স্কলারশিপ অর্থ হচ্ছে লেখাপড়া করার জন্য মেধাবৃত্তি। অর্থাৎ দেশে এবং দেশের বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আপনাকে আপনার মেধার ভিত্তিতে আংশিক কিংবা পুরোপুরি টিউশন ফি মওকুফ করে লেখাপড়ার সুযোগ দেয়, তাহলে তাকে স্কলারশিপ বলে।
এর ফলে অনেক মেধাবী দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা তাদের মেধাকে আরো বিকশিত করতে পারে। যেমন ধরুন, আপনি বাইরে পড়ালেখা করতে যেতে ইচ্ছুক। এর ফলে আপনার মেধা আরো বিকশিত হবে। কিন্তু আপনারা আর্থিক সমস্যা রয়েছে। এছাড়া বাইরে জীবনযাত্রার মান ভিন্ন হওয়ায় আপনার যথেষ্ট পরিমাণ টাকা প্রয়োজন। আর্থিক সমস্যার কারণে আপনার বাইরে পড়ালেখা করা নাও হতে পারে। এজন্য স্কলার্শিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায় তার বিস্তারিত আলোচনা করব।
স্কলারশিপ আলাদিনের যাদু নয় বা সহজ কোনো বিষয় নয়, যেন আপনি খুব সহজে পেয়ে যাবেন। এজন্য আপনাকে যোগ্য হতে হবে। কারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে ফ্রিতে পড়ালেখা করার সুযোগ দিবে অবশ্যই আপনার যোগ্যতার ভিত্তিতে। আপনার থাকা খাওয়া সহ টিউশন ফি মওকুফ বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, সারা বিশ্বের ছাত্রছাত্রীরা স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে। তাদের মধ্য থেকে আপনি যদি স্কলারশিপ পেতে চান, তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন আপনার যোগ্যতা থাকা লাগবে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করতে চায়। এর জন্য আমাদের স্কলারশিপ এর বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন আমরা আলোচনা করব স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়।
এসএটি স্কোর:
এসএটি(SAT) পরীক্ষার সর্বনিম্ন স্কোর হচ্ছে 600 এবং সর্বোচ্চ করা হচ্ছে 2400. যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গেলে এসএটি(SAT) কে মূল্যায়ন করা হয়। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বনিম্ন স্কোর বলে দেয় না। তবুও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখা করার জন্য স্কোর 2000 থেকে 2400 এর মধ্যে থাকলে বিদেশে স্কলারশিপ পেতে সুবিধা হয়।
সামাজিক কর্মকাণ্ড:
স্কুল এবং কলেজে বিভিন্ন সময়ে আমরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যেমন, সামাজিক সেবামূলক কাজ, সামাজিক উন্নয়ন কাজ, বিভিন্ন মেধাভিত্তিক অলিম্পিয়াড যেমন গণিত অলিম্পিয়াড, সায়েন্স অলিম্পিয়াড, বিতর্ক, কবিতা আবৃতি, বক্তিতা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা সহ নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হয় এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকি। যদি আসলেই জড়িত থাকো তাহলে এটি খুবই ভালো তোমার স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ ভর্তির আবেদন এর সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সামাজিক দক্ষতা এবং নেতৃত্ব বিকাশের বিষয়কে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। তুমি যেসব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছ, সেইগুলোর সনদ তোমাকে এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রাখবে।
আইইএলটিএস:
আইইএলটিএস (International English Language Testing System) হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের সনদপত্র। ইংরেজি ভাষায় আপনার কতটুকু দক্ষতা রয়েছে, তা যাচাই করা হয় আইইএলটিএস পরীক্ষার মাধ্যমে। প্রায় সবগুলো দেশেই এটি চাওয়া হয়। আইইএলটিএস পরীক্ষার সর্বনিম্ন স্কোর হচ্ছে ৬.৫ ।
যদি একটু অন্যভাবে বলি, তাহলে আইএলটিএস শুধুমাত্র স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য নয়, তা আপনাকে দেশীয় বাজারে চাকরিতে সহায়তা করবে। লক্ষ করলে দেখবেন, বর্তমানে সরকারি চাকরি গুলোতেও প্রশ্নপত্র ইংরেজিতে হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় হিসেবে আইএলটিএস কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেইসাথে সরকারি চাকরি করার জন্য কতটা!
টোফেল= Test of English as a Foreign Language:
আপনার ইংরেজিতে দক্ষতা প্রমাণের জন্য টোফেল টেস্ট দিতে হবে। যদি আপনি দেশের বাইরে অনার্স মাস্টার্স বা পিএইচডি স্কলারশিপের জন্য এপ্লাই করেন তখন আপনাকে টোফেল টেস্ট দিতে হবে। কোন কোন দেশে আইইএলটিএস বা টোফেল এর যে কোন একটি থাকলেই হয়। আবার কোন কোন দেশে টোফেলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আইইএলটিএস পরীক্ষার সর্বনিম্ন স্কোর হচ্ছে 575 ।
সুপারিশপত্র:
সুপারিশ পত্র স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আলোচিত কোন ব্যক্তিত্ব, স্কুল বা কলেজ শিক্ষক, প্রফেসর অথবা প্রভাবশালী কোন ব্যক্তিত্ব যিনি শিক্ষার্থীকে চেনেন, তার কাছ থেকে সুপারিশ পত্র নিয়ে জমা দিতে হয়। যিনি সুপারিশ পত্র লিখবেন তিনি শিক্ষার্থীদের মেধা ভিত্তিক দক্ষতার পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রম এবং তারা আচরণ কেমন ছিল তা উল্লেখ করবেন।
মূলত আপনি যার আন্ডারে থিসিস বা প্রজেক্ট করবেন, সেই স্যার আপনার সম্পর্কে সুপারিশ পত্র প্রদান করবে। অথবা যে কেউ করতে পারে। এজন্য ইউনিভার্সিটি লাইফে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, টিচার দের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা। এটি একটি টিপস-এন্ড-ট্রিকস বলা যায়। যদিও টিচার আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বলবেনা, যদি আপনার তার সাথে পরিচয় বেশি না থাকে। তারপরেও যদি আপনার পরিচয় থাকে, তাহলে অবশ্যই অনেক ভালো বলবে। তাই ইউনিভার্সিটি লাইফে চেষ্টা করুন টিচারদের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য:
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর একটি প্রশ্ন করে থাকে যেমন, সে কেন পড়ালেখা করতে চায়, পড়ালেখার মূল লক্ষ্য কি, ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে কাজ করতে চায় ইত্যাদি। যদি এসব প্রশ্নের উত্তর লিখিতভাবে জমা দিতে হয় তখন অনেকেই একটি ভুল করে তা হচ্ছে অন্যের লেখা হুবহু কপি করে এটি কখনোই করা যাবে না। আপনি আপনার লেখাকে নিজের মতো করে সাজান।
এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরের প্রেক্ষিতে আপনার স্কলারশিপ পাওয়া বা না পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সবাই একই রকম দেয় না। ভিন্ন ভিন্ন ছাত্রছাত্রী ভিন্ন উত্তর দেয়। তাই এই সকল সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। এর ফলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা আপনার বেড়ে যাবে। স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায় এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তর হচ্ছে এটি।
আপনি যদি স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ নিতে চান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই আপনাকে খোঁজখবর রাখতে হবে। যেসব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা উচিত তা নিম্নে দেওয়া হল:
গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ:
পৃথিবীর যে কোনো দেশে স্কলারশিপ নিয়ে চলা স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কি গবেষণা করেছেন বা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন, তার দিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, সে বিষয়ে কি গবেষণা করেছেন, আন্তর্জাতিক জার্নালে আপনার লেখা প্রকাশ পেয়েছে কিনা, তা দেখা হয়। অনেকে নিম্নমানের জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশের চেষ্টা করে যা কখনই উচিত নয়। এর কারণে ভবিষ্যতে বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি ভর্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করার জন্য আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
অর্থাৎ যদি কেউ প্রশ্ন করে স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়, তাহলে তার 60 শতাংশ উত্তর হচ্ছে, গবেষণা প্রবন্ধ। যদি আপনার গবেষণা প্রবন্ধ থাকে, আপনি অন্য সকলের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবেন। যদিও আপনার সিজিপিএ কম থাকে।
ইন্টার্নশিপ বা চাকরির অভিজ্ঞতা:
পিএইচডি করার জন্য যে বিষয় পড়ালেখা করতে চান সেই ক্ষেত্রে যদি আপনার পূর্ব চাকরির অভিজ্ঞতা বা ইন্টার্নশিপ এর অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে এটি আপনাকে স্কলারশিপের জন্য অনেক দূর এগিয়ে রাখবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষ থেকে নিজের কাজের ক্ষেত্র বের করার চেষ্টা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনা করার জন্য জিআরই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ব্যবসায় অনুষদের কোন বিষয়ে পড়তে গেলে জিম্যাট কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। মূল কথা জিআরই, আইএলটিএস, টোফেল এবং জিম্যাট এ যদি ভালো দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আপনার বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা অনেক বেড়ে যাবে।
স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে আগে থেকেই যেসব নথি পত্র গুছিয়ে রাখবেন:
মার্কশিট বা নম্বরপত্র:
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তারা আবেদন করার সময় নম্বরপত্র চেয়ে থাকেন। একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, যেহেতু আপনি দেশের বাহিরে পড়ালেখা করতে যাবেন তাই নম্বরপত্র টি ইংরেজি ভাষায় কনভার্ট করবেন। তারপরে আপনার ভাষা এবং ইংরেজি ভাষার মোট দুইটি নম্বর পত্র জমা দিবেন। এছাড়া আবেদন করার সময় সুনিদৃষ্ট নির্দেশনা দেয়া থাকবে। তা ভালো করে দেখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইকরন:
আপনি যে সে পড়ালেখা করতে ইচ্ছুক, সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুঁজে বের করুন। তারপরে তাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নজর রাখুন। কোন সময় তারা স্কলারশিপ এর আবেদন পত্র প্রকাশ করে, তাদের বিভিন্ন নোটিশ ইত্যাদি খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া আপনি আপনার প্রফেসর এর সাথে মেইলে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনি যদি তাকে কনভেন্স করতে পারেন, তাহলে আপনার স্কলারশিপ এর সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে। আপনার তাকে বোঝাতে হবে আপনি এই বিষয়ে পড়তে খুবই ইচ্ছুক এবং আপনি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবেন।
আবেদন করার সেশন:
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সেশনে আবেদনপত্র গ্রহণ করে। যেমন ফল সেমিস্টার, স্প্রিং সেমিস্টার, সামার সেমিস্টার। তবে সাধারণত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ফল সেমিস্টার এ আবেদন পত্র গ্রহণ করা হয়। ফল সেমিস্টার সাধারনত আগস্ট থেকে শুরু হয়, স্প্রিং সেমিস্টার জানুয়ারি থেকে এবং সামার সেমিস্টার মে থেকে শুরু হয়। তাই এ সময়ে গুরুত্ব সহকারে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে।
আবেদন ফি:
স্কলারশিপ এর জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ফি জমা দিতে হয়। আবেদন ফি জমা দেওয়ার জন্য আপনার লোকাল ব্যাংক হলে হবে না। কিন্তু আপনি লোকাল ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে জমা দিতে পারবেন।