আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই একটা শব্দ চোখে আসে সেটা হলো ‘টক্সিক রিলেশনশিপ’। যে সম্পর্কে থেকে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এমনকি সামাজিকভাবেও হেয় মনে হয় সে সম্পর্কে সহজ ভাষায় টক্সিক রিলেশনশিপ বা টক্সিক সম্পর্ক বলা যেতে পারে। প্রায় সময় আমরা সঙ্গী টক্সিক বা নেতিবাচক কিনা সে নিয়ে কথা বলি। তবে আমরা নিজেরাও যে সঙ্গী হিসেবে টক্সিক হতে পারি সেটা জানা থাকা দরকার। একটি সম্পর্কে আপনার নিজের অবস্থান জানা খুব জরুরি। আপনি নিজে যদি একজন নেতিবাচক মানুষ হন তবে সেটা সময় থাকতে শুধরে সম্পর্ক সুন্দর করতে পারেন।
মনোবিজ্ঞানী সূরাইয়া ইসলাম মুন্নি জনিয়েছেন কোন কোন বৈশিষ্ট্য দেখলে বুঝবেন রোমান্টিক রিলেশনশীপে আপনি একজন টক্সিক ব্যক্তি তা বুঝতে পারবেন:
১. আপনার পার্টনারের সফলতায় আপনার হিংসা অনুভব হয়। নিজে তার থেকে পিছিয়ে পরছেন এমন মনে হয়। পার্টনার যে কাজ করুক না কেন তাকে সবসময় ছোট করবেন।
২. আপনি প্রতিটি বিষয় নিয়ে আপনার পার্টনারকে অভিযোগ করবেন। তার জন্য সব সমস্যা হয়েছে এমনটা প্রমাণ করতেই ব্যস্ত থাকবেন। আর নিজের মনের কথা তাকে ভালো ভাবে বলতে গিয়ে বেশির ভাগ সময় রাগ ও জিদ করবেন। নিজে ভুল করেও অযথা তর্কে জড়াবেন।
৩. যে কোনো সমস্যায় আপনার সঙ্গী যদি আলোচনা করে সমাধান করতে চায় আপনি আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত নিতে ভালোবাসেন। আর যদি আলোচনা করেনও সামনের মানুষটির মতামত বা ব্যাখ্যা আপনার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়।
৪. আপনি পরিবার, বন্ধু বান্ধব, পরিচিতদের কাছে জাহির করতে ভালোবাসেন – ” হ্যাঁ ওর সব সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেই। ও যা বলবে তাই শেষ কথা”। প্রকৃতপক্ষে আপনি আপনার পার্টনারের কোনো কথার গুরুত্ব দেন না। তার সিদ্ধান্ত নিজে ম্যানিপুলেট করবেন বুঝে কিংবা না বুঝে।
৫. রোমান্টিক সম্পর্কে মাঝে মাঝে অবিশ্বাস অনুভব হতে পারে। কিন্তু আপনি এমন একজন ব্যক্তি কোন ভাবে নিজের সঙ্গীকে বিশ্বাস করেন না। অতিমাত্রায় তাকে সন্দেহ করেন। পরিচিত কারো সাথে কথা বললেও আপনার মনে হয় আপনার পার্টনার এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আপনি আপনার সঙ্গী কোথায় আছে কার সঙ্গে আছে সে বিষয়ে বেশি নজর দিবেন। এমনকি তার সোশ্যাল মিডিয়া সে কীভাবে ব্যবহার করবে সে বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণ করেন।
৬. আপনাদের সম্পর্কে আপনি সবসময় ডমিনেট করবেন। সঙ্গীর পছন্দ বা অপছন্দ থাকতে পারে এই বিষয়টি আপনি বিশ্বাস করেন না। তাই আপনার পছন্দের খাবার আপনি তাকে জোর করে খেতে বাধ্য করেন, আপনার পছন্দের পোশাক তাকে পরতে বাধ্য করেন, আপনার পছন্দের কাজ করতে বাধ্য করেন, আপনার নীতিতে তাকে চলতে বাধ্য করেন।
৭. নিজের ছোটবেলা ও বড়বেলার যাবতীয় ইমোশনাল ট্রমা তার উপরে দেখাবেন। এরপর নিজে অসহায় দেখিয়ে তার মনোযোগ চাইবেন। মোট কথা নিজের যাবতীয় সমস্যা নিজে সমাধান না করে তার সঙ্গে রাগ বা অভিমান করে আবার সঙ্গীর কাছেই সমাধান চাইবেন।
যদি সবগুলো বৈশিষ্ট্য থেকে মনে হয় সঙ্গী হিসেবে আপনি টক্সিক। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। আপনি নিজে কী চাইছেন সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন যে কোনো সম্পর্ক সুন্দর করার জন্য যত্ন দরকার হয়। আমরা নিজের যত্ন নিতে ভুলে যাই তখন নানান নেতিবাচক বিষয় বাসা বাঁধে আমাদের মনে। তাই নিজের ভেতরের নেতিবাচক বিষয়গুলো ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করুন।