মানব মস্তিষ্ক আমাদের কল্পনার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হতে পারে—এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের। এক গবেষণায় গবেষকরা নতুন এক ধরনের ‘সেল মেসেজিং’ শনাক্ত করেছেন, যার খোঁজ এর আগে কখনও পাওয়া যায়নি। এ থেকেই বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে প্রচলিত ধারণার চেয়েও মানব মস্তিষ্ক সম্ভবত বেশি শক্তিশালী।
গবেষণাটি মানব মস্তিষ্কের ‘কর্টিকাল’ কোষের বাইরের অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার ফলাফলে ইঙ্গিত মিলেছে, মানুষের মস্তিষ্কে থাকা নিউরনগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী।
গবেষণায় বিশেষ এক ধরনের ‘ফ্লুরোসেন্ট মাইক্রোস্কোপি’র মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের কর্টিকাল কোষের বাইরের অংশ বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। এতে দেখা যায়, মস্তিষ্কের একক কোষগুলো ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি সোডিয়াম আয়নের (যা প্রত্যাশিত ছিল) মাধ্যমে ‘সক্রিয়’ হয়ে থাকে।
এ গবেষণার সময় পজিটিভ চার্জযুক্ত আয়নের সমন্বিত অবস্থার সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ দিয়ে ভোল্টেজ প্রবাহিত হওয়ার ঘটনা দেখেছেন বিজ্ঞানীরা, যার খোঁজ এর আগে কখনও মেলেনি।
গবেষণায় মস্তিষ্কের ‘ডেনট্রাইট’-এর ওপরও নজর দেওয়া হয়েছে, যেগুলো কোষের চারদিকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র তন্তুময় শাখাবিশিষ্ট অংশ। মূলত মানুষের মস্তিষ্কে রাসায়নিক বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে নিউরনের একমাত্র চাবিকাঠি হল ডেনড্রাইট।
“মস্তিষ্ককে বোঝার ক্ষেত্রে এর কেন্দ্রে থাকা ডেনড্রাইটগুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কারণ প্রতিটি নিউরনের গণনা শক্তি যে নির্ধারণ করে, তার মূল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে ডেনড্রাইট,” বলেন এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘হামবোল্ট ইউনিভার্সিটি’র স্নায়ুবিজ্ঞানী ম্যাথিউ লারকাম।
এ গবেষণায় বিশেষ এক ধরনের বৈদ্যুতিক মডেলিং নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, প্রতিটি নিউরনই গণনামূলক সমস্যার সমাধান করতে পারে। তবে এর আগের ধারণা ছিল, এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের মধ্যে আরও জটিল নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
মস্তিষ্কের এ অংশটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আগে যে গবেষণা করেছিলেন তার চেয়ে এ নতুন গবেষণাটি বিজ্ঞানীদেরকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, যেখানে আগের সিংহভাগ গবেষণাই চালানো হয়েছে ইঁদুরের ওপর।
“এটি একটি ‘যুগান্তকারী’ মুহূর্ত ছিল যখন আমরা প্রথমবারের মতো মস্তিষ্কে ডেনড্রাইটিকের কাজ করার সম্ভাবনা দেখেছিলাম,” বলেন লারকাম।
“গবেষণার পরীক্ষাগুলো খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাই এর আগে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি, সে সম্পর্কে জানতে পারার বিষয়টিও খুব ইতিবাচক ছিল।”
জার্মানি ও গ্রীসের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরিচালিত এ গবেষণাটি ২০২০ সালে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রথমবার প্রকাশ পেয়েছে।