বিদেশে বাংলাদেশের সিনেমা মুক্তি পাবে, দুই দশক আগেও এমনটা ভাবনার বাইরে ছিল। ‘মনপুরা’র মতো সিনেমা ছোট মিলনায়তন ছাড়া প্রবাসী দর্শকদের দেখার উপায় ছিল না। সেই প্রবাসেই শত হলে মুক্তি পাচ্ছে এখন ঢালিউড সিনেমা। টিকিটের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন হাজারো দর্শক। সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, এই সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের ধরতে পারলে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে শতকোটি টাকার বাড়তি বাজার উন্মুক্ত হবে। নির্মিত হবে বড় বাজেটের সিনেমা।
অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের সিনেমা মুক্তি পাবে, আগে তা কল্পনা ছিল। কিন্তু এটা এখন নিয়মিত ঘটনা। ৩ নভেম্বর দেশটির ৮টি হলে সিনেমা মুক্তি পায়। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৭টি দেশের শতাধিক সিনেমা হলে বিভিন্ন সময় বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায় ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’, ‘১৯৭১ সেই সব দিন’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রিয়তমা’, ‘শনিবার বিকেল’, ‘এমআর-নাইন: ডু অর ডাই’, ‘অন্তর্জাল’সহ বেশ কিছু সিনেমা। এর মধ্যে কিছু সিনেমা নিয়ে দর্শকের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। তবে পরিবেশকদের মতে, গত বছর দুটি সিনেমা—‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’—দিয়েই বিদেশে ঢালিউড সিনেমার বাজার নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
বিদেশে বাজারের সন্ধানে
কবে থেকে প্রবাসী বাঙালিরা দেশের সিনেমা নিয়ে আগ্রহী হন—এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, বিভিন্ন সময় দর্শক দেশের সিনেমা নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু গত বছর ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ মুক্তির পর দেশের সিনেমা নিয়ে দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে থাকে। এই দুই সিনেমার আগে বাণিজ্যিকভাবে এত বড় বাজার পায়নি ঢালিউড। গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় ‘পরাণ’ মুক্তির ঘোষণা করতেই ১৭টি শোর আগাম টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
একটি সূত্র জানা যায়, সিনেমাটি বিদেশ থেকে দুই কোটি টাকার বেশি আয় করে। বিদেশের বাজার থেকে সর্বোচ্চ আয় করা বাংলাদেশি সিনেমার তালিকার দুইয়ে রয়েছে ‘পরাণ’। এরপর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের শতাধিক হলে মুক্তি পায় ‘হাওয়া’। সিনেমাটি মাত্র ৪ দিনে আড়াই কোটি টাকা আয় করেছিল।
‘হাওয়া’র নির্বাহী প্রযোজক অজয় কুণ্ডু জানিয়েছিলেন, সিনেমাটির আয় ৪ লাখ ডলারের বেশি। এখন পর্যন্ত বিদেশের বাজারে সর্বাধিক আয় করা সিনেমা এটি। এই তালিকার তিনে রয়েছে ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দেবী’। সিনেমাটির আয় ছিল দেড় লাখ ডলারের বেশি। আয়ের সঠিক তথ্য না জানা গেলেও ‘আয়নাবাজি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমাগুলো বিদেশেও সাড়া জাগিয়েছিল।
বিদেশে ঢালিউডের অবস্থান কোথায়?
ভারতের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা নিয়মিত দেশের বাইরে মুক্তি পাচ্ছে। হাজার কোটি রুপি আয় করে রেকর্ড গড়ছে সেসব ছবি। গত বছর পাকিস্তানের ‘দ্য লিজেন্ড অব মওলা জাট’ বিদেশি বাজার থেকেই আয় করেছে ৫০ কোটির বেশি পাকিস্তানি রুপি। আমাদের সিনেমা নিয়ে কবে এমনটা হবে? পরিচালক অমিতাভ রেজা বলেন, ‘বিদেশে আমাদের বাঙালি দর্শক এখন বলা যায় দেড় কোটি। কিন্তু বাজার এখনো শিশুপর্যায়ে রয়ে গেছে। তেমন প্রফেশনাল ডিস্ট্রিবিউটর তৈরি হয়নি। ভারত যে লাইনে ছবি রপ্তানি করে, আমরা তার ধারেকাছেও নেই। তাদের বিশাল আধিপত্য। এই বাজার আকাশ থেকে পড়বে না। আমাদের ধরতে হবে।’
বাংলাদেশের বাজার কত বড়
বিদেশে বাংলা সিনেমার বাজার শুরু থেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়েছে। কখনো উৎসবে, কখনো বাঙালি কমিউনিটিতে রুম ভাড়া করে বাংলা সিনেমা দেখানো হতো। টার্গেট ছিল উৎসাহী প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শক। চাহিদা বিবেচনায় স্বল্প পরিসরে কিছু সিনেমা হলেও মুক্তি পেয়েছে। টাকার হিসাবও ছিল শো অনুযায়ী। ‘আয়নাবাজি’র প্রতি শোর জন্য এক হাজার ডলার করে পেয়েছেন, জানান অমিতাভ রেজা।
‘আয়নাবাজি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘দেবী’ মুক্তির পর দর্শকদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে পরিবেশকেরা বুঝতে পারেন, প্রবাসীদের মধ্যে বাংলা সিনেমা নিয়ে প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। এই দর্শক ধরতে গড়ে ওঠে পরিবেশক ব্যবস্থা। বর্তমানে সিনেমা পরিবেশনের সঙ্গে বড় পরিসরে যুক্ত স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। তারা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সিনেমা রপ্তানি করে। পরিবেশক হিসেবে আরও কাজ করছে বঙ্গজ ফিল্মস, বায়োস্কোপ ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক রাদুগা। পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের নামীদামি হলগুলোতেও ঢাকাই সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। এত দিন যা ছিল অকল্পনীয়।
‘আয়নাবাজি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘দেবী’, ‘হাওয়া’, ‘প্রিয়তমা’সহ একাধিক সিনেমার পরিবেশক স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর প্রধান অলিউল্লাহ বলেন, ‘বিদেশে বলিউডের বিশাল মার্কেট। তারপরই দক্ষিণের সিনেমা। দক্ষিণের চেয়ে আমাদের দর্শক বেশি। আমাদের সিনেমা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও করছে। আমাদের বড় বাজার অপেক্ষা করছে। ‘হাওয়া’-এর মতো একটি সিনেমার বিদেশে বাজার রয়েছে ৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি। কিছু বাধাগুলো পেরোতে পারলেই ঢালিউড সিনেমার বাজার কয়েক শ কোটি টাকা।’
হলিউড, বলিউড, চীন, কোরীয় ইন্ডাস্ট্রির সিনেমার বাজেট বেশি। বিদেশের বাজারে এসব ঝানু ইন্ডাস্ট্রি সামনের দাঁড়াচ্ছে অপ্রস্তুত ঢালিউড। বিদেশের ছবি কবে মুক্তি পাবে, অনেক আগে থেকেই তা জানা যায়। তারকারা প্রচার চালান। পরিবেশকেরা আগে থেকে হল বুকিং করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশক অলিউল্লাহ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন প্রচারণা ছাড়াই হুট করে পরিকল্পনাহীনভাবে একটি সিনেমা মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। দেশের মানুষেরাই সিনেমা সম্পর্কে জানেন না। প্রযোজকেরা ধরে নেন, দেশে সিনেমা ব্যর্থ হলে বিদেশেও চলবে না। অপেশাদারত্বের কারণে আমাদের খুব বেশি হল ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।’
আমাদের মাথায় রাখতে হবে, প্রবাসী দর্শক আর বিদেশি দর্শক আলাদা ব্যাপার। আবার যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাপ্রবাসী দর্শক আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী দর্শকের রুচির ভিন্নতা আছে। প্রবাসী দর্শকের সঙ্গে বিদেশি দর্শক যদি যোগ হয়, তাহলে আমাদের ছবির আসলেই বিশাল একটা বাজার হবে
‘পরাণ’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘হালদা’, ‘পোড়ামন ২’ সহ একাধিক সিনেমা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ একাধিক দেশে মুক্তি দিয়েছে বঙ্গজ ফিল্মস। এর প্রতিষ্ঠাতা তানিম মান্নান বলেন, ‘একসঙ্গে আমরা সিনেমা মুক্তি দিতে পারছি না, এটা বড় সমস্যা। দেশে সিনেমার হাইপ না উঠলে বিদেশে ব্যবসা করা সম্ভব হয় না। এর আগে “উনপঞ্চাশ বাতাস”, “স্ফুলিঙ্গ”, “ফাগুন হাওয়া”সহ বেশ কিছু সিনেমা ভালো ছিল। যাঁরা দেখেছেন, সবাই প্রশংসা করেছেন; কিন্তু দেশে প্রচারণা কম থাকায় বেশির ভাগ প্রবাসী সিনেমাগুলো দেখতে আগ্রহ দেখাননি।’
সম্ভাবনার জায়গা
পরিবেশকেরা মনে করেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, বছরে ভালো মানের ছয়টি সিনেমা পেলে বছরজুড়েই প্রবাসীদের মধ্যে আলোচনায় থাকবে বাংলাদেশি সিনেমা। দেশের মতো বিদেশেও দল বেঁধে বাঙালির ছবি দেখার অভ্যাস তৈরি হবে। বাংলাদেশের মতো বিদেশেও তারকাদের হল ভিজিটে আসতে হবে। সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের বাজার আবিষ্কার করা যাবে। আরও বড় পরিসরে সিনেমা মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে। অলিউল্লাহ জানান, বাংলাদেশের নিয়মিত ছয়টি সিনেমা ব্যবসা সফল হলে বিদেশে বছরে ২০-৩০ মিলিয়ন ডলারের বাজার ধরার দিন খুব বেশি দূরে নয়।
সিনেমা আন্তর্জাতিক বাজার খুবই প্রতিযোগিতামূলক। এখানে সুখ্যাতি রয়েছে, এমন বড় ডিস্ট্রিবিউটর, সেলস এজেন্টদের কাছে পৌঁছাতে হবে। বিভিন্ন দেশের সহপ্রযোজক থাকলে আরও ভালো। এই প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে আমাদের নতুন, অভিনব আন্তর্জাতিক মানের গল্প, সাউন্ড, কালার, সাবটাইটেলের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে
কানাডাপ্রবাসী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মাথায় রাখতে হবে, প্রবাসী দর্শক আর বিদেশি দর্শক আলাদা ব্যাপার। আবার যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাপ্রবাসী দর্শক আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী দর্শকের রুচির ভিন্নতা আছে। প্রবাসী দর্শকের সঙ্গে বিদেশি দর্শক যদি যোগ হয়, তাহলে আমাদের ছবির আসলেই বিশাল একটা বাজার হবে।’আয় বহুগুণ বাড়াতে পারে।
হাতে গোনা কয়েকটি ছবি বাণিজ্যিকভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তি পেয়েছে। ১৯৯৫ সালে ফ্রান্সে মুক্তি পেয়েছিল ‘চাকা’। ২০০২ সালে ‘মাটির ময়না’ ফ্রান্সের শতাধিক হলে মুক্তি পেয়েছিল।
২০০৫ সালে ‘শঙ্খনাদ’ সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় মুক্তি পেয়েছিল। ২০১৯ সালে ‘শিমু’ ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, পর্তুগালসহ বিশ্বের ১০টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায়। গত বছর ‘গোর’ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তি পায়। আন্তর্জাতিক বাজার বলতে বোঝায়, একটি দেশ ও ভাষার সিনেমা অন্য আরেকটি দেশের দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। হলিউড, বলিউড, কোরিয়ান, ইরানের সিনেমা নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তি পাচ্ছে। তারা সারা বিশ্বে দর্শক তৈরি করতে পেরেছে। কিন্তু বাংলা সিনেমা নিয়ে ভারতের বাঙালি দর্শক বাদে যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া বা তামিলের দর্শকদের আগ্রহ নেই। কীভাবে এই আগ্রহ তৈরি করা যায়? এই বিষয়ে ‘শিমু’ ছবির পরিচালক রোবায়েত হোসেন বলেন, ‘সিনেমা আন্তর্জাতিক বাজার খুবই প্রতিযোগিতামূলক। এখানে সুখ্যাতি রয়েছে, এমন বড় ডিস্ট্রিবিউটর, সেলস এজেন্টদের কাছে পৌঁছাতে হবে। বিভিন্ন দেশের সহপ্রযোজক থাকলে আরও ভালো। এই প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে আমাদের নতুন, অভিনব আন্তর্জাতিক মানের গল্প, সাউন্ড, কালার, সাবটাইটেলের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের জন্য সামনের সারির আদর্শ হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজার বর্তমানে দাপিয়ে বেড়ানো কোরিয়ান ভাষার সিনেমা নব্বই দশকের দিকে স্বল্প পরিসরে আন্তর্জাতিক বাজারে যাত্রা শুরু করে। কোরিয়ান ফিল্ম অর্গানাইজেশন ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এখন কোরিয়ান সিনেমার বাজার ১৪৪ কোটি ডলারের। তারা শূন্য দশমিক ২ বিলিয়ন দর্শক তৈরি করতে পেরেছে। শুধু কোরিয়া নয়, এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে ইরান, তুরস্ক, বেলজিয়ামের মতো দেশ। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য বেনডিথ’ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে যাত্রা শুরু করে তুরস্ক। তারা এখন নিয়মিত বিদেশি বাজারে সিনেমা রপ্তানি করে। বিদেশের বাজার সম্পর্কে তরুণ নির্মাতা আরিফুর রহমান, বিজন ইমতিয়াজ, রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতরা মনে করেন, এই বাজার তৈরির জন্য ভালো গল্পের সিনেমা প্রয়োজন। বড় বাজেটের টেকনিক্যালসমৃদ্ধ সিনেমার দর্শক চাহিদা রয়েছে। সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। বলিউডের সিনেমাগুলোর মতো স্বাদ পায়, এমন সিনেমা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
দর্শক হিসেবে ঢালিউড সিনেমার সবচেয়ে বড় বাজার কলকাতা। অথচ কলকাতা ও বাংলাদেশে সিনেমা মুক্তিতে বিশাল আইনি বাধা আছে। অতীতে মনে করা হতো, দুই ইন্ডাস্ট্রিকে বাড়তে দেওয়ার জন্য এই বাধা দরকার। বলা যায়, দুই ইন্ডাস্ট্রি এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত বছর ‘হাওয়া’, চলতি বছর ‘সুড়ঙ্গ’ ও প্রিয়তমা বাণিজ্যিকভাবে কলকাতায় মুক্তি পায়। ‘হাওয়া’ সিনেমার পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, ‘প্রথম দিকে কলকাতার ডিস্ট্রিবিউটরদের আগ্রহে ছবি মুক্তি দিতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। কারণ, প্রক্রিয়াটা কঠিন। পরে ‘হাওয়া’ মুক্তি পেয়েছে। মনে হয়েছে, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি দুই দেশের স্বার্থ বজায় রেখে আরও সহজ করা দরকার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিনেমাকে বেঁধে রেখে বাজার ছোট করা দুঃখজনক। আবার ভারতের সিনেমা এখানে এলেই যে বাজার দখল করে নেবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, মানসম্পন্ন ছবি যদি এখানে প্রডিউস না হয়, তাহলে ইন্ডাস্ট্রি কোনো দিনও উঠে দাঁড়াতে পারবে না।’
প্রায়ই দুই দেশের উৎসবে একাধিক সিনেমা দেখানো হয়। কিন্তু এতে প্রযোজক লাভবান হন না। কিন্তু লক্ষণীয়, দুই দেশের দর্শক সিনেমা দেখতে চান। দুই বাংলায় নিয়মিত কাজ করা জয়া আহসান অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘যাঁরা বাংলা ছবি বা ভাষা নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের দর্শক কিন্তু ৩৫ কোটির বেশি। এই দুই জায়গায় যদি ছবি একসঙ্গে মুক্তি দেওয়া যায়, ব্যবসায়িক জায়গা থেকেও ভালো, ছবির প্রসারের ক্ষেত্রেও ভালো।’
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%9b%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%b2%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%ac/
এ প্রসঙ্গে ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’, ‘কণ্ঠ’ সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজকদের একজন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই বাংলা ছবির বাজার বড় হোক। ‘হাওয়া’, ‘দেবী’, ‘বেলাশেষে’ একসঙ্গে দুই বাংলায় মুক্তি পাক। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা আমাদের রাজ্যেরও ভাষা। রাষ্ট্র ও রাজ্য যদি এক হয়ে সিনেমা মুক্তি দেয়, তাহলে পৃথিবীজুড়ে বাংলার বিশাল দর্শকের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে। তাহলে আমাদের বাজার বড় হবে; ব্যবসার কাঠামো, বাজেট বাড়বে; হল বাঁচবে; ইন্ডাস্ট্রি বেঁচে থাকবে। এখন সিনেমাকে আটকানোর কোনো মানে হয় না।’