দেশের সব নাগরিক এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তিকে বীমার আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আবাসিক ভবন, কৃষক, শ্রমিক, নারী, খামারি, সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের জন্য বীমাসহ ১০ ধরনের বীমা পলিসির রূপরেখা চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। একই সঙ্গে এ কার্যক্রম কার্যকরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার অনুরোধও জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইডিআরএ জানিয়েছে, দেশে বীমা গ্রহণকারীর হার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন খাতে প্রসার অপরিহার্য। জাতীয় বীমা নীতি ২০১৪-এর আলোকে দেশের জনগণ ও সম্পদের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে সভা করে বেশ কিছু বীমা পলিসি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে মনে করে আইডিআরএ।
স্বাস্থ্য বীমা
আইডিআরএর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের মানুষের একটি বড় অংশ আকস্মিক অসুস্থতাজনিত বা অন্য কোনো কারণে উদ্ভূত চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে সক্ষম নয়। স্বাস্থ্য বীমা এ ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত অসুস্থতা, রোগ বা দুর্ঘটনায় চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা হতে পারে। সব নাগরিককে স্বাস্থ্য সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারিভাবে সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা সুবিধার আওতায় আনা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বীমার প্রিমিয়াম সাধারণভাবে বীমা গ্রহীতা দেবেন। তবে নাগরিকের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় সরকার প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারে।
সরকারি ভবনের বীমা
সরকারি ভবন, ভাড়াকৃত ফ্লোর বা সরকারি স্থাপনাগুলো বীমার আওতায় আনা যেতে পারে বলে মনে করছে আইডিআরএ। সংস্থাটি মনে করছে, এর ফলে ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমা থেকে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের অর্থের মাধ্যমে ভবনগুলো পুনরায় স্বল্প সময়ের মধ্যে কার্যোপযোগী করা সম্ভব হবে।
যানবাহন চালকদের বীমা
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মতে, সড়ক বা মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহন বা যানবাহনের চালকরা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনতে সব যানবাহন চালককে বীমার আওতায় আনা যেতে পারে। রিকশাচালকদের পৌরসভার রেজিস্ট্রেশন ফি ও যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স/লাইসেন্স নবায়ন ফির সঙ্গে সামান্য টাকার প্রিমিয়াম নেওয়া যেতে পারে। আবার স্বল্প আয়ের জনগণকে প্রিমিয়ামের টাকা সরকার দিতে পারে।
শিক্ষা বীমা
আইডিআরএ বলেছে, মা-বাবার মৃত্যু বা দুর্ঘটনার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য শিক্ষা বীমা গ্রহণের ফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। এমনকি ভবিষ্যৎ সঞ্চয় হিসেবে কাজ করতে পারে শিক্ষা বীমা। ছাত্রছাত্রীদের জন্য সর্বজনীন শিক্ষা বীমা চালু করা যেতে পারে। স্কুল বা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় এবং বেতনের সঙ্গে বীমা প্রিমিয়াম নেওয়া যেতে পারে। বীমা গ্রহীতা অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় সরকার প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারে।
শ্রমিকদের জন্য বীমা
শিল্পকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ভবন নির্মাণ, জাহাজ ভাঙার সঙ্গে জড়িত শ্রমিক, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজে নিয়োজিত, মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য সরকার শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক বীমা করতে পারে বলে মনে করছে আইডিআরএ।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের বীমা
আইডিআরএ বলেছে, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, বীজ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কৃষি খাতে বিদ্যমান। বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খামারিদের নানা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষক বা খামারিদের বীমার আওতায় আনা যেতে পারে। আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এ ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে সরকার প্রিমিয়াম ভর্তুকি হিসেবে দিতে পারে।
এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, সমবায়ী, পশুপালক, কামার-কুমার, গার্মেন্টস শ্রমিক, রিকশাওয়ালাসহ সব ধরনের বিশেষ করে নারীদের পৃথক একটি বীমা পলিসির আওতায় এনে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বা হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ রাস্তা, সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বীমা, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষায় আলাদা একটি স্কিম এবং দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সম্পদে ঝুঁকি কমাতে সাংস্কৃতিক সম্পদের বীমা নামে পৃথক একটি পলিসি হাতে নেওয়ার সুপারিশ করেছে আইডিআরএ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, এসব সুপারিশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।