গ্রামের এক তরুণী। বিয়ের পর যখন স্বামীর বাড়িতে গেলেন, শাশুড়ির সাথে শুরু হলো তার সমস্যা। শাশুড়ির আচার-আচরণ কথাবার্তা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। শাশুড়িও সারাক্ষণ শুধু বউয়ের সমালোচনা করতেন। অবস্থা আরো অসহনীয় হয়ে উঠল যখন পারিবারিক রীতি অনুযায়ী প্রতিদিন তার শাশুড়িকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে হতো এবং সব কথা মেনে নিতে হতো।
এ সবকিছুর অসহায় দর্শক হওয়া ছাড়া স্বামী বেচারার কিছুই করার ছিল না।
একদিন মেয়েটি তার বাবার এক বন্ধুর কাছে গেলের, পেশায় যিনি হেকিম।
সব কথা খুলে বলে তার কাছে এমন এক বিষ চাইলেন, যা খাইয়ে বুড়িকে তিনি দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে পারবেন।
এক মুহূর্ত ভেবে হেকিম বললেন, সমাধান আমি করে দেবো, যদি তুমি আমার কথামতো চলো।
মেয়েটি সাথে সাথে রাজি। হেকিম একটা পুঁটুলিতে কিছু ভেষজ লতাপাতা বেঁধে তাকে দিলেন।
তিনি বললেন, একবারে কোনো বিষ দিয়ে যদি শাশুড়িকে মেরে ফেলো, তাহলে সবাই তোমাকে সন্দেহ করবে।
তাই আমি এমন কিছু লতাপাতা দিয়েছি, যা ধীরে ধীরে তার শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাবে এবং সে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে।
একদিন পর পর খুব ভালো কোনো খাবার রান্না করে তার মধ্যে এগুলো মিশিয়ে তোমার শাশুড়িকে খেতে দেবে।
আর লোকে যেন তোমাকে কোনো সন্দেহ করতে না পারে, সেজন্যে এ সময়টায় শাশুড়ির সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করবে। কোনো ঝগড়াঝাঁটি করবে না এবং তার সব কথা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেবে।
পুঁটুলিটা কাপড়ের মাঝে লুকিয়ে তরুণীটি বাড়ি ফিরে এলো। বহুদিন পর তার মনটা খুব হালকা হয়ে গেল।
এতদিনে সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
হেকিমের কথামতো সে একদিন পর পর ঐ বিষ-মেশানো খাবার রান্না করে শাশুড়িকে খাওয়াতে লাগল। সেইসাথে তার সব কথা মেনে চলল।
এসময় শাশুড়ির ওপর যত রাগই হোক না কেন, আপ্রাণ চেষ্টায় তা দমন করল। শাশুড়িকে সে তার মায়ের মতোই দেখতে লাগল।
এভাবে কেটে গেল ছয় মাস। ঘরের পরিবেশ এখন অনেক শান্তিময়।
এর মধ্যে সে আবিষ্কার করল, সে তার রাগকে এখন অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আগে মুহূর্তে রেগে গিয়ে যে তুলকালাম বাঁধাত, এখন আর তা করে না। গত ছ-মাসে একবারও শাশুড়ির সাথে তার কোনো ঝগড়া হয় নি। ছোটখাটো বিষয়গুলোকে এখন খুব অনায়াসেই সে ক্ষমা করতে পারে, ছাড় দিতে পারে।
শাশুড়ির পরিবর্তনও লক্ষণীয়। তিনি এখন বউকে নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসেন। আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে বলে বেড়ান, আমার বউমার মতো ভালো মেয়ে আর হয় না। বউ-শাশুড়ি থেকে তারা এখন মা-মেয়ের মতো। মমতা-ভালবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন নারী।
সব দেখেশুনে মেয়েটির স্বামী হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু বিষের কথা যখনই মেয়েটির মনে পড়ে, গভীর বিষণ্নতায় ডুবে যায় মেয়েটি।
একদিন সে আবারও গেল বাবার বন্ধু হেকিমের কাছে। হাত ধরে বলল, দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। আমি এখন আর আমার শাশুড়িকে মেরে ফেলতে চাই না। তিনি বদলে গেছেন। মায়ের মতোই তাকে এখন ভালবাসি আমি। তিনিও আমাকে অনেক আদর করেন। যে বিষ তার শরীরে ঢুকেছে, দয়া করে তা বের করে আনার ব্যবস্থা করুন।
হেকিম হাসলেন। মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, চিন্তা কোরো না মা। তোমার শাশুড়ি মরবেন না। বিষের নামে আমি যে লতাপাতাগুলো দিয়েছিলাম, তা আসলে বিশেষ ধরনের এক ভেষজ ভিটামিন, যা তার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a6%87-%e0%a6%ad%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b9%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%a3%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc/
বিষ আসলে ছিল তোমার মনে, তোমার দৃষ্টিভঙ্গিতে। এখন সে বিষ ভেসে গেছে তার প্রতি তোমার ভালবাসা আর শ্রদ্ধায়।