বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, খুচরা পর্যায়ে সাড়ে ৮ শতাংশ এবং পাইকারি পর্যায়ে ৫ দশমিক ০৭৪ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে আজই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই এই দাম কার্যকর হবে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, খুচরা পর্যায়ে বর্তমান দাম গড়ে প্রতি ইউনিট ৮ দশমিক ২৫ টাকা, নতুন দাম ৮ দশমিক ৯৫ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে বর্তমান দাম গড়ে প্রতি ইউনিট ৬ দশমিক ৭০ টাকা। নতুন দাম ৭ দশমিক ০৪ টাকা।
তিনি বলেন, এখন বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ পড়ছে ১২ টাকার মতো, আর ৭ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি বছর বিদ্যুতে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ধীরে ধীরে কয়েক বছর ধরে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। কম ব্যবহারকারী গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম কম বাড়বে, আর উপরের দিকে বেশি বাড়বে।
নসরুল হামিদ বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায়। তেল-গ্যাস ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারদর ক্ষেত্র বিশেষে একই থাকলেও আগের চেয়ে ডলার প্রতি ৪০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। এখানেই বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়েছে। ডলারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য কাজ করছি।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম আধুনিক প্রাইসিংয়ে যাচ্ছি। ইনডেক্স ও ফর্মূলা করা হয়েছে প্রতিমাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় হবে, প্রতিবেশী দেশ প্রতিদিন সমন্বয় করে। সেখানে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সরকার অন্যভাবে সহায়তা করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না, সমন্বয় করা হচ্ছে। লাইফ লাইন গ্রাহকের (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) মাসের বিল ২০ টাকার মতো বাড়তে পারে। এখন গ্রাহকরা যদি একটু সাশ্রয়ী হন, তাহলে বিল আগের অবস্থায় থাকবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকদের মিতব্যয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , গ্রাহক পর্যায়ে গত বছর মার্চে পাঁচ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। সে সময় গড় মূল্যহার দাঁড়ায় ৮ টাকা ২৫ পয়সা। এ বছর মার্চে সে মূল্যহার বেড়ে হচ্ছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। অর্থাৎ বিদ্যুতের দাম বাড়ছে প্রায় আট দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে লাইফ লাইন (০-৫০ ইউনিট) গ্রাহকদের। তাদের বিল বাড়ছে সর্বনিম্ন ২৮ পয়সা। বর্তমানে এই শ্রেণির গ্রাহকদের বিল প্রতি ইউনিটে ৪ টাকা ৩৫ পয়সা। নতুন মূল্যহার কার্যকর হলে তা দাঁড়াবে ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
এদিকে প্রথম ধাপে (০-৭৫ ইউনিট) বিদ্যুৎ বিল ৪ টাকা ৮৫ পয়সা। আট দশমিক ৪০ শতাংশ বা ৪১ পয়সা বেড়ে তা দাঁড়াচ্ছে ৫ টাকা ২৬ পয়সা। দ্বিতীয় ধাপে (৭৬-২০০ ইউনিট) বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল ৬ টাকা ৬৩ পয়সা, যা বাড়ছে ৫৭ পয়সা বা আট দশমিক ৬০ শতাংশ। এতে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল পড়বে ৭ টাকা ২০ পয়সা।
সেচ গ্রাহকদের বিল গুনতে হয় বর্তমানে ৪ টাকা ৮২ পয়সা। তা বাড়ছে ৪৩ পয়সা বা আট দশমিক ৯০ শতাংশ। এতে সেচে বিল পড়বে প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ২৫ পয়সা। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহার যত বেশি হলে বিল তত বেশি হারে বাড়বে। এতে আবাসিকে সবচেয়ে বেশি হারে বিদ্যুৎ বিল বাড়বে ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বের গ্রাহকদের। এ শ্রেণির গ্রাহকদের বর্তমান বিল দিতে হয় ১৩ টাকা ২৬ পয়সা হারে। তা ১ টাকা ৩৫ পয়সা বা ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়ে হচ্ছে ১৪ টাকা ৬১ পয়সা।
লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিলে ছাড় দেওয়ায় তাতে মাসে খরচ বাড়বে সর্বোচ্চ ২২ টাকা। প্রথম ধাপের (০-৭৫ ইউনিট) গ্রাহকদের বিল বাড়বে মাসে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। দ্বিতীয় ধাপের (৭৬-২০০) গ্রাহকদের বিল বাড়বে মাসে সর্বোচ্চ ১২২ টাকা। সেচে বিদ্যুতের ব্যবহার মাসে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত থাকলে বিল বাড়বে ২৬২ টাকা। আর কোনো আবাসিক গ্রাহক মাসে এক হাজার ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে খরচ বাড়বে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৪৩ টাকা।