জীবনের মূল বীজ বপন করার সময় হলো ছাত্র জীবন। এ সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়। তবে ছাত্র জীবনে শেষ পর্যন্ত কয়জন সফল হয়? আজ আমরা এই লেখায় আলোচনা করব, ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় সম্পর্কে।
নিয়মিত পড়াশোনা করা, সর্বক্ষণ বইয়ের পাতায় আটকে থাকা, ফলাফল হিসেবে জিপিএ ফাইভ এটাই কী ছাত্র জীবনের সফলতা? মোটেও না। এগুলো ছাত্র জীবনের একটা অংশ হতে পারে, তবে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র মোটেও নয়। তাহলে এর মূলমন্ত্র কী? চলুন দেখে নেয়া যাক এই লেখায়।
১. অধ্যাবসায়
একদম ছোট থেকেই অধ্যাবসায় নামক রচনাটা প্রত্যেক ক্লাসে পড়ে এসেছি আমরা। ছাত্র জীবন এ সফল হতে গেলে প্রথম হাতিয়ার এই অধ্যাবসায়-ই। নিজের ছাত্র জীবন-কে যদি সুপ্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে অধ্যাবসায়ের কোনো বিকল্পই নেই। অধ্যাবসায় একজন সাধারণ মানুষকে অসাধারণ করে তুলতে পারে।
২. পরিশ্রম
পরিশ্রম এমন একটি জিনিস, যা কোনো ব্যাক্তিকে সামান্য-তম সময়ের মধ্যে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যায়। পরিশ্রম করার অন্যতম সময় হলো ছাত্র জীবন। এমন কোনো ব্যাক্তি নেই, যিনি পরিশ্রম করেছেন, অথচ জীবনে সফল হননি। পরিশ্রমই সফলতার মূল ও একমাত্র চাবিকাঠি। কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে কঠিন বিষয় গুলোকে সহজে রূপান্তরিত করা সম্ভব। যার ফল পাওয়া যায় ছাত্র জীবনেই।
৩. নিজের কাজটুকু সঠিক ভাবে করা
ইতিহাসের সেরা দার্শনিককে সবারই চেনা। দার্শনিক হিসেবে না চিনলেও সক্রেটিসের নাম সবাই শুনে থাকবেন। তাঁর একটি কথা মানুষের ছাত্র জীবনকে প্রভাবিত করতে যথেষ্ট।
“সত্যিকারের দেশপ্রেম বলতে বোঝায়, নিজের জায়গায় থেকে নিজের কাজটুকু সুন্দর ও সঠিক ভাবে সম্পন্ন করা।”
এখানে ছাত্র জীবনের কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। তবে দেশপ্রেমের চর্চা তো শুরু হয়ে শিশুকাল থেকেই। ছাত্র জীবন থেকেই যদি আমরা সঠিক ভাবে নিজের কাজটুকু সম্পন্ন করতে পারি, তাহলে তো জীবনে সফল হতে বাধা নেই। যদি একটা বই পড়ি, ভালো করে পড়ব, পড়ার টেবিল গোছালে সুন্দর করে গোছাব, একটা ফুল গাছে পানি দিলে, সেটাও সুন্দর করে করব।
মূলত, সঠিকভাবে সব কাজ করতে পারলে ছাত্র জীবনের সময় থেকেই জীবন একটু একটু করে গোছালো হয়ে যায়। তখন আপনা আপনিই সব কাজ সুন্দর ভাবে করা হয়ে যায়। আর ছাত্র জীবনে সফল হতে গেলে এই বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪. খাপ খাওয়াতে শেখা
কোনো একটি নতুন জায়গায় গেলে সেখানে অন্যদের মানসিকতার সাথে নিজের মানসিকতা মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ৩০%। আর ছাত্র জীবনে নতুন নতুন জায়গায় যেতেই হয়। তাই সবসময় যেকোনো পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা থাকতে হবে।
কারণ, ছাত্র জীবন থেকেই খাপ খাওয়াতে শিখলে একটা সময় যেকোনো পরিস্থিতি সহজে মোকাবেলা করা যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। এজন্য সফল হতে চাইলে এই অভিযোজন এর দিকটার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
৫. চেষ্টা
পরিশ্রম আর চেষ্টা এই দুইটি শব্দ আসলে এক নয়। ছাত্র জীবন থেকেই নিজের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে চেষ্টা করে যেতে হবে। যে দিকটার দিকে আপনার ইচ্ছাশক্তি ফোকাস করছে, কেবল সেদিকেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। মূল লক্ষ্য নিয়ে চেষ্টা করার অভ্যেসেটা ছাত্র জীবন সফল করে তুলবে।
৬. দক্ষতা যাচাই
একটি নির্দিষ্ট কাজের দিকে ফোকাস করার পরও তা করা সম্ভব হয়নি। তাহলে কী এখানেই ছাত্র জীবনের ইতি টানতে হবে? নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে, দক্ষতার সাথে সবসময় এগিয়ে যেতে হবে।
ছাত্র জীবনের অনেকগুলো সিঁড়ি আছে। একেকটা সিঁড়ি একেকটা ধাপ। তাই এক ধাপে অবতীর্ণ হলে, পরের ধাপে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। নিজের স্কিলকে কাজে লাগাতে পারলে, যেকোনো কাজেই সফল হওয়া যায়। তাই সবসময় নিজের দক্ষতা যাচাই করা বাধ্যতামূলক।
৭. একটি লক্ষ্য নয়, কয়েকটি দরকার
“আমি ইঞ্জিনিয়ার হব।”
“মেডিকেলের সাদা অ্যাপ্রোনই আমার একমাত্র টার্গেট।”
এই কথাগুলো একটি নির্দিষ্ট স্বপ্নকে নির্দেশ করে। আর এই স্বপ্ন দেখা শুরু হয় ছাত্র জীবন থেকেই। কিন্তু একটি লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে, ছাত্র জীবনের কোনো এক পর্যায়ে সবটা গুঁড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, দেখা গেল মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ সময়টাতে হয়তো সেখানে আর চান্স পাওয়া হয় না। অথচ, পুরোটা ছাত্র জীবন ব্যয় করা হয়েছে সাদা অ্যাপ্রোনের স্বপ্ন দেখেই।
এজন্য কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। অবশ্য টার্নিং পয়েন্টকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রাখতে হবে। অন্যদিকে, ভিন্ন বিষয়ের ওপরেও নজর দিতে হবে। যাতে করে, একটি সফলতার দরজা বন্ধ হলেও অন্য দরজাগুলো খোলা থাকে।
৮. থাকতে হবে আত্মবিশ্বাসী
আত্মবিশ্বাস একজন ব্যক্তির সবচেয়ে বড় শক্তি। ছাত্র জীবন এমন একটা সময় যখন আত্মবিশ্বাস না থাকলে সামনে এগোনো কঠিন। আত্মবিশ্বাসী হওয়ার ফলে নিজের দ্বারা অসম্ভব এমন কাজগুলো-ও করা সম্ভব হয়। মনের প্রতি আস্থা রেখে কোনো কিছু চেষ্টা করে গেলে, আত্মবিশ্বাসী হলে ছাত্র জীবনে সফল হওয়া সহজ। এটাকে ছাত্র জীবনের শিকড় হিসেবে তুলনা করা যায়।
৯. সময়ানুবর্তিতা
জীবনে সফল হতে সময়ানুবর্তিতার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তা ছাত্র জীবন হোক বা অন্য সময়। পাংচুয়ালিটি (punctuality) নামক শব্দটা জীবনের বাঁক বদল করে দিতে সক্ষম। একটা মানুষ যখন সময়ের কাজ সঠিক সময়ে করে, তখন তার হাতে অনেক অবসর থাকে। যে সময়কে কাজে লাগিয়ে নতুন সম্ভাবনার দরজা খোলা সম্ভব।
ছাত্র জীবনে সফল হতে চাইলে, সব কাজ সময়ে করার অভ্যাস রাখতে হবে। অজুহাত দেয়া, দেরী করা কিংবা অলসতা এসব বিষয়কে এড়িয়ে যেতে হবে। তবেই না সফলতা আসবে!
১০. সেল্ফ-এমপ্লয়েড
ছাত্র জীবনের মধ্য সময় থেকেই সেল্ফ-এমপ্লয়েড (self employed) হওয়া ভালো। কারণ, এতে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আর যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে কমিউনিকেশন স্কিল ইমপ্রুভ করতে চাইলে, অনলাইন ভিত্তিক অনেক কাজ আছে। যার মাধ্যমে ছাত্র জীবন থেকেই নিজের স্কিল গুলোকে ইমপ্রুভ করা যায়। একই সাথে কিছু আয়-ও হয়। যা কোনো ভালো কাজে বিনিয়োগ করা যায়। ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন, ফ্রিল্যান্সিং এর মতো কাজগুলো এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে।
১১. টাইম ম্যানেজমেন্ট
সময়ানুবর্তিতা আর টাইম ম্যানেজমেন্ট বিষয় দুইটি অনেকেই এক মনে করেন। তবে, এই দুইটির মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। টাইম ম্যানেজমেন্টের বিষয়টা এমন যে, আপনি কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজ করে, অন্য একটি কাজের জন্য সময় বের করলেন। ছাত্র জীবন শুধু পড়াশোনার ওপর সীমাবদ্ধ নয়। গাছের মতো এরও আছে অনেক শাখা প্রশাখা।
তাই পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাজগুলোর জন্যও সময় বের করে নিতে হবে। যাতে করে ছাত্র জীবনের কোনো সময় নষ্ট না হয়।
১২. সব কিছুর মিশ্রণ
পরিশ্রম, প্রচেষ্টা বা অধ্যাবসায় এই তিনটি জিনিসের একটি ছুটে গেলে সফলতার বেলায় ফলাফল শূন্য। পরিশ্রম না থাকলে চেষ্টা করা যায় না। তাহলে অধ্যাবসায় আসবে কোথা থেকে? তাই এই তিনটি গুণের কোনো একটি ছুটে গেলে, বাকি দুইটি গুণ অসম্পূর্ণ। আর দিন শেষে ফলাফল হয় শূন্য। তাই আর যা-ই হোক, পরিশ্রম, প্রচেষ্টা আর অধ্যাবসায় এই তিনটি গুণের চর্চা অবশ্যই ছাত্র জীবন থেকে শুরু করা উচিত।