একটি সার্বজনীন সমাজের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করা হয়। শিশুরা যেন সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে তাই স্কুল বা বাড়িতে তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
বাবা-মা কে জিজ্ঞেস করলেই বুঝা যায়, সন্তানের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা কতটা কঠিন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুরা পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে খুব সহজেই অস্বাস্থ্যকর জাঙ্কফুডের প্রতি আকৃষ্ট হয়৷
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করবে শিশুদের জন্য এমন ৪টি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য শ্রেণি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই লেখায়।
ফল ও সবজি
ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশযুক্ত শাকসবজি, পানি, ফলমূল ও শাক-সবজী পুষ্টির একটি অন্যতম উৎস। এগুলো জীবনের পরবর্তী সময়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সাধারণত বেশিরভাগ শিশুর কাছে ফল ও বেশি সবজি দিয়ে রান্না করা খাবার তেমন পছন্দ না। তবে অবশ্যই তাদের বিভিন্ন রঙ ও স্বাদের ফলমূল ও সবজি খেতে উৎসাহিত করতে হবে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নুসরাত আলী হাসনাতের ৭ বছরের একটি শিশুর আছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত আমার ছেলেকে আপেল, কলা, কমলা ও আঙুরের মতো ফল ছাড়াও কাঠবাদাম এবং কাজুবাদাম দেই। বাচ্চারা ফলের সালাদ বেশ পছন্দ করে। এটি পুষ্টিকর।’
শস্যজাতীয় খাবার
বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা, বিকাশ ও শেখার জন্য শক্তির প্রয়োজন। সঠিকভাবে বিকাশের জন্য তাদেরকে পাস্তা, ভাত, ওটস, বার্লির মতো দানাদার বা শস্যজাতীয় খাবার দেওয়া অপরিহার্য। যে কোনো শস্যজাতীয় খাবারের সবচেয়ে ভালো দিক হলো দীর্ঘ সময় শিশুর পেট ভরা থাকে। এই খাবারগুলো কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হওয়ার কারণে বাচ্চা সক্রিয় ও উদ্যমী থাকে।
দুগ্ধজাত পণ্য/খাবার
প্রোটিন ও ক্যালশিয়ামের একটি বড় উৎস দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার যেমন, দুধ, পনির, দই ইত্যাদি। এগুলো শিশুর জন্য আদর্শ স্বাস্থ্যকর খাবার। শিশুদের নিয়মিত দুধের তৈরি খাবার খেতে উৎসাহিত করা উচিৎ। এর মধ্যে তরল দুধ, কয়েক টুকরো পনির বা এক বাটি দই থাকতে পারে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
শিশুদের পেশীর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চর্বিহীন মাংস, মাছ, মুরগি, মটরশুঁটি, ডিম ও মসুর ডালের মতো খাবারে প্রোটিন ছাড়াও আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-১২ এর মতো বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আছে। শিশুদের শেখার এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য মাছের তেল ও চর্বিহীন লাল মাংস থেকে পাওয়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের টিফিনের জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের একটা লম্বা সময় স্কুলে কাটাতে হয়৷ স্বাস্থ্যকর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার তাদের শক্তি অটুট রাখে এবং বাড়ির বাইরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়।
ছেলের জন্য তার আদর্শ টিফিন কেমন তা জানতে চাইলে নুসরাত বলেন, ‘ফলের সালাদ ও সবজি ছাড়াও আমি আমার ছেলের টিফিনের জন্য বার্গারের মতো খাবার তৈরি করতে পছন্দ করি। প্যাটির জন্য, আমি মুরগির বুকের টুকরোতে কিছু লবণ ও মরিচ ব্যবহার করি।’ অত্যাবশ্যকীয় যেসব পানীয় এবং খাবার কম খাওয়া উচিত
যখন স্বাস্থ্যকর পানীয়ের কথা আসে, তখন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলোর সঙ্গে শুধু পানি পান করাটা দারুণ কাজে লাগতে পারে এবং এর ফ্লোরাইড শক্ত দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও, কম চিনি দিয়ে ঘরে বানানো ফলের জুস শিশুদের জন্য দারুণ উপযোগী।
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও চিনি থাকে সেসব খাবার গ্রহণ করলে শিশুদের স্থূলতা এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকিতে রাখে। এছাড়াও, এই খাবারগুলো অতিরিক্ত খেলে অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
অবশ্যই, কোমলমতি শিশুদের জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকে বিরত রাখা একেবারেই অসম্ভব। তাই এই খাবারগুলো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন শিশুরা কেবল মাঝেমধ্যে, পিতামাতার উপস্থিতিতে সেগুলো খায়।