ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি পরিবারের বিয়ে মানেই রাজকীয় উপলক্ষ। বলিউড তারকারা তো বটেই, এ আয়োজন থেকে বাদ যান না বিশ্বের নানা প্রান্তের বিখ্যাত মানুষও। ক’দিন আগেও ভারতের গুজরাট রাজ্যের জামনগরে মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক্-বিয়ের অনুষ্ঠানেও এমনটাই দেখা গেছে।
আম্বানি-রাধিকার বিয়েতে বচ্চন পরিবার ছাড়াও ছিলেন বলিউডের তিন খান। এখানেই শেষ নয়, জামনগরের এই বিয়েতে অংশ নেন বিল গেটস, ইভাঙ্কা ট্রাম্প, মার্ক জাকারবার্গ ও তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানও। নেচে গেয়ে উৎসব আর আতশবাজিতে মেতেছিলেন সবাই।
তবে শতকোটি রুপির রাজকীয় এমন বিয়ে এবারেই প্রথম নয়। এর আগেও ২০১৮ সালে আম্বানি পরিবারে এমন বিয়ে আয়োজনের রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও ২০০৪ এ লক্ষ্ণৌতে, ২০১৩ তে স্পেনের বার্সেলোনায় ভারতীয় ধনকুবেরের ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে ছাড়াও ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরু প্রাসাদে শতকোটি রুপির এমন বিয়ের ইতিহাস রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি ও নীতা আম্বানির মেয়ে ইশা আম্বানি। ২০১৮ সালে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন আনন্দ পিরামলের সঙ্গে। সে সময় ইশা-পিরামলের বিয়ে উপলক্ষে আম্বানিদের মুম্বাইয়ের বাড়ি, ইতালির লেক কোমো আর ভারতের রাজস্থানের উদয়পুরে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। যার সবক’টিতেই ছিল তারকাদের মেলা। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মেয়ে ইশার বিয়েতে মুকেশ-নীতা খরচ করেছেন ৭০০ কোটি রুপি।
২০১৮ সালের জমকালো ওই বিয়েতেও বচ্চন পরিবার ছাড়াও সালমান খান, শাহরুখ খান, রণবীর সিং, দীপিকা পাড়ুকোন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, নিক জোনাসসহ অনেক বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। ওই বিয়ের আসরে হাজির হয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনও। গুঞ্জন রয়েছে, ইশা-পিরামলের বিয়েতে সে সময় পারফর্ম করতে পপ তারকা বিয়ন্সে ৪৫ মিনিটের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়েছিলেন।
এর আগেও ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের শিল্পগোষ্ঠী সাহারা ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুব্রত রায়ের দুই ছেলে সুশান্ত রায় ও সীমান্ত রায়ের বিয়েতেও জমকালো এমন আয়োজন দেখা যায়। ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সুশান্ত রায় বিয়ে করেন রিচা আহুজাকে। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি সীমান্তের সঙ্গে বিয়ে হয় চান্দিনি তুর-এর।
ভারতের লক্ষ্ণৌতে সপ্তাহজুড়ে ‘রায় ভাই’দের এমন বিয়ের আসর বসেছিল। যেখানে ধনকুবের সুব্রত রায় খরচ করেছিলেন ৫৫৪ কোটি রুপি। আর দুই ছেলের বিয়েতে অতিথির সংখ্যা ছিল ১১ হাজারের বেশি। এই বিয়েতে যেমন তারকারা ছিলেন, তেমনি আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীও।
৫০০ কোটি রুপির এমন বিয়ের আয়োজন হয়েছিল ২০১৩ ও ২০১৬ সালেও। ২০১৩ সালে ভারতের ইস্পাতশিল্পের ধনকুবের লক্ষ্মী মিত্তালের ভাই প্রমোদ মিত্তালের মেয়ে সৃষ্টির বিয়ের আসর বসেছিল স্পেনের বার্সেলোনায়। বিনিয়োগ ব্যাংকার গুলরাজ বহেরের সঙ্গে সৃষ্টির বিয়ের ওই আয়োজনে ৫০০ অতিথি অংশ নিয়েছিলেন। যেখানে ৬০ কেজি ওজনের কেক ছিল। এছাড়া ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব কাতালান আর্টে বসা মূল আয়োজনের ছবি-ভিডিও করতে আনা হয়েছিল হেলিকপ্টারও। সবমিলিয়ে পুরো আয়োজনে খরচ হয়েছিল ৫০০ কোটি রুপি।
এদিকে, ২০১৬ সালে ৫০০ কোটি রুপির বিয়ের আয়োজন করেছিলেন ভারতের খনিজ শিল্পখাতের পুঁজিপতি ও সাবেক রাজনীতিক গ্যালি জনার্দন রেড্ডি। সে সময় তিনি মেয়ে ব্রাহ্মনি ও রাজিবের পাঁচ দিনব্যাপী বিয়ের আসর বসিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু প্রাসাদে। যেখানে তারকাদের পাশাপাশি অতিথি ছিলেন ৫০ হাজারের বেশি। আবার বিয়ের কার্ডও ছিল স্বর্ণে মোড়ানো। তবে সেই সময়ে ভারতে নগদ অর্থের প্রবাহের সংকট থাকায় এমন বিয়ের আয়োজন করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল গ্যালি জনার্দন রেড্ডিকে।
এছাড়াও ২০০৪ সালে ভারতের ধনকুবের লক্ষ্মী মিত্তালের একমাত্র মেয়ে ভানিশা মিত্তাল ও অমিত ভাটিয়ার বিয়েতেও খরচ হয়েছিল ২৪০ কোটি রুপি। ওই বছর লন্ডনের ব্যাংকার অমিত ভাটিয়া ও ভানিশার ছয় দিনের বিয়ের আসর বসেছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। জমকালো এই বিয়ে উপলক্ষে আইফেল টাওয়ারে আতশবাজি করা হয়। এছাড়াও কিং খান খ্যাত শাহরুখ খান ছাড়াও ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন থেকে শুরু করে বলিউডের অনেক তারকারাই হাজির হয়েছিলেন বিয়েতে।