বিখ্যাত ব্যক্তিরা বরাবরই বলে আসছেন সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়তে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যই এ অভ্যাস উপকার বয়ে আনবে। কর্মজীবী নারী উপার্জনের কিছু অর্থ সঞ্চয়ের জন্য রাখতেই পারেন। এতে বিপদে-আপদে রক্ষাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে সঞ্চিত অর্থ। ছোটবেলায় মাটির ব্যাংক কিংবা টিনের কৌটায় টাকা-পয়সা জমানোর স্মৃতি কমবেশি সবারই আছে। এখন কি আর সেভাবে টাকা জমানোর সুযোগ আছে? ব্যস্ততায় ডুবে যাওয়া কেউই হয়তো এখন আর অর্থ জমানোর কৌশল নিয়ে তেমন ভাবি না। অথচ সঞ্চয় করার অভ্যাস সব সময়ই ইতিবাচক হিসেবে মনে করা হয়।
৫০/৩০/২০ নিয়ম অনুসরণ করুন
মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ৫০/৩০/২০ ধারণাকে জনপ্রিয় করেন। তার বিখ্যাত ‘অল ইয়োর ওর্থ’ বইয়ে তিনি ব্যক্তিজীবনের আয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে এই নিয়মের কথা বলেন। আপনার যদি আয় ১০০ টাকা হয়, তাহলে ৫০ টাকা নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করতে হবে। এই প্রয়োজন মানে বাড়িভাড়া, পোশাক, মাসের খরচ ইত্যাদি বোঝায়। এরপরে ৩০ টাকা ব্যয় করতে হবে আপনি কি চান তার জন্য। এর অর্থ: নতুন কোনো কিছু কেনা, কোথায় ঘুরতে যাওয়ার মতো বিষয়গুলোতে ৩০ টাকা খরচ করতে হবে। এই অঙ্কের মধ্যে কিছু টাকা স্বাস্থ্যের জন্য হাতে রাখতে হবে। বাকি ২০ টাকা সঞ্চয় করতে হবে। এই ২০ টাকা দিয়ে আপনার বিপদের জন্য টাকা জমাতে হবে, ঋণশোধ করতে হবে, বিনিয়োগ করতে পারেন কিংবা অন্যান্য অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করতে পারেন। এইভাবে আপনি আপনার মাসের খরচের হিসাব রাখতে পারেন। একটা কথা বলে, যা গণনা করা যায় তা উন্নত করার সুযোগ নেই। আপনি যদি এই নিয়মে আপনার খরচের হিসাব করতে পারেন, তাহলে সঞ্চয়ের পথ খুঁজে পাবেন।
মাসের শুরুতেই পরিকল্পনা করতে হবে
সবাই কিন্তু আমরা মাসের ১ তারিখেই বেতন পাই না। অনেকেই ৭-৮ তারিখ আবার অনেকেই কিন্তু ১৫-১৬ তারিখে বেতন পাই। আর্থিক হিসাব অনুসারে মাসের হিসাব পরিকল্পনা করে ফেলুন। মাসের কোন তারিখে বাড়ি ভাড়া দেন, তা নির্ধারিত করে নিয়মিত অনুসরণ করুন। একেক মাসে এক সময় ঘর ভাড়ার অনিয়মিত অভ্যাস পরিহার করুন। শুরুতেই মাসের বাজার, সন্তানের খরচ, বেড়ানো কিংবা স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দের বিষয়টি মাথায় নিয়ে নিন। সবচেয়ে ভালো হয়, বছরের শুরুতে একটা সাধারণ পরিকল্পনা নিয়ে পুরো বছর আর্থিক নিয়মের মধ্যে নিজেকে রাখতে পারেন।
প্রতিদিনের অভ্যাস যখন সঞ্চয়
আমরা কিন্তু প্রতিদিন টুকরো টুকরো অভ্যাস করতে পারি। যেমন- মিনিট দশেকের পথ রিকশায় না চড়ে হেঁটে যেতে পারি। আবার অফিস যদি বাসার কাছেই হয়, তাহলে হেঁটে যাওয়া যায় প্রতিদিন। এখন ফাস্ট ফ্যাশনের যুগ বলে অনেকেই প্রতিমাসেই কাপড়-চোপড় কিনছি। ভবিষ্যতের বিবেচনা করে যা প্রয়োজন তাই কেনার দিকে আমাদের অভ্যাস করতে হবে। বিলাসিতা করে অহেতুক পণ্য কেনাকাটা এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত সঞ্চয়কে ব্যবহার করুন
বছরের সঞ্চয়কে বিনিয়োগের সুযোগ থাকলে তাতে পরিণত করুন। বিনিয়োগ করার জন্য ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনিয়োগ করুন। অনেকেই হুজুগে অনেক বেনামী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে সঞ্চয় হারিয়ে ফেলেন। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন। গ্রামের বাড়িতে কোনো কৃষকের সঙ্গে পশুর মালিকানা ভাগাভাগি করে সঞ্চয়কে বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার অনলাইনে নিজের কোনো পণ্য বা সেবা চালু করেও টুকটাক বিনিয়োগ করতে পারেন। বাড়তি আয় সব সময় দারুণ সব সুযোগ তৈরি করে কিন্তু। সঞ্চয়কে বিনিয়োগে পরিবর্তন করতে আপনার শিক্ষক কিংবা অফিসের বসেরও পরামর্শ নিতে পারেন।