সবাই মনে করেন, মানসিক সমস্যার পুরোটাই মাথায় বিরাজ করে। কিন্তু বাস্তবে মানসিক রোগ মূলত নিয়ন্ত্রণের বহু দূরে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সবাই কারো মানসিক সমস্যাকে তার দোষ হিসাবে বিবেচনা করেন। ধরে নেন, নিজের দোষেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু বৈজ্ঞানীক প্রমাণ রয়েছে যে, মানসিক সমস্যা কারো ব্যক্তিগত দোষ নয়। এর পক্ষে কিছু প্রমাণপত্র দেখে নিন।
১. প্রদাহ থেকে বিষণ্নতা : প্রদানের কারণে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে প্রদাহ এবং বিষণ্নতা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এটি সাইটোকাইনস নামের এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদনের কারণে ঘটে থাকে। এই প্রোটিন খুব বেশি উৎপন্ন হলে তা স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে। এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিষণ্নতা।
২. জৈবিক প্রক্রিয়ায় ঘটতে পারে : ইউনিভার্সিটি অব গ্রানাডার বিজ্ঞানীরা ৩০টি গবেষণাপত্রের বিশ্লেষণ করেন। অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এটা কৌষিক প্রক্রিয়ায় ঘটে যখন দেহে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে না। ফলে দেহের বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যেতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
৩. বংশগতভাবে আসতে পারে : কিছু মানসিক অবস্থা সিজোফ্রেনিয়া এবং অ্যাংজাইটির মতো অসুখ বংশগতভাবে আসতে পারে। জেনেটিক কারণ এর জন্যে দায়ী।
৪. ভিন্ন দৃষ্টিতে পৃথিবীটা দেখতে পারেন : সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যাদের অ্যাংজাইটি রয়েছে তারা একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু বিচার করেন। একটি আবেগময় ঘটনা শেষ হওয়ার পর অ্যাংজাইটিতে আক্রান্তরা বেশ নমনীয় হয়ে পড়েন। এ সময় মস্তিষ্ক নতুন কিছুর মধ্যে পার্থক্য বের করতে পারেন না। এ সময় তারা বড় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।
৫. জেনেটিক মিউটেশনের কারণে : এমনকি জন্মের সময় শিশুর মধ্যে মানসিক অসুস্থতা চলে আসতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণায় বলা হয়, গর্ভে বৃদ্ধির সময় যাদের জেনেটিক মিউটেশন ঘঠেছে, তাদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া দেখা গেছে। আর এটি গর্ভে মস্তিষ্ক গঠনের ওপর ব্যাপক প্রভাববিস্তার করে।
৬. অনিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্কের কার্যক্রমের জন্যে : প্যারালাইজিং ফোবিয়া দেখা দিতে পারে মস্তিষ্কের কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে। উড়া বা ওপরে উঠার ভয় হতে পারে এ কারণে। মূলত মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অংশের অতিমাত্রার প্রতিক্রিয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। এই অংশটি আবেগ নিয়্ন্ত্রণ করে।
৭. উচ্চামাত্রার সেরোটনিনের ক্ষরণ : ২০১৫ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, দেহে অতিমাত্রায় সেরোটনিন হরমোন ক্ষরণের ফলে সোশাল অ্যাংজাইটি দেখা দিতে পারে। সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির গবেষকদল তাদের পরীক্ষায় দেখেছেন, যাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অংশ এই হরমোনের বেশি নিঃসরণ ঘটায় তারা সমাজের নানা বিষয় নিয়ে অযথাই চিন্তিত হয়ে ওঠেন।
৮. মানসিক অসুস্থতা কেউ ডেকে আনে না : সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। কেউ মানসিক রোগ ডেকে এনে অসুস্থ হয়ে পড়েন না। কোনো না কোনো কারণে রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। কাজেই এটা তার দোষ নয়। মানসিক অসুস্থতা যাই হোক না কেন, চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব।
সূত্র : হাফিংটন পোস্ট