বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে অস্ট্রেলিয়া।বুধবার (১০ জানুয়ারি) অস্ট্রেলীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, লাখো বাংলাদেশি ভোটার নির্বাচনের দিন নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন- এই বিষয়টিকে আমরা স্বাগত জানাই, কিন্তু এটি দুঃখজনক যে, এই নির্বাচন এমন এক পরিবেশে হয়েছিল যেখানে সকল অংশীজন অর্থপূর্ণ এবং প্রকৃতভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু হিসেবে নির্বাচনের আগে ঘটে যাওয়া সহিংসতা এবং রাজনৈতিক বিরোধী (দলের) সদস্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের কাছে ধারাবাহিকভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ান সরকার বাংলাদেশ সরকারকে তার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য অগ্রাধিকার দিতে জোর দিচ্ছে— যেগুলো মানবাধিকারের সুরক্ষা, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের প্রচারের ওপর ভিত্তি করে।
ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া একটি উন্মুক্ত, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চলের জন্য অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে, বাংলাদেশের নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি’ বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর যুক্তরাজ্য বলেছে বাংলাদেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু মানদণ্ড মেনে নির্বাচন হয়নি’। পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে দেশ দুইটি। পরে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান সব রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী দলের হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনের অনিয়মের প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের মতো মনে করে, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না এবং আমরা দুঃখিত যেসব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
এ ছাড়া বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু মানদণ্ড মেনে নির্বাচন হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্য। নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় মানুষের ভোট দেওয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না বলেও অভিমত দেশটির।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড যথাযথভাবে মানা হয়নি। এ ছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি বলে বাংলাদেশের মানুষের ভোট দেওয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না।
বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূলনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে বলে হতাশা প্রকাশ করেছে কানাডা।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কানাডা বাংলাদেশি নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রশংসা ও সমর্থন করে এবং নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময়কালে ঘটে যাওয়া ভয়ভীতি দেখানোর মতো কাজ ও সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছে। যারা এসব সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সকলের প্রতি আমরা সহানুভূতি জানাচ্ছি।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%87-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a3/
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি রোববার সারাদেশে একযোগে ২৯৯ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৮ আসনের ফল বেসরকারিভাবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৫ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠা লাভ করেছে। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬১টি আসন, এ ছাড়া অন্যান্য দল থেকে পেয়েছে ১টি আসন।