা নিশ্চয়ই শুনেছে। অনেকের জন্ম ২০০০ সালের আশপাশে। তাদের খেলার কথাও নয়। তবে আইকনিক স্টেডিয়াম যেহেতু, এটার গল্প নিশ্চয়ই শুনেছে। দেখুন, সাধারণত সকাল ৬টায় ফিটনেস টেস্ট দেখতে এত মানুষের আসার কথা নয়। যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, তাই এসেছে। সবার জন্যই দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।’
শনিবার সকাল ৬টায় শুরু এই ফিটনেস টেস্ট চলে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। প্রথমে হালকা ওয়ার্মআপ করেন ক্রিকেটাররা। করেন হালকা স্ট্রেচিংও। সবশেষে দুই ভাগে ভাগ হয়ে দৌঁড়ান ১৬০০ মিটার স্প্রিন্টে। ফিটনেস পরীক্ষার বাকি অংশগুলো হবে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। যে কোনও সিরিজ শুরুর আগেই এমন ফিটনেস ট্রেনিং হয়ে থাকে। এত দিন এসব হতো মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। এবার সেটা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। চলতি বছর সব সংস্করণে ঠাসা সূচির কথা বিবেচনা করে ক্রিকেটারদের ফিটনেসের অবস্থা পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামী ৭ মাসে বাংলাদেশ দল খেলবে ৮ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে এবং অন্তত ১৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। জাতীয় দলের আশপাশে থাকা ৩৫ ক্রিকেটারকে নিয়ে এই সেশন অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মিত ক্রিকেটারদের মধ্যে আইপিএলে থাকায় মোস্তাফিজুর রহমান, চোট থেকে ফেরার পথে থাকায় সৌম্য সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় সাকিব আল হাসান তাতে ছিলেন না। এছাড়াও তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলামকেও দেখা যায়নি গত সপ্তাহে পেশির টান পাওয়ার কারণে।
সবশেষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে ক্রিকেটারদের রানিং রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেইলি। অস্ট্রেলীয় এই ট্রেনারের চাওয়ায় জিপিএস ট্র্যাকার পরে আজ ৩৫ জন ক্রিকেটার অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে ১৬০০ মিটার দৌড় ও ৪০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিয়েছেন। সবার মধ্যে সেরা হয়েছেন দুই পেসার। এক গ্রুপে প্রথম হয়েছেন নাহিদ রানা, আরেক গ্রুপে সবার আগে দৌড় শেষ করেন তানজিম হাসান সাকিব। বর্তমান দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার সিনিয়র ৩৮ পেরুনো মাহমুদউল্লাহ দৌড় শেষ করেছেন সবার শেষে!
ফিটনেশ সেশনে শেষে ট্রেনার ইফতেখার ইসলাম ইফতি গণমাধ্যমে বলেছেন এর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের সামগ্রিক ফিটনেসের অবস্থা বুঝতে চেয়েছেন তারা, ‘এই পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝলাম খেলোয়াড়দের অবস্থাটা কেমন। এটার মধ্যে পাশ-ফেলের কিছু নেই। ডিপিএল গিয়েছে, বিপিএল গিয়েছে। এরপরে ওদের ফিটনেসের অবস্থা কী সেটা জানার জন্য (এই উদ্যোগ)। এটা জানার পর খেলোয়াড়দের কাকে কী অনুশীলন করাতে হবে এটা খুঁজে বের করবো। ওদের জানিয়ে দেবো ওভাবেই আমরা সেসব প্রয়োগ করবো।’
রানিংয়ের জন্য অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক ব্যবহার করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিসিবির এই ট্রেনার বলেছেন, ‘অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক বেছে নেওয়া আসলে টাইমিংয়ের একটা বিষয়। আমরা যদি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসরণ করি তাহলে বেশ কিছু টেস্টিং মেথড আছে, আমরা আজ ১৬শ মিটার টাইম ট্রায়াল নিলাম। অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে যদি নেই আমরা তাহলে প্রপার টাইমিংটা…কারণ ওইভাবেই ক্যালকুলেট করা হয়। এটা ওদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো।’
ইফতি আরও বলেছেন, ‘আমরা ১৬শ মিটার নিয়েছি তাদের কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেম কীভাবে কাজ করে, ওদের ক্যাপাসিটি কেমন। স্প্রিন্ট টেস্ট নিয়েছি বুঝতে তারা কত দ্রুত এটা দেখতে। ৪০ মিটার স্প্রিন্ট যেটা ছিল প্রথম ২০ মিটারে কে কতটুকু গতিময়। সাধারণত এক-দুই মিটারের জন্য একটা রান আউট হয় বা এক-দুই সেন্টিমিটারের জন্য আমরা একটা চার বাঁচাতে পারি না। স্প্রিন্টিং দেখলাম কীভাবে আরও গতিময় করা যায়। আর ১৬শ মিটারে দেখলাম মাঠে থাকার ক্যাপাসিটিটা কতটুকু।’